রহমত নিউজ 08 December, 2023 05:54 PM
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যৈষ্ঠ্য প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি বলেছেন, বিরোধী দলবিহীন প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী রুখে দেবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, অবৈধ সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ যেভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফুসে উঠছে, তাতে সরকারের আখের রক্ষা হবে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে পরেছে। সরকার দল প্রশাসন নিভার হয়ে পরছে। জনগণের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচন্ড বিরোধীতা এবং আন্তর্জাতিক মহলের মতামতকে উপেক্ষা করে সরকার একতরফা প্রহসনের নির্বাচন করার অপরিণামদর্শি খেলায় মেতে উঠেছে। জনগণের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করলে এটা দেশবাসী মানবে না। প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ফিরে আসতে হবে। তিনি পাতানোর নির্বাচনে কেউ কোন সহযোগিতা করা থেকে এবং ভোটদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।বেচাকেনার হাটের মতো প্রার্থী ও দলকে নির্বাচনে আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ১৪ দলের ইনু-রাশেদ খান মেনন খুব পেরেশানিতে আছেন তাদের সিট কনফার্ম না পেয়ে। জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়েছে। জাতীয় পার্টি জাতির জন্য একটা বিষফোড়া। ২০১৪ সালে আবার ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করে বৈধতা দিয়েছে। ওরা অংশীদার, মন্ত্রী হয়, তারা বিরোধী দল হয় কীভাবে। এটা তো ধোঁকাবাজি। অনেক সুন্দর সুন্দর কথা জিএম কাদের এখন তারা নির্বাচনে চলে গেছে।
তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপি আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক। টাকা ও সিট ছেড়ে আওয়ামী লীগ তাদের নিয়েছে। মাদানি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন মানুষের সঙ্গে আছে, প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল করতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হবে। ২০১৪ ও ২০১৮ এর মত নির্বাচন আমরা চাই না। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরকারকে ব্যাক করানোর জন্য ইসলামী আন্দোলন রাজপথে নেমেছে। সরকারকে বলবো ফিরে আসুন। আগামীতে যে রক্তপাত, গৃহযুদ্ধ হবে এর দায় দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সরকারকে নিতে হবে। তিনি ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পতাকা র্যালী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
আজ (৮ ডিসেম্বর) শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিল, সকল রাজবন্দীদের মুক্তি বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সংখ্যানুপাতিক (চজ) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি ও সহকারি মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা নূরুল ইসলাম নাঈম, ডা. শহিদুল ইসলাম, নুরুজ্জামান সরকার, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, মাওলানা কেএম শরিয়াতুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা মাকসুদর রহমান ও মুফতী মাছউদুর রহমান।
মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জাতীয় অর্থনীতি এখন ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। ব্যাংকগুলোর আমানত ও দেশের রিজার্ভ লুটপাটের কারণে অর্থনীতি এখন ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে সরকার এখন গার্মেন্ট শিল্পকে মারাত্মক ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণ যখন অভাবের তাড়নায় দিগি¦দিক ও দিশেহারা। সরকার খেল-তামাশার নির্বাচন নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছে।
অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের সম্পদ নষ্ট করে সরকার প্রহসনের নির্বাচন করছে। তিনি বলেন, পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে দিলে অন্তত দেশের সম্পদ নষ্ট হতো না। তিনি বলেন, পাতানোর নির্বাচনে খরচকৃত টাকার হিসেব জনগণ নিবে। তিনি বলেন, গৃহপালিত দল দিয়ে এবং সরকারী দলের প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে সকল ডামি প্রার্থীরা উদগ্রীব। কথা হলো নৌকা নিয়ে নির্বাচিত দল আবার বিরোধী দল হয় কিভাবে? এভাবে ধোকার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তিনি শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে প্রজন্মকে মেধাশূণ্য করার চক্রান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষা কারিকুলামের বই বিতরণ করা যাবে না। এবং কোন ছাত্র-ছাত্রী এই বই পড়বে না। তিনি বিতর্কিত বই ছাপাতে যে টাকা খরচ হয়েছে, এই টাকা শিক্ষামন্ত্রী দিপুমনিকে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, সরকার প্রধানের কার্যক্রম দেখে এটা পরিষ্কার যে প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা নিয়ে তিনি দেশ শাসন করছেন। যখন দেশের ঘরে ঘরে অভাব, মানুষ যখন নির্যাতিত ও অধিকারবঞ্চিত— তখন ঢোল-তবলা নিয়ে আওয়ামী লীগের উল্লাস দেখে জনগণ ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণা ক্রমেই বেড়ে চলছে। জনসমর্থন হারিয়ে দিশেহারা ও বিপর্যস্ত। এজন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়, বিজয়নগর পানির ট্রাংকি হয়ে পুনরায় বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এসে সমাপ্ত হয়।