মূল পাতা আন্তর্জাতিক বাংলাদেশের উপর থেকে আধিপত্য হারিয়েছে ভারত; কোন পথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক?
শেখ আশরাফুল ইসলাম 20 September, 2024 04:07 PM
রক্তক্ষয়ী জুলাইয়ের পর ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা। তারপর সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার উজ জামান ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের। ছাত্র-জনতার অনুরোধে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে সেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বগ্রহণ করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনূস। টানা ১৫ বছর পর ভারতের মদদপুষ্ট সরকারের পতনের পর স্পষ্টতই বাংলাদেশে প্রভাব কমছে ভারতের। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কীভাবে পরিচালনা করবে ভারত তা বিবেচনার জন্য আগামী তিন থেকে ছয় মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে সব সমীকরণ উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর নজর রাখা এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই খবরে ফুঁসেছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম “শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান”-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে, রাজনাথ সিং নির্বাচনী এলাকায় ঘরোয়া ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন এবং ভারতীয় জনগণকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলেন।
রাজনাথ সিং তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন, “আমাদের অপ্রত্যাশিত কোনকিছু মোকাবিলা করতে হবে।” প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই “অপ্রত্যাশিত” শব্দটির ব্যাখ্যা করেছে শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান। সাংবাদমাধ্যমটির দাবি, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই শব্দটি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি মূলত বাংলাদেশের সাম্প্রতি পট-পরিবর্তনকে বোঝাতে চেয়েছেন, যেটাকে ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
“ইন্ডিয়া'স গ্রিপ অন বাংলাদেশ ইজ স্লিপিং: নো লংগার এ পাওন ইন রিজিওনাল পলিটিক্স”-India’s Grip on Bangladesh is Slipping: No Longer a Pawn in Regional Politics নামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। সংবাদমাধ্যম শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
নিবন্ধটিতে তিনি বলেন, ভারত কখনো কল্পনাও করতে পারেনি বাংলাদেশে এমনকিছু হবে। একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার! ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিল না; ছিল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর সেটাই ব্যর্থ হয়েছে। আমি নিশ্চিত তারা এখন বুঝতে পেরেছে, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না করে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অনেক ভালো।
তিনি বলেন, আমরা এখন এমন একটি বহুমুখী বিশ্বে আছি যেখানে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান অর্জন করতে চায় ভারত। ভারতের দাবি বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পেছনে আমেরিকার হাত ছিল। আর তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমেরিকা ও চীনকে বিশেষভাবে সতর্ক করতে চেয়েছিল।
নিবন্ধটিতে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারত এটি বুঝাতে যাচ্ছে, তাদের পররাষ্ট্রনীতি হতে হবে এস জয়শঙ্করের বইয়ের শিরোনাম “দ্য ইন্ডিয়া ওয়ে” অনুসারে। যদিও নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। এছাড়া চীনের সাথেও ভারতের সম্পর্ক রয়েছে; বিশেষ করে যখন ব্রিকস, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং মিয়ানমারের ইস্যু সামনে আসে। আমি মনে করি, ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বিশেষ বক্তব্যের মাধ্যমে এটিকেও কোনওভাবে সম্বোধন করা হয়েছিল।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার নিবন্ধে বলেন, আওয়ামীলীগের শাসনামলে ভারত নিশ্চিন্তে ছিল। এখন পরিস্থিতি বিপরীত। প্রধান উপদেষ্টা তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা তুলেছেন।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে বিশেষ বক্তব্যও দিয়েছেন। তাই ভারত মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের জন্য একটু অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুরোটাই এখন নয়াদিল্লির আয়ত্বে। বাংলাদেশকে ভারত কীভাবে মোকাবিলা করবে বা কীভাবে যুক্ত থাকবে তা আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে নয়াদিল্লি নিঃসন্দেহে নিশ্চিত যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামীলীগ সরকার থেকে ভিন্ন। সুতরাং, তাদের সঙ্গে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।