রহমত নিউজ ডেস্ক 12 November, 2023 03:02 PM
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, একজন নেতা এবং একটি দলের গোয়ার্তুমির কারণে দেশ আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধাবস্থায় নিপতিত হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতার প্রয়োগ অর্থে স্বাধীনতার যে তাৎপর্য তা হারিয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন ক্ষমতা লিপ্সার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের ভয়াবহতা ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছিলাম। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট উত্তরণে সরকারের কাছে আমরা কিছু যৌক্তিক দাবিও জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার কোনরূপ কর্ণপাত করেনি। এমতাবস্থায় একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল ও দেশের গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও করণীয় নিয়ে অবহিত করতেই আজকের এই আয়োজন।
আজ (১২ নভেম্বর) রবিবর দুপুর ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ কার্যালয়ে দেশের চলমান সঙ্কটজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম ও কৃষিবিদ আফতাব উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, মাওলানা খলিলুর রহমান, জিএম রুহুল আমীন, মাওলানা নুরুল ইসলাম আল আমিন, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, দফতর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, আলহাজ মনির হোসেন, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া,অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার, মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, সহকারি দফতর সম্পাদক হাফেজ মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, আব্দুল আউয়াল মজুমদার প্রমূখ।
সম্মেলনে ৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন চরমোনাই পীর। কর্মসূচী ১. নির্বাচন কমিশন একতরফা তফসিল ঘোষণা করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করা হবে। ২.তফসিল ঘোষণার পরের দিন সারাদেশে প্রতিটি জেলা ও মহানগরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল। ৩. আন্দোলনরত অন্যান্য বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সকল কর্মসূচীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন। ৪. জাতীয় সংকট নিরসনে সকল রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের প্রতিনিধিগণকে নিয়ে আগামী ২০ শে নভেম্বর’২৩ সোমবার ঢাকায় জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবি গুলো হলো : ১. অনতিবিলম্বে চলতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সকল প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আলোচনা করেনির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ২.রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলের সকল নেতা-কর্মী এবং ওলামায়ে কেরামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতির মধ্যস্থতায় সংলাপের আয়োজন করতে হবে। ৩.দলান্ধ এই নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করতে হবে। ৪.রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড তৈরির আগে কোন অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা করা যাবে না।
লিখিত বক্তব্যে চরমোনাই পীর বলেন, রাষ্ট্রীয় জনগুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারী দল আওয়ামী লীগের সীমাহীন গোয়ার্তুমি। নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে সরকার পরিবর্তনে জনমতের মুখাপেক্ষি হওয়া আধুনিক বিশ্বের সর্বজন স্বীকৃত একটি রীতি। এই রীতি বাস্তবায়নে নির্বাচনকে অবাধ-নিরপেক্ষ করা অতীব জরুরী। বোধহীন স্বৈরাচার ছাড়া আর কেউ-ই এই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বয়ংক্রিয় ও কার্যকর করা যায় নাই। যারফলে নির্বাচনকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাড়ায়। যার প্রেক্ষিতে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ১৯৯৬ সালে দেশে সার্বজনীন রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তার সুফলও জাতি পেয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সার্বজনীন সমর্থিত এই ব্যবস্থাকে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা করেই তারা ক্যান্ত হয় নাই বরং এই ইস্যুতে তাদের আচরণ, কথাবার্তা চুড়ান্তমাত্রায় অমার্জিত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও নির্লজ্জ। যে কারণে আজকে সংকটজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
২. স্বাধীনতা আক্ষরিত অর্থেই পরাহত। আধুনিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার অর্থ হলো, রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে থাকবে না থাকবে তা নির্ভর করে জনগণের রায়ের উপর। এখানে সংবিধান পর্যšত্ম বৈধতা পায় জনগনের পরম অভিপ্রায় থাকার কারণে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দেশের পরিস্থিতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, জনগণের সেই ক্ষমতা আর নাই। এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে থাকবে না থাকবে সেই প্রশ্নে বিদেশি শক্তির অবস্থানই প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠেছে। অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছে যে, আমেরিকা-ভারতের মতো দু’টি দেশের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় এবং সেই আলোচনা রাজনীতিতে গুরুত্ববহণ করে। স্বাধীনতার জন্য এরচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কিছু হতে পারে না। এদেশকে পরাধিনতার কালো মেঘে আচ্ছন্ন করার এ দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে। ৩. সমঝোতার সকল পথ রম্নদ্ধ রাজনীতিকে বলা হয় “আর্ট অফ কম্প্রোমাইজ”। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে সেই কম্প্রোমাইজেশন ও বোঝাপড়া, সমঝোতার জায়গা রম্নদ্ধ হয়ে গেছে। এর দায়ও বর্তমান সরকারের। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, জানোয়ারদের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা নাই, যখন দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অধিকাংশকে গ্রেফতার করা হয়, যখন প্রতিবাদ-সমাবেশে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় তখন রাজনীতির প্রধান উপাদান আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়া ও সমঝোতার পথ আর খোলা থাকে না। তাদের ক্ষমতার স্বার্থে বিরোধী দলসমূহকে তাদের সব একগুঁয়েমী মেনে নিতে হবে। কোন বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না। ইতিহাস সাক্ষী আলোচনার পথ রম্নদ্ধ হলেই “পঁচিশের কালো রাত” তৈরি হয়।
৪.আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল থেকে কার্যত উগ্রবাদী দলে পরিনত হয়েছে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচির সাথে তালমিলিয়ে আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিচ্ছে এবং সেইসব কর্মসূচির নামের সাথে “শান্তি” থাকলেও কার্যত তা সন্ত্রাসের কর্মসূচিতে পরিনত হয়েছে। লাঠি নিয়ে মহড়া, যাকে তাকে তলস্নাশি করা, আতংক তৈরি করার যে কাজ আওয়ামী লীগ করছে তা ৭১ এর শান্তিবাহিনীর কথাই মনে করিয়ে দেয়। ৫.কলংকের নিন্মস্তরে পৌছে গেছে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ অতীতেও বিভিন্ন সময়ে লজ্জা ও বিবেক বর্জিত নির্বাচন কমিশন দেখেছে। কিন্তু বর্তমান কমিশন লজ্জা,বিবেক ও মেরুদণ্ডহীণতার সাপেক্ষে অতীতের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের এহেন পরিস্থিতিতেও তারা তফসিল নিয়ে এগুচ্ছে। তারা ক্ষমতাসীনদের মনোরঞ্জনে কাজ করছে। ৬.স্বকীয়তা ও আদর্শ হারানো জনপ্রশাসন জনপ্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনী কোন দলের হয় না, এমনকি কোন সরকারেরও হয় না। তারা হয় রাষ্ট্রের। তারা সরকারের অধিনে কাজ কবে বটে তবে নিজেদের সততা, নীতি ও আদর্শ দিয়ে সর্বদা জনতার স্বার্থেই তারা কাজ করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা এক হতাশাজনক চিত্র দেখতে পাচ্ছি। তারা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের অন্যায় নির্দেশ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
৭.দেশের অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য ও সুশাসনের চুড়ান্ত অবনতি এ বিষয়ে নতুন করে আর কিছু বলতে চাই না। রিজার্ভ পরিস্থিতি, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের দুর্নীতি, লুটপাট, দ্রব্যমূল্য, টাকা পাচার, অদক্ষতা ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর আলাপ আলোচনা হয়েছে। আমরাও বারংবার এসব নিয়ে আন্দোলন করেছি। এখন নতুন করে এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। এক কথায় বলতে গেলে সুশাসনের অভাবে দেশের অর্থনীতি আজ চরম বিপর্যস্ত। এই যখন পরিস্থিতি, তখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তার দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছে। আমরা দেশের আইন-শৃংখলা মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এসেছি। নানাভাবে আমরা সরকার ও সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছি, চাপপ্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আপনারা এক গণবিস্ফোরণ দেখেছেন। সেখানে আমরা সরকারকে সতর্ক করে ১০ নভেম্বরের মধ্যে পদত্যাগ করার আহবান করেছিলাম। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা ত্যাগের কথা বলেছিলাম। আপনারা জানেন, ইসলামের রীতি হলো, কোন শক্ত অবস্থান নেয়ার আগে সংশিস্নষ্ট পক্ষকে সতর্ক করতে হয়, সময় দিতে হয়। আমরাও তা দিয়েছিলাম।
গার্মেন্টস শ্রমিক প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, গাজীপুর, সাভারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গার্মেন্টস শ্রমিকগণ ন্যায্য বেতন-ভাতার দাবীতে আন্দোলন করছেন। সরকার শ্রমিকদের রুটি-রুজির ন্যায্য আন্দোলন দমনেও র্যাব, পুলিশ, বিজিবি দিয়ে গুলি চালাচ্ছে। কাদুনে গ্যাস, লাঠিচার্জ করছে। মামলা-হামলা ও গ্রেফতার করছে। এমনকি দলীয় ক্যাডার দিয়েও শ্রমিকদের নির্যাতন করছে। পুলিশের গুলিতে এ পর্যন্ত ৩জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং বহু শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের এহেন নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সরকার বলছে তারা শ্রমিকদের ৫৬% বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির নিরিখে হিসাব করলে দেখা যায় শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি বরং আরো কমেছে। ৫ বছর পূর্বে ২০১৮ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরী সমন্বয় করে সর্বনিম্ন মজুরী করা হয়েছিল ৮৫০০/- টাকা। তখন প্রতি মার্কিন ডলারের মূল ছিল ৮৩ টাকা। ডলারের হিসাবে শ্রমিকরা তখন বেতন পেত প্রায় ১০৩ ডলার। এখন সর্বনিম্ন মজুরী ঘোষণা করা হয়েছে ১২,৫০০/- টাকা। বর্তমান বাজারে (গত কালকের প্রত্রিকায় প্রকাশিত) মার্কিন ডলার ১২৭ টাকা। অতএব ডলারের হিসাবে শ্রমিকরা এখন পাবেন মাত্র ৯৮ ডলার।তার মানে ৫ বছর আগে শ্রমিকরা যে বেতন পেতেন সার্বিক বিবেচনায় এখন পাবেন তার চেয়ে প্রায় ৫ ডলার কম। অতএব এটা কিছুতেই ইনসাফ হতে পারে না। আমরা শ্রমিকদের নির্যাতন বন্ধ করে সরকার এবং মালিক পক্ষের প্রতি ইনসাফপূর্ণ মজুরী ঘোষণার আহবান করছি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, আমরা আগেও বারংবার বলেছি যে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন জাতীয় নির্বাচনজনগণ মেনে নিবে না। কারণ নির্বাচনকালীণ সরকার হিসেবে যে আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকার দরকার তা এই সরকারের নাই। এবং এটা বারংবার প্রমানিত হয়েছে। আমরা বিগত সময়গুলোতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে তাদের শঠতা, প্রতারণা ও সহিংসতা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের চরিত্র যে পরির্বতন হবে না সর্বশেষ লক্ষীপুর ও বি-বাড়িয়ায় হয়ে যাওয়া দু’টি উপ-নির্বাচনও এর প্রমাণ। সরকার জনমত উপেক্ষা করে বারংবার সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি, সংবিধানের গ্রহণ ও মান্যতা তৈরিই হয় “জনগনের অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি” এর কারণে। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনা অংশে যা বলা হয়েছে তাতে এই সংবিধানের যে অংশে যাই থাকুক না কেন, কোন অবস্থাতেই জনগনের ইচ্ছার বিরম্নদ্ধে গিয়ে কিছু করার ইখতেয়ার এই সংবিধান কাউকে দেয় না। তারপরেও সংবিধানের দোহাই দেয়া নির্লজ্জ মতলববাজি ছাড়া আর কিছু না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরনের জন্য নির্বাচনকালীন “জাতীয় সরকার” এর ধারণা পেশ করেছে। জাতীয় সরকারের ধারণা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিদ্যমান সংবিধানের মান্যতাও রক্ষা করা যাবে একই সাথে চলতি সংকট থেকেও উত্তরণ হওয়া যাবে। আর জনগনের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটাতে যদি সংবিধানের কোন সংশোধনীও প্রয়োজন হয়, সে সুযোগও রয়েছে। অতীতে কারণে অকারণে ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।
দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, রাষ্ট্রপতি এবং নির্বাচন কমিশন কোন দলীয় বা সরকারী প্রতিষ্ঠান নয়। এগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকার সংবিধানের জপ করে, অথচ এই দুই প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান যে ক্ষমতা দিয়েছে তারও যদি অনুসরণ করা হয় তাহলেও জাতি সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে। অথচ আমরা কি দেখলাম? সিইসি রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো করেই কথা বলছেন। দলান্ধ নির্বাচন কমিশন ক্ষামাতাসীনদের চাহিদামত তড়িঘড়ি করে বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে একটি নির্বাচনী তফসীল ঘোষণার পায়তারা করছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে দিয়ে পরিস্কার করে বলতে চাই, আপনারা জাতীয় নির্বাচনের কোন তফসিল ঘোষণা করবেন না। আপনাদের প্রতি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের কোন আস্থা নেই। আপনারা দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট আর বাড়াবেন না। তফসিল ঘোষণা করলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় আপনাদেরকেই নিতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমের মালিক-সম্পাদকগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নিজেই বলেছেন, দেশে নির্বাচন করার মতো কাঙ্খিত পরিবেশ তৈরী হয়নি। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের কাঙ্খিত পরিবেশ কখনোই হবে না। অতএব আপনারা পদত্যাগ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীর সুযোগ সৃষ্টি করুন। ৩ নভেম্বরের সমাবেশ থেকে দাবী করেছিলাম, বিরোধী দলের নেতাদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতি সবাইকে নিয়ে সংলাপে বসুন। তিনি সেই দাবীর প্রতি কর্ণপাত করেননি। বর্তমান রাষ্ট্রপতির নিয়োগের সময় তিনি যে ধরণের কথাবার্তা বলেছেন, তাতে তার আওয়ামী আনুগত্য প্রকাশিত হয়েছে। তারপরেও দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল পদের অধিকারী হয়ে তার এই দলান্ধতা অন্ধকারকে আরো নিকষ করেছে। আমরা জাতিকে অন্ধকারে পথ হারাতে দিতে পারি না।