| |
               

মূল পাতা মুসলিম বিশ্ব চলতি বছরে আফগানিস্তানে আফিম চাষ কমেছে ২০ শতাংশ : জাতিসংঘ


চলতি বছরে আফগানিস্তানে আফিম চাষ কমেছে ২০ শতাংশ : জাতিসংঘ


শেখ আশরাফুল ইসলাম     07 November, 2025     12:36 PM    


ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে বিগত বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে মাদকদ্রব্য আফিম চাষ ২০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি)।

এক প্রতিবেদনে ইউএনওডিসি জানায়, ২০২৫ সালে আফিম চাষ হয়েছে মাত্র ১০,২০০ হেক্টর জমিতে, যা ২০২৪ সালের ১২,৮০০ হেক্টরের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগের সময় এই সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর। 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা পাজক আফগান নিউজের প্রকাশিত এক সংবাদ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

২০২২ সালের এপ্রিলে ইমারাতে ইসলামিয়ার আমীরুল মু’মিনীন বা সর্বোচ্চ নেতা শাইখুল হাদিস মাওলানা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দেশটিতে আফিমসহ সব ধরনের মাদক চাষ, বেচাকেনা, আমদানি–রপ্তানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করে একটি ফরমান জারি করেন। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ও ধর্মীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। এরপর থেকেই কমতে থাকে মাদকের সক্রিয়তা।

ইউএনওডিসি জানায়, মাওলানা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কৃষকদের আফিম বিক্রি থেকে আয় প্রায় অর্ধেক কমেছে—২০২৪ সালের ২৬ কোটি ডলার থেকে ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। নিষেধাজ্ঞার পর অনেক কৃষক বিকল্প হিসেবে গমসহ অন্যান্য ফসল চাষে ঝুঁকেছেন। তবে খরা ও কম বৃষ্টির কারণে দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষিজমি এখন অনাবাদি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে প্রায় ৪০ লাখ আফগান নাগরিক ফিরে আসায় চাকরি ও সম্পদের ওপর চাপ বেড়েছে। মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। এসব কারণ মিলিয়ে ভবিষ্যতে কিছু কৃষক আবারও আফিম চাষে ফিরতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউএনওডিসির আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান অঞ্চলের প্রতিনিধি অলিভার স্টোল্পে বলেন, আফগানিস্তানকে অবৈধ ফসলের চাষ থেকে মুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি, মাদক চাষ ও পাচার রোধ, এবং মাদকাসক্তি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি।

ইউএনওডিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  ২০২৫ সালে শুকনো আফিমের দাম ২৭ শতাংশ কমে প্রতি কিলোগ্রাম ৫৭০ ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২৪ সালে ছিল ৭৮০ ডলার। তবুও এটি নিষেধাজ্ঞার আগের দামের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। মূল্য ও উৎপাদন, দুটোই কমে গেছে, এতেই বুঝা যা আফিম বাজারে বড় পরিবর্তন ঘটছে। একই সাথে অন্য দেশগুলোতে অবৈধ আফিম চাষ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘের আফগানিস্তান মিশনের উপপ্রতিনিধি জর্জেট গ্যাগনন বলেন, আফগানিস্তানের মাদক সমস্যা শুধু তার নিজস্ব নয়; এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু। তাই এই সমস্যা সমাধানে আফগান কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ইউএনওডিসি জানায়, আফিম চাষ কমে যাওয়ার পর থেকে সিনথেটিক মাদক; বিশেষ করে মেথামফেটামিন বা ‘আইস’ উৎপাদন ও পাচার বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এসব মাদকের জব্দের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সিনথেটিক মাদক এখন অপরাধচক্রের নতুন আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে, কারণ এগুলো সহজে তৈরি করা যায়, চিহ্নিত করা কঠিন, আর আবহাওয়ার প্রভাবও তুলনামূলক কম পড়ে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার মাদকবিরোধী পদক্ষেপগুলোতে শুধু আফিম নয়, সিনথেটিক মাদককেও গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি, অভিযান, বিশ্লেষণ এবং আসক্তি নিরাময়ের কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

ইউএনওডিসির এই প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান কোনো মন্তব্য করেনি।

সূত্র : পাজক আফগান নিউজ