| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘শীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশ নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে’


‘শীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশ নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে’


রহমত নিউজ     03 October, 2023     09:59 AM    


আগামী শীতে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি নিষ্ক্রিয় থাকবে। কারণ বেসরকারি খাত থেকে জাতীয় গ্রিডে আরো বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে, যা সরকারের ক্যাপাসিটি পেমেন্টর বাধ্যবাধকতা বাড়িয়ে তুলবে। এটি এমন এক সময়ে সামনে এসেছে, যখন এরই মধ্যে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে সরকারের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার।

বিদ্যুৎ বিভাগের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারসহ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২৭ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট, যেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট উৎপন্ন হয়।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) অফিসিয়াল তথ্যানুযায়ী, দেশে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ১৪ হাজার ২১ মেগাওয়াট উৎপাদন করায় ১১৩ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে অতিরিক্ত চাহিদা মেটানো হয়েছে। এর মানে অর্ধেক বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছে, অন্যদিকে লোডশেডিংও অনিবার্য।

বিদ্যুৎ শিল্পের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের মতে, আগামী শীতে উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে এবং আগামী কয়েক মাসে বেসরকারি খাতের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে আরো বেশি বিদ্যুত আসবে এবং স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করতে পারে, উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ শীত মৌসুমে প্রায় ৭০ শতাংশের মতো চাহিদা কমে যায়। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট (যার মধ্যে ৬২০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ইতোমধ্যে গ্রিডে এসেছে), মেঘনাঘাটের রিলায়েন্স পাওয়ার এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭১৮ মেগাওয়াট, এলএনজিভিত্তিক জিই-সামিট মেঘনাঘাট-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৯০ মেগাওয়াট এবং মেঘনাঘাটে এলএনজিভিত্তিক ইউনিক গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই প্ল্যান্টগুলোর স্পনসররা সরকারকে রাজি করানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। যাতে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্ল্যান্ট চালু করার অনুমতি দেয়। কারণ, তাদের সবগুলোই উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হলেও গ্যাস সংকটের কারণে সেগুলো চালু করতে দেওয়া হচ্ছে না।

আদানি গ্রুপেরি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট এবং রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট সহ সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কিছু বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে আরো বিদ্যুত ইতোমধ্যেই গ্রিডে এসেছে। গত শীতে চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে এসেছিল।

বিপিডিবি রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরে উৎপাদন ৯ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট রেকর্ড করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাহিদা দ্রুত গতিতে না বাড়ায় আগামী শীতে উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটের নিচে থাকবে।

বিপিডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদিও ৭০ শতাংশ বিদ্যুত কেন্দ্র নিষ্ক্রিয় থাকবে, তবুও সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি অনুযায়ী বিনিয়োগকারীরা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে তাদের পেমেন্ট পাবেন। সরকার ইতোমধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের পাওনা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

বিদ্যুত বিভাগ এবং বিপিডিবি-র কর্মকর্তারা বলেছেন, বর্তমানে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইন্ডেপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস (আইপিপিএস) -এর মোট পাওনা সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩৫ হাজার কোটি টাকার সমতুল্য)। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, আইপিপিরা তাদের বিল নিয়ে দ্বৈত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। প্রথমত, তারা সময়মতো বিল পাচ্ছেন না এবং দ্বিতীয়ত, তারা আংশিক বিল পাচ্ছেন। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে প্রদানকৃত অর্থও বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারছেন না।

বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিডিবিকে তার খরচ মেটাতে প্রতিদিন গড়ে ২০ মিলিয়ন ডলার দেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিডিবি’র আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে আমরা প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাচ্ছি না।’

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশ বিদ্যুৎ খাতে সমস্যার দিকে ঝুঁকছে এবং এটি মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়াতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলবে।

বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, গ্রীষ্মকালে ৫০ শতাংশ এবং শীতকালে ৭০ শতাংশ বিদ্যুত উদ্বৃত্ত থাকলে দেশ এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হবে। বিদ্যুৎ খাতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। কারণ বেসরকারি খাতের ক্যাপাসিটি পেমেন্টের চাপ বাড়তে থাকবে এবং প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি বাড়বে। পরিশেষে, এটি জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেবে। এমতাবস্থায় মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে সরকারকে প্রথমে স্বীকার করতে হবে চাহিদা বিবেচনা না করেই বেসরকারি খাতকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমতি দিয়ে ভুল করেছে এবং তারপর বর্তমান নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের চাপ আসছে বলে পরিস্থিতি সামলানো আরো কঠিন হবে। আর যদি তা করা হয়, তাহলে তা মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি।