রহমত নিউজ 25 July, 2024 06:52 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানতাম যে নির্বাচন করতে দেবে না। তার পরও নির্বাচন করে ফেলেছি। নির্বাচন করার পর গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটাও গ্রহণযোগ্য আমরা করতে পেরেছি, সরকার গঠন করতে পেরেছি। আমার একটা ধারণা ছিল এই ধরনের একটা আঘাত আবার আসবে।’
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এডিটরস গিল্ডসের উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও হেড অব নিউজ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত, সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। এই যে লোক চলে আসা, এবার আমরা কিন্তু আগে থেকে খবর পেয়েছি লোক ঢুকবে। গোয়েন্দা দিয়ে সব হোটেল, কোথায় থাকতে পারে, সেগুলো কিন্তু নজরদারিতে আনা হয়েছে। কিন্তু ওরা সেখানে ছিল না; এরা চলে এসেছে ঢাকার ঠিক বাইরের পেরিফেরিতে (সংলগ্ন এলাকায়)।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ থেকে শিবির-জামায়াত এরা কিন্তু এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু ছাত্রদলের ক্যাডাররাও কিন্তু সক্রিয় ছিল। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে এরাও (বিএনপি) কিন্তু সক্রিয় ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন, তখনও কিন্তু লাশ পড়েনি। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের (যুক্তরাষ্ট্রের) বক্তব্যে এসে গেল, লাশ পড়েছে। লাশের খবর তাদের কে দিলো? তাহলে লাশ ফেলার নির্দেশটা কে দিয়েছে, এটাও খবর নেওয়া দরকার। তারপর কিন্তু লাশ পড়তে শুরু করল।’
তিনি বলেন, ‘তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এভাবে কেন সুযোগটা সৃষ্টি করে দিলো, সেই জবাবও জাতির কাছে তাদের দিতে হবে। আমরা তো বারবার তাদের সঙ্গে বসলাম। প্রজ্ঞাপন সেটাও করা হলো। তাদের কোনো দাবি তো পূরণ করা ছাড়া রাখিনি। যে দাবি তারা করেছিল কোটা সংস্কারের, যতটুকু চেয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছি। যখন তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলো, তারপরও তারা এ জঙ্গিদের সুযোগ করে দিলো কেন? কোটা আন্দোলনকারীদের কিন্তু জাতির কাছে একদিন এ জবাব দিতে হবে। কেন মানুষের এত বড় সর্বনাশ করার সুযোগ করে দিলো?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবসময় তাদের সহানুভূতি দেখিয়েছি। তাদের সবসময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে কখনো ক্ষমা করা যায় না। যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো, পোশাক তৈরি করা হলো কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট; ফলস (ভুয়া) আইডি কার্ড, পেছনে ব্যাগের মধ্যে কী আছে, পাথর আর ধারালো অস্ত্র। মসজিদে অস্ত্র নিয়ে ইমামকে মাইকিং করতে বাধ্য করা, এই যে জঙ্গিবাদের বীভৎস চেহারা আজ সবার সামনে চলে এলো, এর বিরুদ্ধে জাতিকে, সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব, যারা এ ধরনের দেশের সর্বনাশটা করল, যারা আজ গণমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য, তাদের আয় বৃদ্ধি, তাদের চলাচলের সুবিধার জন্য, তাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য যতগুলো স্থাপনা তৈরি করেছি, সবগুলোতেই তারা আঘাত করেছে, সবগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে। (এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে) ক্ষতিটা কার? নিশ্চয়ই জনগণের। এখানে তো জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। কারণ, এরা তো কোনদিনই কোনো দেশে ভালো কিছু করতে পারেনি।’
বিগত বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করে দীর্ঘসময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। সেই জায়গায় আজ চরম একটা আঘাত দিলো।’
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কারফিউ দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো চাইনি আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটুক, আমাদের কারফিউ দিতে হোক। একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে এটা আমাদের কাম্য ছিল না। কিন্তু আজ না দিয়ে কোন উপায় ছিল না। না দিলে আরও যে কত লাশ পড়ত, তার হিসাব নেই। সত্যি কথা বলতে কি, দীর্ঘ সংগ্রামের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল, দেশে উন্নতিও করতে পেরেছিলাম। মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে যে উন্নয়ন করেছি আর কে পেরেছে এর আগে।’
গণমাধ্যমগুলোকে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এটা ঠিক অনেকে গুজবে কান দেয়। কান নিয়ে গেছে চিলে, ওটার পেছনে ছোটে, কানে হাত দিয়ে দেখে না কান আছে কি না। মিথ্যাচারের হাত দেখে মানুষকে রক্ষা করুন, মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে পারে, সেভাবে সংবাদ পরিবেশন করুন। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এর সুফলও মানুষ পেল, কুফলও মানুষ পেল। আপনাদের কাছে যা তথ্য আছে, আপনারা তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনমত সৃষ্টি করুন।’
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন এডিটরস গিল্ডসের প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল বাবু।
এরপর একের পর এক বক্তব্য দেন, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল ইসলাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নাগরিক টেলিভিশনের হেড অব নিউজ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, আমাদের সময়ের সম্পাদক মাইনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাজাহান সর্দার, ডিবিসি টেলিভিশনের নিউজ এডিটর জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ আশিষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত এবং আরটিভির হেড অব নিউজ মামুনুর রহমান খান।