শেখ আশরাফুল ইসলাম 29 April, 2025 03:27 PM
গত ২৬ এপ্রিল খেলাফত আন্দোলনের মজলিসের শূরা ও মজলিসে আমেলার যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া কে এই মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী?
১৯৬১ ঈসাব্দে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার অন্তর্গত দাদপুর গ্রামে খান বংশের এক কৃষক পরিবারে পিতা আব্দুর রশিদ খান ও মাতা আমাতুল্লাহ বানুর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী। মাত্র ১০ বছর বয়সেই মমতাময়ী মা’কে হারান তিনি। আশ্রয় গ্রহণ করেন নানা-নানির বাড়িতে এবং এখানেই তার শৈশব কাটে। তার নানা ছিলেন দাদপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত কৃষক হাজী বাবন মোল্লা (রহ.)।
পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় নানা বাড়িতেই। যখন একটু বুঝতে শুরু করেন তাকে ভর্তি করানো হয় দাদপুর প্রাইমারি স্কুলে। এখানে পড়ার সময়েই তার মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখা দেয়। তারপর তাকে ভর্তি করানো হয় জামিয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া বাহিরদিয়া মাদরাসায়। এখানেই তিনি ফজিলত ১ম বর্ষ (জালালাইন) পর্যন্ত পড়েন। তারপর ইলমে দ্বীনের টানে মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী চলে আসেন রাজধানীতে। ভর্তি হন অলীকুল শিরোমনি হজরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্বী হুজুর (রহ.) প্রতিষ্ঠিত জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায়।
জানা যায়, পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ, মার্জিত আদব-আখলাক হাফেজ্বী হুজুরের নজর কাড়ে। দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নকালেই তিনি হাফেজ্বী হুজুরের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন।
কামরাঙ্গীরচর জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়ায় শিক্ষকতার মাধ্যমেই বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শুরু হয় মাওলানা হক্কানীর। এর পাশাপাশি স্বীয় উস্তাদ ও মুর্শিদের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাওয়াতুল হকের কাজ নিয়ে মেহনত করতে থাকেন।
জানা যায়, কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি ওয়াজ মাহফিল, খেলাফত আন্দোলনের প্রোগ্রামসহ নানা কারণে তিনি হাফেজ্বী হুজুরের সঙ্গে সারা বাংলার আনাচে কানাচে সফর করেন মাওলানা হক্কানী। এসময় হাফেজ্জী হুজুরের মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্বী হুজুরের ইন্তেকালের পর ১৯৮৯ ঈসাব্দে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া বলিয়ারপুর মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং পরে মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সাভারের একটি দাওরায়ে হাদিস মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস। একই সঙ্গে তিনি বর্তমানে দেশের একাধিক মাদরাসার প্রধান মুরুব্বী এবং উস্তাজুল হাদিস হিসেবে ইলমেদ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি হাফেজ্বী হুজুরের অর্পিত দায়িত্ব পালনার্থে কামরাঙ্গীরচর মাদরাসার অদূরে মাদবারবাজারের ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদে সুদীর্ঘ ৩৭ বছর যাবত খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জানা যায়, মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন। মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি দলের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে এক বিবৃতিতে জানায় খেলাফত আন্দোলন।
উল্লেখ্য; হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছোট পুত্র সাবেক আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী দীর্ঘদিন অসুস্থতা ও বার্ধক্য জনিত কারণে গত ৪ এপ্রিল (শুক্রবার) ইন্তেকাল করায় আমীরের পদটি শূন্য হয়। তারপর ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শূরা অধিবেশনে আমীরের দায়িত্ব প্রদান করা হয় মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীকে। ফলে মহাসচিবের পদটিও শূন্য হয়। তারপর শূরা অধিবেশনের পরে মজলিসে আমেলার বৈঠক বসে দলের নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।