| |
               

মূল পাতা জাতীয় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হেফাজতের ৫ দাবি


অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হেফাজতের ৫ দাবি


রহমত নিউজ     31 August, 2024     06:33 PM    


অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

শনিবার (৩১ আগস্ট)  বিকেলে ধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পেশ করে হেফাজত।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত জুলাই ও আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও দলে দলে অংশ নিয়েছিল। সেসময় হেফাজতে ইসলামসহ সমগ্র ওলামায়ে কেরামও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ৪ আগস্ট এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার ঘোষিত “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ধর্মপ্রাণ জনতাকে নিয়ে ব্যাপকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে কবুল করে আল্লাহ তায়ালা এই জাতিকে বিজয় ও স্বাধীনতা দান করেছেন। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এবং ছাত্র জনতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আরও বলা হয়, নতুন এই স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে সংবিধান, রাষ্ট্র ও সরকারকাঠামোর বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন অনিবার্য বলে আমরা মনে করি। নিঃসন্দেহে দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশায় দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। সেই গণ-আকাক্ষাই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে সফল করে তুলেছিল। বিজয়ের পর এখন শুধু একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই নয়, গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈর-ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে পুরো জাতির মধ্যে যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যকেও টেকসই করতে আমাদের জাতিগত অখণ্ডতা আরো সুসংহত করা জরুরি।

এ লক্ষ্যে হেফাজতে ইসলামের কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে যা আপনার সমীপে আমরা পেশ করছি:

১। সংবিধানের বৈপ্লবিক সংস্কার বা পরিবর্তন: আপনি অবগত আছেন, অতীতের বিভিন্ন সরকার তাদের ক্ষমতামুখী স্বার্থে দেশের সংবিধানকে নানা সংশোধনীর নামে ইচ্ছেমতো কাটাছেঁড়া করেছে। ফলে নানা কারণে বিদ্যমান সংবিধান বিতর্কিত এবং ফ্যাসিবাদের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাই, আমাদের দাবি, এই ত্রুটিপূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ সংবিধানের বিলোপ করে মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পূণস্থাপন পূর্বক একটি গ্রহণযোগ্য গণসংবিধান তৈরির দাবি জানাচ্ছি, যা ভবিষ্যতে কোনো ধরনের নয়া ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারিতার জন্মের পথ বন্ধ করে দিবে।

২। জাতীয় মীমাংসাপত্র প্রণয়ন: গণ-অভ্যুত্থানে দেশে যেভাবে একটি অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যকে আরো সুসংগত করার লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় মীমাংসাপত্র’ (ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন চার্টার) প্রণয়ন জরুরি। কারণ, এখনো আমরা দেশে অস্থিরতা ও তীব্র জিঘাংসা দেখতে পাচ্ছি। এখনো এক পক্ষের ব্যাপারে অন্য পক্ষের ভীতি, বিদ্বেষ ও আশঙ্কা রয়ে গেছে। মানবিকতা, প্রতিটি মানুষের নাগরিক নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে এবং অতীতের সমস্ত ভেদবুদ্ধি দূর করতে অতিসত্বর একটি জাতীয় মীমাংসাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নিন।

৩। জাতীয় শিক্ষানীতি ও পাঠ্যবইয়ের আমূল পরিবর্তন: আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে জাতীয় পাঠ্যবই নিয়ে একের পর এক বিতর্ক উঠেছিল। সর্বশেষ নতুন জাতীয় পাঠ্যবইয়ে হিন্দুত্ববাদ ও ফ্যাসিবাদের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেই বিতর্কিত বিষয়সমূহ বাদ দিয়ে বিজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিতদের তত্ত্বাবধানে নতুনভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি ও পাঠ্যবইয়ের সংস্কার সাধন করুন, যা আমাদের ধর্ম, জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য এবং দেশের কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

৪। হেফাজত নেতা কর্মী ও আলেমদের বিরুদ্ধে ২০১৩ ও ২০২১ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দায়েরকৃত সমস্ত মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করুন। আপনি জানেন, আলেম-ওলামা ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে কতটা নির্যাতন, হত্যা ও গুম-খুনের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দশ্যপ্রণোদিত শত শত মিথ্যা মামলা আলেমদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। অতিসত্বর সেই মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

৫। গণহত্যাকারী ও ফ্যাসিস্টদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।