রহমত নিউজ 24 October, 2023 10:42 AM
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আনীত প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংলাপ ও আলোচনা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবাধিকারের সমস্ত মৌলিক নীতিমালা, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং যুদ্ধের সাধারন নিয়ম লঙ্ঘন করে গাজায় নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরায়েলের চলমান হামলা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁঢ়ে দিয়েছে।
আজ (২৪ অক্টোবর) জাতিসংঘের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ দিবসের প্রাক্কালে এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ কার্যকর হওয়ার বার্ষিকী উপলক্ষে ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যসহ এর বেশিরভাগ স্বাক্ষরকারীর দ্বারা প্রতিষ্ঠার নথি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনে অস্তিত্ব লাভ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ এবং এর বিশেষায়িত সংস্থাগুলি বহু ফ্রন্টে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, যেমন উপনিবেশ রহিতকরণ, শান্তিরক্ষা, মানবিক কার্যক্রম, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, এমডিজি এবং চলমান এসডিজি অর্জন, মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমুখি প্রভাব মোকাবেলা। তবে, বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে যেমন বিশ্বের অনেক জায়গায় আমরা সশস্ত্র সংঘাত প্রত্যক্ষ করছি এবং সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছি, তেমনিভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসানেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই। জাতিসংঘের ৭৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে, আমি জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি এবং আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারস্পারিক আস্থা ও বৈশ্বিক সংহতি গড়ে তোলা এবং শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতির লক্ষ্যে বহুপাক্ষিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নেতৃত্ব ও নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি।
‘শান্তির সংস্কৃতি’র প্রবক্তা হিসেবে, বাংলাদেশ আঞ্চলিক অখ-তা এবং অপর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ বজায় রাখি। একইভাবে শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখার স্বার্থে মিয়ানমারের নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের দশ লাখেরও বেশি নাগরিককে বাংলাদেশ অস্থায়িভাবে আশ্রয় দিয়েছে, তারপর থেকে রোহিঙ্গা সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে আমরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতি অব্যাহত রেখেছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তিমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমরা কাজ করছি, আমরা জাতিসংঘ এবং বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি, সাম্য, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন ও সহযোগিতার সাথে আমাদের সম্পৃক্ততাকে মূল নীতি হিসেবে অনুসরণ করে যাচ্ছি। আমরা সকল অংশীজনদের সাথে অংশীদারিত্বে শান্তিরক্ষা এবং শান্তি-প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের অত্যন্ত মূল্যবান কাজের অগ্রভাগে রয়েছি এবং থাকব।
বহুপাক্ষিকতার দঢ় সমর্থক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘের সাথে থাকবো। বৈশ্বিক সুশাসনের প্রতীকের আসনে বসিয়ে আমরা জাতিসংঘকে দেখতে চাই, যা আমাদেরকে সামনে থেকে প্রেরণা দিবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিমোহভাবে গোঠা বিশ্বেও প্রত্যাশা পূরণে। আসুন, আমরা আমাদের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অংশীদারিত্ব, সহযোগিতা ও সংহতির ভিত্তিতে একটি আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতিসংঘ গড়তে এই উপলক্ষ্যকে ব্যবহার করি।