রহমত ডেস্ক 02 January, 2022 10:31 PM
একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের সপ্তম দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে সার্চ কমিটি গঠনসহ তিন দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ। প্রস্তাবনাগুলো হলো- এক. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশনের জন্য একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও একজন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করবে। দুই. প্রস্তাবিত নাম থেকে সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য নাম (প্রয়োজনীয় সংখ্যক) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে। তিন. সার্চ কমিটি গঠনের জন্য বিকল্পধারা দেশের তিনজন বিশিষ্ট নাগরিক নাম সুপারিশ করছে। অবশ্যই আমরা এটাও বিশ্বাস করি সার্চ কমিটির জন্য যাদের নাম প্রস্তাব করেছি, তারা নির্বাচন কমিশন হিসেবেও তারা জাতির কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবেন।
আজ (২৯ ডিসেম্বর) বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সাথে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে তারা এসব প্রস্তাব পেশ করেন। বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, প্রেসিডিয়াম মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, সাহিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব এনায়েত কবির।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী জানান, তারা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে সার্চ কমিটির জন্য তিনটি নাম প্রস্তাব করেছেন। যারা সার্চ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এরা হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। তারা অবশ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও থাকতে পারেন।
মাহি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চমৎকার খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছি ইসি গঠনে একটি স্থায়ী আইন থাকা জরুরি। রাষ্ট্রপতিও বিশ্বাস করেন একটি স্থায়ী আইন থাকলে ইসি গঠনে এই ঝামেলা হয় না। এই মুহূর্তে আইন প্রণয়নে যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করার দরকার, তা করা যেতে পারে। তারপরও সময় স্বল্পতার কারণে আইন প্রণয়নে সব দলের মতামত না নেওয়ায় সেই আইনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই আমরা বিকল্প হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া প্রস্তাবনায় বিকল্পধারার পক্ষে থেকে ৩টি প্রস্তাবনা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আইন প্রণয়নের প্রস্তাবের সঙ্গে সার্চ কমিটির নামের প্রস্তাব দ্বন্দ্ব নয়। আমরা আইন প্রণয়নের বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে সার্চ কমিটির নামের প্রস্তাব করেছি। এখন তাড়াহুড়ো করে আইন গঠন করতে গেলে বরং পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা আবার বির্তকের মধ্যে আসতে পারে। সেজন্য এই মুহূর্তে আইন প্রণয়নে কতটুকু সম্ভবনা রয়েছে, সেটা একটা বিষয়। এই রকম একটি প্রণয়ন করতে গেলে সব দলের সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। বিকল্প হিসেবে সার্চ কমিটির প্রস্তাব করেছি, যেহেতু নির্বাচন কমিশনের মেয়াদও শেষ হয়ে আসছে। যাতে সাংবিধানিক শূন্য সৃষ্টি না হয়। একইভাবে আমরা দৃঢভাবে বিশ্বাস করি একটি স্থায়ী আইন প্রণয়ন করা জরুরি। যাতে পরবর্তীতে স্থায়ী আইনের মধ্যে ইসি গঠন করতে পারে।
গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে সংলাপে বসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। এ পর্যন্ত মোট নয়টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল ৩ জানুয়ারি সংলাপে যোগ দিবে গণতন্ত্রী পার্টি সন্ধ্যা ছয়টায়, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সন্ধ্যা সাতটায় এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। ৪ জানুয়ারি সংলাপ হবে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সন্ধ্যা সাতটায়। ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা হবে জাতীয় পার্টি-জেপি’র সাথে সংলাপ এবং সন্ধ্যা সাতটায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাথে। ৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সাথে সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপের কথা রয়েছে। এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে আলোচনা হবে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটি'র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।