রহমত নিউজ ডেস্ক 11 November, 2023 11:49 AM
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং তৈরি পোশাকের একটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। মামলা দুটিতে অজ্ঞাতনামা ১১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চলে একটি কারখানার বাইরে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ একটি মামলা করেন। এই মামলায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলায় ওই ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আজিজুল হক (২৬), মো. রনি (২৮), ফেরদৌস আলম (৩৫), নুর আলম (৩০), মো. হেলাল (২৬), ওবাইদুল্লা খান (২০), মো. হানিফ (৩১), মো. মাসুদ রানা (৪৭), আসাদুজ্জামান আসাদ (২০), মো. আবু সাইদ (২৩) ও মো. খলিল (৩৫)।
মামলার বাদী আবু সাঈদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনাবাড়ী এলাকায় তুষুকা কারখানার ভেতর শ্রমিকেরা ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এ সময় ওই কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থাকা গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের (ডিসি) গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা সবাই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আজ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলা ছাড়াও গত বুধবার কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ইসলাম গ্রুপের একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের পর ভাঙচুরের ঘটনায় কাশিমপুর থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। তবে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। কাশিমপুর থানার এসআই ছানির হাসান খানের করা মামলায় ছয় থেকে সাত হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এদিকে শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার ১৪টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে কারখানাগুলোর সামনে বন্ধের নোটিশ সাঁটানো দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আজ ছুটির দিনে গাজীপুরের বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ ছিল। সেগুলো আগামীকাল শনিবার খোলা হতে পারে।
২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পোশাকশ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। এরপর গত মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ঘোষিত মজুরি প্রত্যাখ্যান করে বুধ ও বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের সময় কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও শ্রমিক-পুলিশ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গত বুধবার প্রাণ হারান একজন নারী শ্রমিক। গতকাল ছুটির দিনে গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ হয়নি। গত বুধবার শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় ইসলাম গ্রুপের নারী শ্রমিক মোসা. আঞ্জুয়ারা খাতুন মারা যান।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. রেজাউল বলেন, গাজীপুরে ২ হাজার ২৩১টি পোশাক কারখানা আছে। এর মধ্যে আজ ২৪৫টি কারখানা চালু ছিল। বন্ধ ছিল ১ হাজার ৯৮৬টি। এর মধ্যে ১৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা হয়তো কারখানা চালু করবে।
কোনাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তুষুকা কারখানা। কারখানাটির সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তুষুকা জিন্স লি., তুষুকা ট্রাউজার্স লি., তুষুকা প্রসেসিং লি., তুষুকা প্যাকেজিং লি. ও নিডেল আর্ট এমব্রয়ডারি লিমিটেডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে ,বৃহস্পতিবার অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেন, কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালান। এমতাবস্থায় কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কারখানার মহাব্যবস্থাপক মাসুম হোসেন বলেন, অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া কোনাবাড়ীর আমবাগ রোডের এমএম নিটওয়্যার লিমিটেড ও কোনাবাড়ী জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের কারখানার তিনটি কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: ঢাকা গাজীপুর মহানগর