রহমত নিউজ ডেস্ক 31 October, 2023 08:52 AM
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে এই যুদ্ধ ও নারী-শিশু হত্যাকান্ড বন্ধ করার এবং সেবাখাত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবাধিকারের কথা বলা হয়। কিন্ত এখানে (ফিলিস্তিনে) প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। এই হত্যাকান্ড, যুদ্ধ আমরা চাই না। আমাদের কথা হচ্ছে ফিলিস্তিনের ন্যয্য দাবি যেন মেনে নেওয়া হয়। তাদের রাষ্ট্র যেন তারা ফেরত পায়। সেটা আমরা চাই।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে উত্থাপিত ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। এরআগে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলী দখলদার বাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতীয় সংসদে এ প্রস্তাব তোলেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, দলটির চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রস্তাবটি সংসদে সর্বসন্মতভাবে গৃহীত হয়। প্রস্তাবে বলা হয়- সংসদের অভিমত এই যে “বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইল কতৃর্ক পরিচালিত নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে এবং এই হত্যাকান্ড বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মানবাধিকারের চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এই সংসদ ফিলিস্তিনে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের র সকল বিবেকবান জনগণকে রক্ষা এবং তাদের ন্যায়সঙ্গত স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকরভাবে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।ফিলিস্তিনে অনবরত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। নারী ও শিশু সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । আজকে সেখানে কী অবস্থা? আমরা মানবাধিকারের কথা শুনি। অনেক কিছু শুনি। আমাদের ফিলিস্তিনের জনগণ সেখানে অমানবিক জীবনযাপন করছে। সেখানে হাসপাতালকে নিরাপদ মনে করে তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানেই ইসরাইলী বাহিনী এয়ার অ্যাটাক করে, বোম্বিং করে নারী-শিশুকে হত্যা করে একটা জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এর নিন্দার ভাষা নেই। হাসপাতালের মত জায়গায় তা কী করে হামলা করতে পারলো? মানুষ হত্যা করতে পারলো? এর আগেও কিন্তু এভাবে হত্যাকান্ড চালিয়েছে। নারী-শিশু, অন্তঃসত্ত্বা হত্যা করেছে। শিশুরা বড় হলে নাকি যোদ্ধা হয়ে যায় তাই তাদের হত্যা। আমি যখন যে ফোরামে গিয়েছি, এসব হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছি। এই ধরনের ঘটনা আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করা একজন মানুষ হিসেবে, মা হিসেবে প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব। এই হত্যাকান্ড ও যুদ্ধ আমরা চাই না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে রয়েছে, আমরা বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে ঔষধ, খাদ্য ও নারী-শিশুদের জন্য পণ্য সামগ্রী পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটা সেটা ওখানে পৌছানোর সুযোগ নেই। আমরা মিশরে পাঠিয়ৈছি। তারা গ্রহণ করেছে। সেখান থেকে পৌঁছে দেবে। সব থেকে দুর্ভাগ্য যে সেখানে খাবার ঔষধ, কোন কিছুই দিতে দিচ্ছে না। চারিদিকে ইসরাইলী বাহিনী বন্ধ করে রেখেছে। এটা কোন ধরনের কথা! যে কোন যুদ্ধে নারী শিশু ও হাসপাতালের ওপর এভাবে হামলা হয় না। খাবার বন্ধ হয় না। কিন্তু আজকে সেখানে খাবার-পানিসহ সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক যন্ত্রণা দেয়া হচ্ছে। সেখানে মানুষ হাহাকার করছে। এই ঘটনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, আমরা চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকতে। জাতিসংঘ থেকে যখন যে চেষ্টা হয় এবং কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হত্যাকান্ড হলে তার নিন্দা জানাই। এটাই আমাদের নীতি। আরব লীগের সঙ্গে আমরা স্পন্সর হয়ে জাতিসংঘে, যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে ১২০ দেশ আমাদের সমর্থন দিয়েছে। আমরা চাই অন্তত সেবাখাত খোলা হোক। যাতে করে ওখানকার মানুষগুলি বাঁচতে পারে। সেই সেবাখাতটা বন্ধ করে কষ্ট দিচ্ছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনের জনগনের ওপর যা ঘটাচ্ছে, তা কখনো মেনে নেয়া যায় না মুসলিম বিশ্বের সকলকে এক হয়ে এই অপরাধের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কীভাবে ফিলিস্তিনের জনগনের পাশে দাঁড়ানো যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি। বেলজিয়াম সফরে গিয়ে আমার ভাষণে এই বিষয়টি তুলেছি। সেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে আমি বলেছি, আপনারা আর যাই করেন যুদ্ধ বন্ধ করেন। যুদ্ধ মানুষের মঙ্গল আনে না। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। অস্ত্র প্রতিযোগিতা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। নারী-শিশুদের হত্যাকান্ড বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। অস্ত্র প্রতিযোগিতার টাকা শিশুদের শিক্ষা ও চিকিৎসায় ব্যয় করেন। তাহলে বিশ্বের মানুষের কষ্ট থাকবে না। ফিলিস্তিনের আগে অনেক জায়গা ছিলো কিন্তু তা দখল করতে করতে এখন ক্ষুদ্র একটি জায়গা রয়েছে, এটা বড় দেশ ছিলো, ধীরে ধীরে তা দখল করতে করতে এখন ক্ষুদ্র একটি অংশ তাদের। তারপরও একটি প্রস্তাব ছিলো ‘টু স্টেট’ ফর্মুলা। এটাও তারা মানছেনা। আমাদের কথা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের ন্যায্য দাবি যেন মেনে নেয়া হয়। তাদের রাষ্ট্র যেন তারা ফেরত পায়। সেটা আমরা চাই। সেবাটা খুলে দেয়া উচিত। শিশুদের এভাবে কষ্ট দেয়া এটা কখনোই গ্রহণ করতে পারি না।