মূল পাতা আন্তর্জাতিক শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট বামপন্থী নেতা অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে
রহমত নিউজ 23 September, 2024 09:33 AM
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে। দুই দফায় সাজিথ প্রেমাদাসা এবং ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহেকে ধরাশায়ী করে জয়ী হয়েছেন বামপন্থী এই নেতা।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দফায় ভোট গণনার পর অনূঢ়াকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রথম বামপন্থী হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন। সেইসঙ্গে ২০২২ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তখনকার প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরেরও বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেলো শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, শনিবার ভোটগ্রহণ শেষে দেখা যায়, ৪২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পান দিসানায়েকে। তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী দল সঙ্গী জন বালাওয়াগার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা পান ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। আর মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট পান ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে না পারায় শুরু হয় দ্বিতীয় দফায় গণনা। প্রথম দফায় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুইজনের মধ্যে এই লড়াই হয়। সেখানে সাজিথ প্রেমাদাসাকে পেছনে ফেলে জয় ছিনিয়ে নেন অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে।
কে এই দিসানায়েকে?
১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া বামপন্থী নেতা দিসানায়েকে ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কার দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনের কঠোর সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে জনতা বিমুক্তি পুরামুনার (জেভিপি) পলিটব্যুরোতে যোগ দেন দিসানায়েকে। তিনি ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ভূমি ও সেচ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী হুইপ হিসেবে কাজ করেন তরুণ এই নেতা।
দিসানায়েকে জেভিপির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ১৭তম জাতীয় কনভেনশনে। তার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে এনপিপি জোটের প্রার্থী ছিলেন জেভিপি প্রধান অনূঢ়া কুমারা দিসানায়েকে। এই জোট এর আগে কখনো শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলও ছিল না। দেশটির ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই জোটের আসন ছিল মাত্র তিনটি।
কিন্তু গণবিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালানোর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেভিপির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ওই বিক্ষোভে সক্রিয় ভূমিকা ছিল দলটির। আন্দোলনের পর জেভিপি বৃহত্তর পরিবর্তনের ডাক দেয়। সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলটির অনড় অবস্থান নাগরিকদের আকৃষ্ট করেছে। তাতে দলের সঙ্গে বেড়েছে দিসানায়েকের ব্যক্তিগত আবেদনও।
গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে মার্ক্সবাদে অনুপ্রাণিত দুটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল জেভিপি। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এর চরম প্রতিশোধ নেয়। গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দল সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ নিহত হন। এরমধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাও ছিলেন।