| |
               

মূল পাতা রাজনীতি দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চায় না ১৪ দল শরিকরা


দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চায় না ১৪ দল শরিকরা


রহমত নিউজ     23 August, 2024     10:11 AM    


ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দেশ ত্যাগের পর একেক করে বেরিয়ে আসছে দলের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের দুর্নীতির খবর। এতে করে দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো এই দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে থাকতে চায় না। 

এ ছাড়া শরিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন জোটের নেতারা। ইতিমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। ফলে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ দিয়েছেন গা ঢাকা। আর যারা গা ঢাকা দেননি তারা আজকের এই পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগকেই দুষছেন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। আওয়ামী লীগ মিথ্যাবাদী একটি দল। তার কারণেই এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি শরিক দলগুলোর কোনো পরামর্শ কখনোই গ্রহণ করেননি। বরং সবসময় তিনি পাশ কাটিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাদের হোয়াটসঅ্যাপেও ফোন করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস দেওয়া হলেও তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তারের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ও এসএমএস দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের ফোন খোলা থাকলেও একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তার হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস করা হলেও উত্তর দেননি তিনি। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তার হোয়াটসঅ্যাপও বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি তাকে এসএমএস দিয়ে রাখলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

জোটের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যেসব কার্যকলাপ করেছে, তার দায় ১৪ দলের শরিকরা নেবে না। ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় ৫ কোটিরও বেশি টাকা পাওয়া গেছে। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো এটা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না। আমির হোসেন আমুর বাসায় টাকা পাওয়া যায়, অথচ শরিক দলগুলো পার্টির অফিসের ভাড়া দিতে পারে না। এই দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে দলের জোটের শরিকরা থাকতে পারে না। 

তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে বাঁচাতে বলছেন, ১৪ দলে তারা কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। এমনকি ১৪ দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গেও তাদের রাখা হতো না। তারা বলেন, আমরা আগে থেকেই ১৪ দলের অনেক কিছুই সমর্থন করিনি।

আওয়ামী লীগ ১৪ দলের নাম করে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙেছে। আমাদের দেখিয়ে দুর্নীতি করেছে। আমাদের ফাঁকি দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে মিথ্যা বলেছে। যখন ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছি। আমরা বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা রাজনীতি করবে, তারা আন্দোলন করবে, তাদের কেন গুলি করতে হবে। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের কারণে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। 

এমনকি ১৪ দলের শরিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তারা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রলীগের ভয়ে পালিয়ে এসেছে। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো সবসময় ভালো পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনোই শরিক দলগুলোর পরামর্শ গ্রহণ করেননি। আমরা বলেছি, আপনারা অপকর্ম করবেন, আর সেই দায় আমরা কিন্তু নেব না। আমাদের ঘাড়ে কোনো দায় চাপাবেন না।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ১৪ দলীয় জোটের অস্তিত্ব নিয়ে টানাপড়েন চলে আসছিল। তবে এই জোটের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা আরও চরম আকার ধারণ করে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে। অনেক মান-অভিমানের দোলাচলে চলতে থাকে ১৪ দলীয় জোট।

সর্বশেষ গত জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলে নানা দেনদরবার। অবশেষে জাসদ তিনটি, ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা এ কে এম রেজাউল করিম ছাড়া সবাই হেরেছেন। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের সবচেয়ে কম আসন। এমনকি নির্বাচন-পরবর্তী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালান শরিক নেতারা। এতেও কোনো লাভ হয়নি। পরে অবশ্য গণতন্ত্রী পার্টির কানন আরা বেগমকে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি করা হয়। এর আগে ১৪ দলের শরিক দল থেকে নবম জাতীয় নির্বাচনে (২০০৮) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চারজন, দশম সংসদে (২০২৪) সংরক্ষিত দুই জনসহ ১৩ জন, একাদশ সংসদে (২০১৮) আট জন, দ্বাদশ সংসদে (২০২৪) যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুই জনে। এমনকি দ্বাদশ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করলেও মন্ত্রিসভায়ও রাখা হয়নি ১৪ দলীয় জোটের কোনো নেতাকে। এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল ১৪ দলের শরিক দলগুলো। তাদের দাবি ছিল ১৪ দলীয় জোট যেভাবে চলছে, আসলে এই জোট থাকা না থাকা সমান কথা।

জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, জাতীয় পার্টি কখনোই ১৪ দলীয় জোটে সক্রিয় ছিল না। এমনকি আমাদের তো প্রথমে তারা রাখেইনি। পরে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম যখন ১৪ দলের সমন্বয়ক ছিলেন, তিনি আমাদের ডেকেছেন। তবে জোটে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমাদের ছিল না। ব্যাকফুট বা ওয়াষ্যাবা-ই হোক আমরা কখনোই ভূমিকা রাখিনি। আর এখন যে পরিস্থিতি সেটা অনেক সুদূরপ্রসারী। আমরা ১৪ দলের অনেক কিছুই সমর্থন করিনি। সবকিছুতে ছিল বামপন্থিরা আর ইসলামী দলগুলো। আমরা লিবারেল ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই স্বাধীনতা যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়। ১৪ দলে থাকব কি থাকব না সে হিসাব এখন কষছি না। এখন যে স্বাধীনতা পেয়েছি-এই স্বাধীনতাকে নিয়েই থাকতে চাই।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এখন যে অবস্থা এই অবস্থায় আমরা কোনো কিছুই বলতে পারছি না। আমরা নিজেরাও নিরাপদ বোধ করছি না। ফলে ১৪ দল থাকবে কি থাকবে না সেটি এখন বলতে পারছি না। এমনকি ১৪ দলের শরিকরা তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্মে কাজ করতে পারবে কি না সেটিও এখন বলা যাচ্ছে না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দলে থাকব কি থাকব না-সেটা এখনও চিন্তা করিনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে-তারা রাষ্ট্র সংস্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। আগে দেখি তারা কী করে। আর ১৪ দলীয় জোট থাকবে কি থাকবে না সেটি ঠিক করে আওয়ামী লীগ। তারা তো এখন নেই। এই সরকার আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক। দেশের স্থিতিশীলতা আসুক। আমাদের কোনো কর্মসূচিও নেই। আর আপাতত কোনো কর্মসূচি নিয়েও ভাবছি না।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। ১৪ দলের কোনো খবর নেই। সবার ফোন বন্ধ। আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে, তা ১৪ দলের শরিকরা মেনে নেবে না। 

১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বাসায় এতগুলো টাকা পাওয়া গেল; কিন্তু শরিক দলগুলোর অনেকে পার্টি অফিসের ভাড়া দিতে পারেনি। এই দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে ১৪ দলের জোটের শরিকরা থাকতে পারে না। তারা আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙেছে। আমাদের দেখিয়ে দুর্নীতি করেছে। আমাদের ফাঁকি দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে মিথ্যা বলেছে। যখন ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছি। আমরা পরামর্শ দিয়েছি। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কোনো পরামর্শই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রহণ করেননি। আমরা বলেছি আপনারা অপকর্ম করবেন-সেই দায় আমরা কিন্তু নেব না। আমাদের ঘাড়ে কোনো দায় চাপাবেন না।

-সময়ের আলো