| |
               

মূল পাতা জাতীয় আইন-আদালত রাজধানীর সব পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের


রাজধানীর সব পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের


রহমত নিউজ     04 February, 2024     08:37 PM    


ঢাকা মহানগরীতে বিদ্যমান সকল পার্ক ও খেলার মাঠের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত; অনতিবিলম্বে পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে বিদ্যমান পার্ক ও  খেলার মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর ওপর এই নির্দেশনা জারি করেন আদালত। এসব নির্দেশ কতটুকু পালন হয়েছে তা আগামী ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে আদালতকে জানাতেও বলা হয়েছে।

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক মামলার শুনানী শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি খিজির হায়াত এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেলা’র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধূরী এবং এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।

বেলার আইনজীবী এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না জানান, শুনানি শেষে মহামান্য আদালত ঢাকা মহানগরীর সকল পার্ক ও খেলার মাঠ রক্ষায় বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেন। রুলে হাইকোর্ট জনসাধারণের ব্যবহার্য পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ, অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, পার্কও খেলার মাঠ বিরুদ্ধ ব্যবহার, শ্রেণি পরিবর্তন এবং দখল সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হওয়ায় কেন তা বেআইনী, আইনি কর্তৃত্ববিহীন এবং আইনগতভাবে ভিত্তিহীন ঘোষণা করা  হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা করার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। 

সেই সাথে মহানগরীর পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, শ্রেণি পরিবর্তন ও বিরুদ্ধ ব্যবহাররোধ এবং বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে পার্ক ও খেলার মাঠ পুনরুদ্ধারের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। মামলার বিবাদীগণকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।

উল্লেখ্য, ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার (৫৯০ বর্গমাইল) আয়তন বিশিষ্ট দেশের রাজধানী ঢাকা মহানগরী ১৬ মিলিয়ন  লোকের আবাসভূমি। প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে খ্যাত এ মহানগরী বর্তমানে বিশ্বের বসবাস অযোগ্য নগরীর পরিচয় গ্রহণ করেছে। অপরিকল্পিতভাবে দ্রুত প্রসারিত মেগাসিটিগুলোর মধ্যে বর্তমানে ঢাকা অন্যতম। অপরিকল্পিত নগরায়ন গ্রাস করছে এ নগরীর পার্ক ও খেলার মাঠের মতো নাগরিক সুবিধাদি। 

নগর-পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি আধুনিক শহরে প্রতি আধা বর্গকিলোমিটার এলাকার জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। ঢাকার দুইটি সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। আয়তন বিবেচনায় দুই করপোরেশনে খেলার মাঠ  দরকার অন্তত ৬১০টি, রয়েছে মাত্র ২৩৫টি যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৯টি ওয়ার্ড থাকলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লেখ রয়েছে যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলশ্রুতিতে ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২৭.৮২% তরুণ খেলার মাঠের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে পার্ক বা উদ্যান রয়েছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে ৬টি পার্ক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে পার্ক রয়েছে মাত্র ২৩টি। বিদ্যমান এসব পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশেই নেই সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার। ফলশ্রুতিতে নাগরিকগণ বঞ্চিত হচ্ছে নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম  ও হাঁটাচলার অধিকার থেকে ও সর্বোপরি গাছপালা-প্রকৃতির সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপনের জরুরি সুযোগ থেকে। ঢাকা শহরের সকল খেলার মাঠ ও পার্কসমূহ রক্ষায় বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।

এ মামলায় বিবাদী করা হয়- গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রণালয়ের সচিব; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক; ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার; গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদকে।