রহমত নিউজ ডেস্ক 19 November, 2023 10:04 AM
বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নারী মৈত্রী’।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রীর আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ আহবান জানানো হয়। অনুষ্ঠানের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার। মতবিনিময় সভায় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, বর্তমানে তরুণরা ই-সিগারেটর প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু তাই নয় সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রিও বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আকার ৫০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ এ বৃদ্ধি করা এবং বিক্রয় স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের প্রোগ্রামস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, তামাক একটি প্রাণঘাতী দ্রব্য। তামাকের পক্ষে বলার মতো একটি শব্দও নেই। তামাক পরিবেশ, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০১৮ এর তথ্য মতে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। তার মানে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ও জীবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে। আইন শক্তিশালী করার পদক্ষেপকে বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এ ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এ সর্বগ্রাসী আগ্রাসন আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে।
হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ নানা রকম জটিল রোগের সৃষ্টি হয় তামাক সেবনের কারনে। তামাক সেবন না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে অধূমপায়ীরা। সেক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (অধ্যায়ন ও প্রশিক্ষণ) শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ বলেন, তামাকের কারণে সৃষ্ট রোগ ও মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য এবং সেটি তখনই সম্ভব যদি বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা হয়। তাই সকলের একটাই দাবি আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা হোক।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, তামাকের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি বিষয়ে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ২৭ শতাংশ বেশি। রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি এবং চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ক্যানসার সার্ভে-২০১৮ তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। সুতরাং মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা। তামাকের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হতে হবে।
তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী অপকৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা জানিয়ে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ঢাকা ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত ও জনবান্ধব উদ্যোগ। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপকৌশল ও অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিকদের যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।