রহমত নিউজ 24 September, 2023 12:42 PM
রাজশাহী বিভাগে ছয়টি জেলায় গত সাড়ে আট মাসে ট্রেনের ধাক্কায় বা কাটা পড়ে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গড়ে প্রতিমাসে নয়জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে পাবনাতে ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন ও রাজশাহীতে ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ১৫ জন। এছাড়া বগুড়া, সান্তাহার ও জয়পুরহাট মিলে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু মৃত্যু অসাবধানতাবসত হয়েছে। তবে দ্রুত রেললাইন পারাপার ছাড়াও আত্মহত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে ও দুর্ঘটনা রোধে রেললাইনে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মনিকা তাবাসুম চৈতির (১৩) মৃত্যু হয়। চৈতি নগরীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার শিক্ষার্থী। ঘটনার দিনে সে পরিবারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। অসাবধানতাবসত তিনি রেললাইনে উঠে গেলে ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরে ১৩ আগস্ট রাজশাহী নগরীর ডেঙ্গাডোবা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে দ্বীপ বাবুর (২৫) মৃত্যু হয়। গত ১১ জুন নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- উপজেলার জামানগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত তছলিমের ছেলে মফিজুর রহমান (৬০) ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০)। গত ১৫ আগস্ট নাটোরের লালপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের (১৪) মৃত্যু হয়। গত ৫ জুলাই নাটোরে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়। গত ২৩ জুলাই নাটোরে ট্রেনে কাটাপড়ে সম্পা খাতুনের (৩০) মৃত্যু হয়। ৬ জুলাই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে কাশিনাথপুরের কাবারীকোলা গ্রামের মাসুদ মুন্সির ছেলে জামিরুল (৩২) ও একই এলাকার জালাল মুন্সির ছেলে বাবু মুন্সি (২৪)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। গত ১৩ মার্চ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দৌড়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে শাহজাহান আলী বাবু (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঈশ্বরদী উপজেলায় ট্রেনের ধাক্কায় মিজান খাঁ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
অপরদিকে চলতি বছরের গত ১ মে জয়পুরহাটে ট্রেনের ধাক্কায় আবুল কাশেমের (৬৫) মৃত্যু হয়। ওই দিন পাঁচবিবি রেলস্টেশন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। গত ২১ জুন জয়পুরহাট শহরের ডাকবাংলা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক যুবকের মৃত্যু হয়। গত ৮ আগস্ট জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকার ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ২৩ জুলাই আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে পঞ্চগড় অভিমুখী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এদিকে, গত ১৯ জুন নওগাঁর আত্রাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শাহিনুর ইসলামের (৩২) মৃত্যু হয়। ভারত থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এছাড়া গত ২৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় আমেনা বেগমেমর (৬৫) মৃত্যু হয়। গত ১৯ মে নাচোলে ট্রেনের ধাক্কায় রুহুল আমিনের (৩৫) মৃত্যু হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর বগুড়ার আদমদীঘিতে ট্রেনে কাটা পড়ে অর্পিতা রানী সাহা (১৯) নামের এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ট্রেনের কাটা পড়ে বা ধাক্কায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ঘটছে। তদন্ত উঠে আসে কারও মৃত্যু রেললাইনে চলাচলের সময় অসাবধানতা বসত ঘটেছে। কেউ বা ট্রেন আসার সময় দ্রুত রেললাইন পারাপারের চেষ্টায় কাটা পড়ে মারা গেছেন। কেউ কেউ অভিমানে বা বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছেন।
বগুড়া রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার সোনাতলা থেকে সান্তাহার, জয়পুরহাট ও নাটোর নিয়ে মোট ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসআই (নি.) হারুনুজ্জামান রোমেল বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুর বিষয়ে মামলা হয়েছে। পাবনাতে ১৩ জন, নাটোরে ১১ জন ও রাজশাহীতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতের সংখ্যা কম। সবাই সচেতন হলে আরো কমে আসবে।
এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: রাজশাহী