| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে’


‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে’


রহমত নিউজ ডেস্ক     27 September, 2023     11:12 AM    


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক হামলাকারীরা শাস্তির পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পেয়েছে। ফলে এই ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা উদ্বেগের। আজ আমরা বিচার চাইতে আসিনি। কারণ আমরা জানি কোনো বিচার পাবো না। আমরা শুধু নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও জয় বাংলা স্লোগানকে ব্যবহার করে নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল অনিয়মে এদের হাত রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস) ও চিটাগং ইউনিভার্সিটি এক্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের (সিইউজিএন) উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমুর সঞ্চালনায় ও চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য দেন চবিসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আব্দুর রহিম ও সদস্য মারজান আক্তার।

চবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ ও সিইউজেএনের সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ বলেন, গত দুই বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়। হামলাকারীরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মানবিক আচরণ পেয়েছে। মনে রাখবেন, আমরা লিখতে যেমন জানি, প্রতিবাদ জানাতেও জানি।

সমকালের রিজিওনাল সম্পাদক সারোয়ার সুমন বলেন, এ ক্যাম্পাসে আমাদের আবেগ জড়িয়ে আছে। এখানে আমরাও সাংবাদিকতা করেছি। কিন্তু এমন মেরুদণ্ডহীন, নির্লজ্জ প্রশাসন আমরা কখনো দেখিনি। মারজান আক্তারের ঘটনায় কয়েক দফায় তদন্ত কমিটি করেও তারা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বলতে চাই, আপনি বেশিদিন এ চেয়ারে থাকতে পারবেন না। তবে সম্মানের সঙ্গে যাবেন কি-না সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি ছাত্রলীগের মাথা না হয়ে সকল শিক্ষার্থীর মাথা হোন। এমন শাস্তির ব্যবস্থা করুণ, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং চবিসাসের সাবেক সভাপতি শাহাব উদ্দিন নিপু বলেন, আমরা যখন সাংবাদিকতা করেছি। তখন ক্যাম্পাসে অনেক বৈরী সময় ছিল। কিন্তু তখনও এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি সাংবাদিকদের। কিভাবে যে সাংবাদিকতা এ ক্যাম্পাসে এত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তা আমাদের অবাক করে। কেন আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলার ঘটনা ঘটছে? অবিলম্বে এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, আজকে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্র সবার জন্য বিব্রতকর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মোশাররফ শাহের ওপর যে হামলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি মানববন্ধন থেকে সাংবাদিকদের যে দাবি, এর সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা পোষণ করছি। শুধুমাত্র মুখে না বলে, কাজে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক মো. শামছুল ইসলাম বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যখন সংবাদপত্রে দেখি, তখন আমরা খুশি হই। অপরদিকে যখন দেখি এ ক্যাম্পাসে আমাদের সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা শিরোনাম হচ্ছে, তখন আমরা কষ্ট পাই। আমরা জানি না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কষ্ট পায় কি-না। আজকে আমাদের সহকর্মী মোশাররফ ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালের বেডে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। যা কখনোই আমরা আশা করিনি। আজকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়। অথচ যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাদের বিভাগে শাস্তির নোটিশ যায় না। তারা অনায়াসে পরীক্ষায় অংশ নেন। আজকে বহিষ্কৃত, অছাত্ররা হলে অবস্থান করছে। এতে করে আপনাদের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে বলতে চাই, আপনারা যদি সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আপনারাও সাংবাদিকদের রোষানলে পড়বেন।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের ডেপুটি এডিটর তপন চক্রবর্তী বলেন, আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালান, এরপর আপনারা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালান। আপনারা কি সত্যিই ছাত্রলীগ করেন কি-না আপনাদের আচরণ দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। আপনাদের অবস্থা তো শিবিরের চেয়েও খারাপ। আমি উপাচার্য মহোদয়কে বলতে চাই, আপনি কেন তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো সাংবাদিকবান্ধব মানুষ। উনি তো কখনো এ ধরনের ঘটনা মেনে নেবেন না। আমরা জানতে পেরেছি আপনার ছত্রছায়ায় এখানে নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানান অনিয়ম হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারেন, আমরা প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। তাই একদিনের মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব। এ সময় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সবসময়ের মতো আগামী দিনেও সাংবাদিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। 

গত ২৪ সেপ্টেম্বর চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও প্রথম আলোর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সংবাদ সংগ্রহের কাজে গেলে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী তাকে মারধর করেন। আহতাবস্থায় ওই সাংবাদিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বরের একটি চায়ের দোকানের চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে চবি সাংবাদিক সমিতির সদস্য দোস্ত মোহাম্মদের মুখে গরম চা মেরে দেন শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিলে উপর্যপুরি লাথি মারতে থাকেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় দুইজনকে ৬ মাসের বহিষ্কার করলেও ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। এ ধরনের ঘটনার জন্য প্রশাসনের কঠোর বিচারহীনতা সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।