রহমত নিউজ 23 October, 2024 10:27 AM
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবন বঙ্গভবনের সামনে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ হঠাৎ বঙ্গভবনের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। সে সময় বিক্ষোভকারীদের সামলাতে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি। এতে তিনজন আহত হন। পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু পরবর্তী রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত হওয়ার আগে যদি এই রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রপতিহীন করে ফেলা হয়, তাহলে বিদেশি শক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আমরা তা হতে দেব না।
তিনি আরও বলেন, আগামী দুদিন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) সবার সঙ্গে কথা বলে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হবে যাকে নিয়ে কোনো বির্তক থাকবে না। এরপর সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এ জন্য আমাদের দুদিন সময় দিন।
এ সময় সারজিস আলম বলেন, আমরা ৪ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’র ঘোষণা দিয়েছিলাম। যেটা একদিন পর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কৌশলগত কারণে মনে হয়েছে একদিনের জায়গায় দুদিন সময় দিলে ফ্যাসিস্ট সরকার চক্রান্তের সময় পাবে। আমাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি পরিকল্পনা ধ্বংস করে দেবে। তাই ৩০ মিনিটের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫ আগস্টই ‘লং মার্চ টু ঢাকা’র ঘোষণা দেওয়া হয়। আর আমরা সফল হই।
এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একটি যুদ্ধে কৌশল হলো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গতকাল ফ্যাস্টিটের দোসর রাষ্ট্রপতির যে কথাটি শুনেছিলাম, তাতে আমাদের রক্ত টগবগিয়ে মাথায় উঠে যায়। এই রক্তের ক্ষত এখনও ভাসছে। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনই তার পদত্যাগ করিয়ে ফেলি তাহলে রাষ্ট্রের বড় ক্ষতি হতে পারে। তাই আমরা যেন কৌশলের কাছে হেরে না যাই। আন্দোলনের ভেতর ঢুকে দু-একজন ফ্যাসিস্টদের দোসর উসকানি দিতে পারে। কারণ, দেশকে অস্থিতিশীল দেখানো গেলে তারা ফায়দা লুটতে পারবে। পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে যাদের মতপার্থক্য রয়েছে তারাও রাজপথে এসে উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। এরপর একজন সিলেক্ট করতে হবে, যিনি আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে আগামীকাল চিন্তা করে কাকে বসানো যায় সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
তিনি বলেন, আমরা দুদিন সময় দিয়েছি। সবকিছু ভেবেই এই সময় দেওয়া হয়েছে। এখানে যারা এসেছেন সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই। বিশেষ করে এখানে গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের ইমোশনকে শ্রদ্ধা জানাই। হেডডাউন করা শ্রদ্ধা জানাই আপনাদের।
সবশেষে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকতে বলে বঙ্গভবন এলাকা ত্যাগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড় এলাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবন পর্যন্ত এগিয়ে যায় তারা। সেখানে তারা বঙ্গভবনের সামনের খালি জায়গায় অবস্থান করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। উপায় না পেয়ে বঙ্গভবন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে তারা।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।
সম্প্রতি একটি পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, (পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার) বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।
এরপর নতুন করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সরকার পতনে নেতৃত্বদানকারীরা।