| |
               

মূল পাতা রাজনীতি পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম; কীভাবে দেখছে আ’লীগ-বিএনপি?


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম; কীভাবে দেখছে আ’লীগ-বিএনপি?


রহমত নিউজ ডেস্ক     26 September, 2023     07:58 PM    


সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি পরস্পরকে পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম দিলেও কোনো দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন কর্মসূচিকে মুখে অন্তত গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দু’দলই বলছে যে, এ ধরনের কর্মসূচিতে বিচলিত নন তারা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ ধরণের ঘোষণা নিয়ে তার দল কোনভাবেই বিচলিত নয়। কারণ বিএনপি এ ধরণের আল্টিমেটাম দিয়ে কোনও কিছুই করতে পারে না।

আওয়ামী লীগের আল্টিমেটামের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ক্ষমতাসীনদের এমন ঘোষণাকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না তারা। বিষয়টি নিয়ে খুব একটা কথা বলতেও রাজি হননি তিনি।

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগে আগে এ ধরণের ঘোষণা আসাটাই স্বাভাবিক। এগুলোকে দলগুলোর রাজনীতির মাঠে “বল ঘোরানো”র প্রয়াস বলে মনে করছেন তারা।

সোমবার রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে এক জনসভায় বিএনপিকে ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই ৩৬ দিনের মধ্যে তিনি বিএনপিকে অপরাজনীতি, আগুন সন্ত্রাস, নাশকতার রাজনীতি ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করার আহ্বান জানান। তা না হলে বিএনপির হাত গুড়িয়ে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এর আগে রবিবার নয়াপল্টনে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় বিএনপি। আল্টিমেটাম দেয়ার পর বিএনপি নেতারা বলেন, দাবি মানা না হলে বাঁক পরিবর্তন করার মতো কর্মসূচি আসতে পারে।

দুই দল যেভাবে দেখছে
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির দেয়া আল্টিমেটাম আজ মঙ্গলবারেই শেষ হচ্ছে। তবে তাদের এই হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ ধরণের আল্টিমেটাম তারা(বিএনপি) বিভিন্ন সময়েই দিয়েছে। এগুলো আসলে কী উদ্দেশ্যে দেয় এবং আল্টিমেটামের পর তারা কী বলবে তা চিন্তা না করেই তারা এই ঘোষণা দেয়। জনগণের যেহেতু সমর্থন নাই তাই আল্টিমেটাম দিয়ে তারা কিছু করতে পারে না।

এদিকে আওয়ামী লীগের আল্টিমেটাম নিয়েও অনেকটা একই সুরে কথা বলেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সময় বেঁধে দেয়ার কে? সহিংসতা কে করছে? শান্তি সমাবেশের নামে তারাই তো লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী দিয়ে সহিংসতা করছে।

৩৬ দিনের আল্টিমেটাম কেনো?
সোমবার আল্টিমেটাম দেয়ার সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, রাস্তা বন্ধ করে অবরোধ বা নাশকতার সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। বরং নির্বাচনে অংশগ্রহণের একটি সুযোগ আছে, তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

ফলে একটি প্রশ্ন উঠেছে, ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দেয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ আসলে কী বার্তা দিতে চাইছে। আল্টিমেটাম ঘোষণার ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি জানেন না উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। নির্বাচন এগিয়ে আসবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরেও তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো আলাপ আলোচনা এখনো দলে হয়নি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম অবশ্য বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্যই ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।আমরা মিনিট ঘণ্টা হিসাব করে কর্মসূচি দেই না। এটাই আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। এজন্যই ৩৬ দিন সময় দেয়া হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনের পথে আসুক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সেটাই বলতে চেয়েছি। আওয়ামী লীগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় যাতে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। ৩৬ দিনের আল্টিমেটামের মাধ্যমে বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ‘সদিচ্ছা’ তৈরির তারা চেষ্টা করছেন। একটা তারিখ দেয়া হয়েছে যেটা হয়তো বা নির্বাচনে আসার পথে একটি সুনির্দিষ্ট সময়কে উল্লেখ করা। এর আগেও তো সদিচ্ছার সৃষ্টি হলে, শান্তির পথে ঘোষণা দিলে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। পরে আসলে সেটাও তাদের ইচ্ছা, নির্বাচনের পথে আসুক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সেটাই বলতে চেয়েছি।

নির্বাচনের সময়ের ইঙ্গিত?
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ নাগাদ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে হিসেবে নভেম্বর নাগাদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে সোমবারও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, আগামী মাসে খেলা হবে। আসল খেলা, ফাইনাল খেলা। ফাইনাল খেলা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

তবে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আল্টিমেটাম আসলে নির্বাচন এগিয়ে আসার বিষয়ে কোনো বার্তা দেয় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সেটা পুরোপুরিই নির্বাচন কমিশনের উপরে নির্ভর করবে। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী যখন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে সেসময়েই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।

রাজনীতির মাঠে “বল ঘোরানো”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দল পরস্পরকে যে আল্টিমেটাম দিচ্ছে, দেশের ইতিহাসে এগুলো আসলে নতুন কিছু নয়। বরং ‘৯০ এর দশকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার পর থেকেই এ ধরণের "আল্টিমেটামের রাজনীতি" বাংলাদেশে চলে আসছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরণের সন্ধিক্ষণ চলছে। বাংলাদেশের শক্তিমান দুটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে আল্টিমেটামের এই সংস্কৃতি বজায় রেখে চলেছে, দুই দল যখন খেলে তখন বলতো স্পিন করাতে হয়, বল তো ঘোরাতে হয়। এই বল ঘোরানোর যে রাজনীতি সেটা দুই দলই সমান তালে করতে থাকে। এর মাধ্যমে হয়তো তারা বিএনপিকে বোঝাতে চাইছে যে, বিএনপি আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিক, নইলে ভবিষ্যতে তারা আরো কঠোর হতে পারে।

বরাবর বিরোধী দল আল্টিমেটাম দিয়ে আসলেও সরকারি দলের আল্টিমেটাম দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে গত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। এর মধ্যেই তারা সর্বশেষ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের আল্টিমেটামটি ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, বিএনপি এতো দিন বলেছে যে, এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এখন আওয়ামী লীগ আল্টিমেটাম দিলেও নির্বাচন কীভাবে হবে, বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে বিকল্প উপায়ে নির্বাচন হবে কি না সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। নির্বাচনের যেহেতু খুব বেশি সময় বাকি নেই এবং মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কারণে এ ধরণের কথা চালাচালি এখন আরো বেশি পরিমাণে চলবে। যদিও নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে বলেছে, নির্বাচনের দুই মাস আগে তারা তফসিল ঘোষণা করবে।তারপরও, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারবে না। কারণ এই সরকারের অধীনে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তারা সরকারের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে কোনো কিছু করার মতো অবস্থানে নেই। তফসিল ঘোষণাটা তখনই তারা করবে যখন সরকার থেকে শুভ সংকেত পাবে।