রহমত নিউজ 25 September, 2024 10:54 AM
জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের প্রথম দিনেই মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর জন্য তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন ইউনূস। জাতিসংঘে তার বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটকে যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এই বৈঠক তারই প্রতিফলন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টায় নিউ ইয়র্কে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইড ইভেন্ট হিসেবে আয়োজিত এ বৈঠকে সহ-আয়োজক ছিল ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বৈঠকে মূল বক্তা হিসেবে ইউনূস তিনটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
প্রথমত, ইউনূস জাতিসংঘের মহাসচিবকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় দ্রুততম সময়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে একটি কনফারেন্স আয়োজনের আহ্বান জানান। এই কনফারেন্সের মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সৃজনশীল ও কার্যকরী সমাধানের পথ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে, জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত 'জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান'কে আরও দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন তিনি। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য সঠিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন আহ্বান করেন ইউনূস।
বৈঠকে ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশ ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, আর প্রতিবছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে এই শরণার্থী জনগোষ্ঠীতে। গত দুই মাসেই নতুন করে ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শরণার্থীদের প্রতি মানবিক সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও, এই সংকট বাংলাদেশের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট দেশের নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশ তার সামর্থ্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইউনূস আরও বলেন, জাতিসংঘের বহু সাধারণ অধিবেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদের নানা উদ্যোগের পরও মিয়ানমারে মূল সংকটের সমাধান না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয়নি। গত ৭ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। শরণার্থী শিবিরগুলোতে যুবকদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে।
ইউনূস রোহিঙ্গাদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশসহ সব অংশীজনের সমন্বয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের আহ্বান জানান।