রহমত নিউজ 16 September, 2023 03:26 PM
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেছেন, একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু তার জনগণ। জনগণের কল্যাণ, নিরাপত্তা বিধান ও সার্বিক উন্নতিই স্বার্থক ও কল্যাণরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ লক্ষ্যে একটি রাষ্ট্রের সরকারের সকল পর্যায়ে জনগণের প্রতি নিবেদন, দায়বদ্ধতা, কল্যাণকামিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরী। আর তা নিশ্চিত করতে হলে সরকার গঠনে জনগণের মতামতের সঠিক প্রতিফলন তথা ভোটাধিকার প্রয়োগের বিকল্প নেই। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করলেও বাংলাদেশে আমরা একটি টেকসই ও আস্থাশীল রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। যার জেরে দেশে আজ চরম রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত দেশের জনগণ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাশীল নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সংঘাত, সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়েই চলছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হলো সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দেওয়া। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতার পরিপূর্ণ ও যথাযথ প্রয়োগ, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরী যা একমাত্র একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই সম্ভব।
আজ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুুফতী সুলতান মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুসলিম লীগের মহাসচিব আবুল খায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুফতী শরাফত হোসাইন, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রীস, সহকারী মহাসচিব আলহাজ্ব আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সী, মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, অ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন মোল্লা, মুফতী ইলিয়াস মাদারীপূরী, মো: মোফাচ্ছির হোসাইন, অ্যাডভোকেট মো: জয়নুল আবেদীন ও মুফতী শিহাবউদ্দীন কাসেমী প্রমূখ।
আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান তথা চলমান সংকট নিরসনে আজকের এই মতবিনিময় সভায় আমরা স্পষ্টভাবে সরকারের প্রতি অবিলম্বে আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আয়োজন করতে কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নেয়ার জোর দাবি জানাই। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্ত:সংলাপ, সুশীল সমাজ, উলামায়ে কেরাম ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রুপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। এছাড়া নির্বাচনের আগে চলমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি নয় বরং দেশের ১৮ কোটি মানুষের অন্তরের দাবি। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য থেকে জনগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। কেন্দ্র দখল, দিনের ভোট রাতে শেষ করে ফেলা, প্রার্থীদের উপর আক্রমণ হওয়ার পরও যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে দাবি করা হয় তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে।
মাওলানা আব্দুর রব ইউসূফী বলেন, সমগ্র জাতি এ বিষয়ে একমত যে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কোন বিকল্প নেই।
ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন নজীর নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, বিদ্যমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে।
কাজী আবুল খায়ের বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি কথা দিচ্ছি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, আমার উপর আস্থা রাখুন’ বলে দিনের ভোট রাতে করে ফেলেছিলেন। ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা আজ ভুলুণ্টিত।
মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ায় ভোটাররা ভোট প্রদানে উৎসাহ হারিয়েছেন। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে বিদেশীরাও আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। এমতাবস্থায় জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, একথার উপর আমরা সবাই একমত যে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কোনভাবেই সম্ভব নয়। ১৪ সালে অবৈধভাবে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। অবৈধ সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আর কোন নির্বাচনে যাবে না।