| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে : জাতিসংঘ


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে : জাতিসংঘ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     07 November, 2023     01:29 PM    


জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা জোরদার হওয়ার সাথে সাথে গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টা পার হওয়ার সাথে সাথে “মানবিক অস্ত্রবিরতির” প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি বাড়ছে। এরআগে এক যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলে, গাজা এবং ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ড “ভয়াবহ”। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা জোরদার হয়েছে। তারা দাবি করছে যে, তারা হামাসের অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা করছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু কমানোর চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে এবিসি নিউজকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েলের হাতে গাজার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে।

সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় হামাসের সাড়ে চারশো স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার স্থানও রয়েছে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার ১০৪ জন শিশু রয়েছে। হামাসের হামলায় ১৪শ ইসরায়েলি নিহত এবং ২০০ জনের বেশি জনকে জিম্মি করার পর গাজায় বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

গাজার “সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব” ইসরায়েলের হবে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলে গাজা উপত্যকার “সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব” “অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য” ইসরায়েলের হাতে থাকবে। মার্কিন চ্যানেল এবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।সেখানে তিনি জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার শর্ত ছাড়া অস্ত্রবিরতির আহ্বান নাকচ করে দিয়েছেন। গত সাতই অক্টোবর হামাস জিম্মিদের আটক করেছিল। তবে মানবিক বিরতি সম্ভব হতে পারে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কৌশলগত বিরতির কথা যদি হয় যে- এক ঘণ্টা এখানে, এক ঘণ্টা সেখানে- এর আগেও আমরা এটা করেছি। আমার মনে হয় আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখবো যাতে করে পণ্য-সামগ্রী, মানবিক পণ্য প্রবেশ করতে দেয়া হয় এবং আমাদের জিম্মি বা কোন এক জিম্মিকে ছেড়ে দেয়া হয়।

যুদ্ধের মাস পূর্তি, হাজার হাজার মানুষ নিহত
বিবিসির লাইভ রিপোর্টার স্যাম হ্যানকক জানান, সোমবার হামাস ও ইসরায়েলের পরস্পরকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরুর মাসপূর্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  ভাষণ দেয়ার সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গাজা খুব দ্রুত শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। এই উপত্যকার পরিস্থিতি মানবিক সংকটের তুলনায় বেশি কিছু হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটি এখন মানবতার সংকটের পরিণত হয়েছে। শত শত মেয়ে ও ছেলে শিশু হয় নিহত হয়েছে নাহলে আহত হয়েছে। আবারো জরুরী অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান তিনি।

তার এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন। তিনি তার এক্স (সাবেক টুইটার) এ দেয়া পোস্টে জাতিসংঘের প্রধানকে ট্যাগ করে লিখেছেন, তোমার লজ্জা হওয়া উচিত। ৩০ জনেরও বেশি অপ্রাপ্তবয়স্ক যাদের মধ্যে নয় মাস বয়সী শিশুও রয়েছে যারা তাদের বাবা-মাকে চোখের সামনে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করতে দেখেছে- তাদেরকে গাজা উপত্যকায় জোর করে আটকে রাখা হয়েছে। গাজার সমস্যা হচ্ছে হামাস। সন্ত্রাসী সংগঠন নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের পরিচালিত হামলা নয়। গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর পঞ্চম সপ্তাহ চলছে। কিন্তু এরপর এটি থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গাজায় থাকা হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরইমধ্যে ১০ হাজার ২২ জন মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে চার হাজার ১০৪ জন শিশু রয়েছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতের মানবিক বিরতির আহ্বান
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত গাজায় একটি মানবিক বিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার এক বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত নিকোলা ডি রিভিয়ের এ ধরণের বিরতি স্থায়ী হওয়া উচিত এবং এটি অস্ত্রবিরতির দিকে এগিয়ে নেয়া উচিত। বৃহস্পতিবার প্যারিসে একটি মানবিক কনফারেন্স করবে ফ্রান্স যেখানে গাজার জন্য আরো সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে। তবে তার এই অবস্থানের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো। তারা বলছে, অস্ত্র বিরতি শুধু হামাসের জন্যই লাভজনক হবে। এরআগে সোমবার সকালে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না যে, সাধারণ একটি অস্ত্র বিরতি এই সময়ের জন্য উপযুক্ত।

ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে গোলাগুলি
জাতিসংঘের মহাসচিব এরইমধ্যে সতর্ক করে বলেছেন যে, যুদ্ধ আসলে গাজা উপত্যকা ছাড়িয়ে তা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়ছে। লেবাননের সাথে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে যেখানে আন্তঃসীমান্ত গোলা ছোড়াছুড়ি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে সেখানে সোমবারও সংঘর্ষ হয়েছে।এরআগে হামাস বলেছে, তারা লেবানন থেকে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ১৬টি রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রকেট ছোড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে এখনো পর্যন্ত ৩০টি রকেট শনাক্ত করা হয়েছে। হামলার স্থান লক্ষ্য করে “পাল্টা গোলা ছুড়েছে তারা।

গাজায় ৩০টির কম লরি প্রবেশ করেছে
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, সোমবার মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ৩০টির কম লরি গাজায় প্রবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে সাময়িক মানবিক বিরতি নিয়ে আলোচনা করবে।  এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে না যে, অস্ত্রবিরতির এটা উপযুক্ত সময়। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজার চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন কমপক্ষে শত শত লরি দরকার।

মানবিক সহায়তার আর্জি জাতিসংঘের
সোমবার ফিলিস্তিনের লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এক দশমিক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মানবিক সহায়তার আর্জি জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই অর্থ গাজা উপত্যকার পুরো জনসংখ্যা এবং পূর্ব জেরুসালেম সহ পশ্চিম তীরের পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনির সহায়তায় ব্যয় করা হবে।রাফাহ ক্রসিং পার হয়ে মিশর থেকে গাজায় কিছু পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করলেও, সেগুলো আসলে পর্যাপ্ত নয়। বিন্দু পরিমাণ সহায়তা সাগর পরিমাণ চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ত্রাণ বাহী পরিবহন গাজায় পূর্ণ মাত্রায় প্রবেশ করতে দেয়া উচিত। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময়ে গাজায় মাত্র ৪০০টি ট্রাক প্রবেশ করেছে যেখানে যুদ্ধ শুরু আগে স্বাভাবিক সময়েই প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক ট্রাক প্রবেশ করতো। জ্বালানি ছাড়া ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতক এবং লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীরা মারা যাবেন। এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজায় আরো বেশি পরিমাণ জ্বালানি সরবরাহের আহ্বান জানান তিনি।

ইসরায়েলিদের ৩০ দিন পূর্তি পালন
জেরুসালেমে থাকা বিবিসির সংবাদদাতা জো ইনউড বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সাতই অক্টোবরের হামলার ৩০ দিন পূর্তির সময় ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান পশ্চিম দেয়ালের সামনে জড়ো হয়েছিল শত শত ইসরায়েলি। তারা নিহতদের স্মরণে প্রত্যেকের জন্য একটি করে মোট ১৪০০টি মোমবাতি জ্বালায়। একই সাথে ইহুদির শোক প্রার্থনা কাদ্দিস পাঠ করে তারা। তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন বেনি গাঁৎজ যিনি বর্তমানে ইসরায়েলের নেতৃস্থানীয় একজন রাজনীতিবিদ। এরআগে তিনি দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কট্টর সমালোচক তিনি। বর্তমানে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। অনেক ইহুদি ঐতিহ্যে, ৩০ দিন হচ্ছে শোক কাটিয়ে ওঠার শেষ দিন। কিন্তু সোমবার রাতে তারা যেভাবে কান্না করছিলো তাতে এই জাতির শোক কাটিয়ে ওঠার কোন চিহ্ন ছিল না। একই সাথে তারা গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তা শেষ করারও কোন আভাস মেলেনি।