| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে যে সমস্যা ভারতের মাছ ব্যবসায়ীদের


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে যে সমস্যা ভারতের মাছ ব্যবসায়ীদের


রহমত নিউজ ডেস্ক     23 September, 2023     02:45 PM    


বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হবে, সেই আমদানির সময়সীমা একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন ভারতের ইলিশ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ইলিশ ধরার ওপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ, ভারতে আমদানির সময়সীমার মধ্যেই সেটা শুরু হয়ে যাবে। তাই এই বিপুল পরিমাণ ইলিশ আনতে প্রকৃতপক্ষে মাত্র ২২ দিন সময় পাবেন তারা।

ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে যাতে বাকি পরিমাণ ইলিশ আনা যায়, সেই অনুরোধ করে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে এবছর ৩৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশি ইলিশের প্রথম চালানটি কলকাতায় পৌঁছেছে এবং শুক্রবার থেকেই তা কলকাতার বাজারে বিক্রি হতে শুরু করেছে। এবছর দুর্গাপুজো ২১শে অক্টোবর থেকে ২৪শে অক্টোবর। সেই সময়ে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে, ভারতে আমদানি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাই পুজোর মধ্যে বাংলাদেশের ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পাতে পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

সময় বৃদ্ধির আবেদন
মাছ আমদানিকারক এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশের ইলিশ পাবেন ভেবে খুবই আহ্লাদিত হয়েছিলেন। কিন্তু যেদিন ভারতে রপ্তানির নির্দেশনামা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার, সেই একই দিনে তারা ১২ই অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

কলকাতার ফিশ ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সচিব সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলছেন, এমনিতেই প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে আমদানি করা কঠিন ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে ১২ই নভেম্বর থেকে। তার মানে আমরা আমদানি করার সময় পাব ১১ই নভেম্বর পর্যন্ত। এই কয়েকদিনে এত ইলিশ কীভাবে আনা যাবে? প্রাথমিক ভাবে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আনার অনুমোদনের সময়সীমা ছিল ৪০ দিনের। এখন তো সেটা দাঁড়াচ্ছে মাত্র ২২ দিনে। এদেশের আমদানিকারক আর বাংলাদেশের রপ্তানিকারক – উভয় পক্ষেই তো এত মাছ আনা বা পাঠানো অসম্ভব। তাই আমরা আবেদন করেছি যে ১১ই অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আসুক, আর ৩৯৫০ টনের মধ্যে যতটা বাকি থাকবে, সেটা যেন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে, ৩রা নভেম্বর থেকে আবারও চালু করা যায়।

এই আবেদন জানিয়ে তারা কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। উপ-দূতাবাসের প্রেস সেক্রেটারি রঞ্জন সেন জানিয়েছেন, চিঠিটা তারা পেয়েছেন এবং সেটি ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তারা পাঠিয়ে দেবেন।

কলকাতার বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ
বৃহস্পতিবার রাতে বেনাপোল, পেট্রাপোল পেরিয়ে বাংলাদেশি ইলিশের প্রথম চালানটি এসেছে হাওড়ায়। সেখানেই পূর্ব ভারতে সবথেকে বড় মাছের পাইকারি বাজার।পাইকারি হারে শুক্রবার এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে ১২শো থেকে ১৩শো টাকা দরে। আর একটু কম ওজনের মাছের পাইকারি দর ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। ওই মাছই উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে বিক্রি হয়েছে এক কেজি ওজনেরগুলি ১৭-১৮শো টাকায় আর ১২শো-সাড়ে ১২শো গ্রামের মাছের দাম ছিল দুই হাজার টাকা। আশা করা যাচ্ছে, শনিবার আর রবিবার কলকাতার সব বাজারে ঢেলে ইলিশ পাওয়া যাবে। তবে তার দাম কীরকম হতে পারে, সে সম্বন্ধে এখনই কোনও ধারণা দিতে পারছেন না মাছ ব্যবসায়ীরা।

ইলিশ-হীন দুর্গাপুজো
দুর্গাপুজোর সময়ে ইলিশ মাছ খাওয়ার একটা চল রয়েছে বাঙালিদের মধ্যে। আর পদ্মার ইলিশ নিয়ে সব বাঙালির মতো পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদেরও সেন্টিমেন্ট আছে। বাঙালি হোটেল রেস্তরাঁয় তো বটেই, অনেক পশ্চিমা কায়দার হোটেলেও দুর্গাপুজোর স্পেশাল মেনুতে ইলিশের পদ থাকে। আবার পূর্ববঙ্গীয়দের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর দিনে জোড়া ইলিশ খাওয়ার চল রয়েছে। সে দিনই ইলিশ খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় প্রজননের সময় শুরু হয় বলে, আবার জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারিতে সরস্বতী পুজোর দিনে ইলিশ খাওয়া শুরু হয়। তবে এমন বহু পরিবারই রয়েছে যারা এই আচার না মেনে যে কোনও সময়েই ভাল ইলিশ পাওয়া গেলে খেয়ে থাকেন।তবে এবছর সম্ভবত দুর্গাপুজোর সময়ে পাতে ইলিশ থাকবে না।

খাদ্য-ইতিহাসের গবেষক ও লেখক নীলাঞ্জন হাজরা বলছেন, এই সময়ে যে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তার একটা বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, সেটা বুঝতে হবে। এটা হল ইলিশের ডিম পাড়ার সময়। তখন ইলিশ তো ধরা একেবারেই উচিত নয়। যদি ইলিশের প্রজননের সময়তেই দুর্গাপুজো পড়ে যায়, কী আর করা যাবে, দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু তো বলার নেই। এবছর না হয় দুর্গাপুজোয় বাঙালি ইলিশ বাদই দিল। ভবিষ্যতে যাতে আরও ভাল স্বাদের ইলিশ পাওয়া যায়, তার জন্যই বাঙালিকে এই স্যাক্রিফাইসটা করতে হবে। আমরা বরং ইলিশ না পাওয়ার এই ব্যাপারটাকে একটা জনমত তৈরির কাজে লাগাতে পারি। বেআইনিভাবে বহু খোকা ইলিশ ধরা আর বিক্রি করা হয়, যেটা ইলিশের স্বাদ আরও ভাল হওয়ার জন্য একেবারেই করা উচিত নয়। আবার প্রজনন-কালীন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনেকে চোরাগোপ্তা ইলিশ ধরেন, আর কেনেন। এগুলো যাতে না হয়, তার জন্য একটা জনমত গঠন করা হোক না এবছর পুজোতে ইলিশ বাদ রেখে।

এবছর ইলিশের আকাল
পশ্চিমবঙ্গে মূলত ইলিশ আসে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ডায়মণ্ড হারবার এলাকার মাছের আড়ত থেকে। সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদীগুলির সেই ইলিশ এবছর ১৪ই জুলাইতে হাজার টন উঠেছিল। তার পর থেকে আর ইলিশ আসে নি বাজারে। খাদ্য-লেখক ও সাংবাদিক সুরবেক বিশ্বাস বলছিলেন, ওই একটা ঝাঁকের পরে ডায়মণ্ড হারবার থেকে আর ইলিশ আসে নি একদম। এর মধ্যে একটা ইলিশ এসেছিল উড়িষ্যার কাসফল নদের, সেটা খুবই ভাল স্বাদ হয়েছিল। আর দীঘাতে যে ইলিশ পাওয়া যায় সেটা সমুদ্রের মাছ, একেবারই স্বাদ নেই, তবুও ওই জুলাইতেই একবার ৫০ টন মাছ এসেছিল। তারপর থেকে বাজার থেকে ইলিশ উবে গেছে। তাই বাঙালি রেস্তরাঁগুলোতে ইলিশের দামও বেড়ে গেছে অনেকটা। আগে কলকাতার ভাল হোটেল-রেস্তরাঁয় যেখানে একপিস ইলিশের কোনও পদের দাম মোটামুটি তিন থেকে সাড়ে তিনশো টাকা ছিল, এখন পাঁচশোর কমে কোনও ইলিশের পদ নেই। এই ঘাটতিটাই পূরণ করতে পারত বাংলাদেশের ইলিশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে এবারে সেভাবে ইলিশ খাওয়াই হবে না।