রহমত নিউজ 15 September, 2023 02:59 PM
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সম্পাদক এডভোকেট আদিলুর রহমান শুভ্র ও পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলানকে মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড দেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার এক বিবৃতিতে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের লাখ লাখ শান্তিপ্রিয় কর্মী ও সমর্থকদের জমায়েতের ওপর রাষ্ট্রীয় যৌথ বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় শহিদের সংখ্যা অগণিত। সরকারের প্রচণ্ড চাপে কেউ যখন নিহতের (শহীদ) সংখ্যা প্রকাশ করতে পারছিল না, তখন অধিকার নামক স্বনামধন্য মানবাধিকার সংগঠনটি খোঁজখবর নিয়ে ৬১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়। এরপর এর সম্পাদক আদিলুর রহমান শুভ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে জামিন পেলেও তার ওপর বিচারিক হয়রানি বন্ধ হয়নি। আমরা দায়িত্বের সাথে বলছি, শাপলা চত্বরে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে আদিলুর রহমান কোনো মিথ্যা তথ্য দেননি। বরং রাজনৈতিক জিঘাংসাবশত মিথ্যা মামলায় তাকে এবং তার সংগঠনের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমরা জোরালো ভাষায় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে নিহতের (শহিদ) সংখ্যা নিয়ে সরকার নিজেই ধুম্রজাল তৈরি করেছে। শহিদের সংখ্যা নিয়ে হেফাজত যখনই সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করতে নেমেছে, তখনই ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করে সরকার আমাদের থামতে বাধ্য করেছে। সেই কালরাতে বিদ্যুত বন্ধ করে রাতের আঁধারে সেদিন গণহত্যা চালিয়ে বহু লাশ গুম করে ফেলা হয়েছিল। পঙ্গুত্ব বরণকারী ও আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক। যার সচিত্র রিপোর্ট দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রকাশ করেছে। অথচ জাতি দেখেছে, সংসদে দাঁড়িয়ে শহিদের রক্ত নিয়ে কিভাবে উপহাস করা হয়েছিল। আমরা এই কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের অধীনে কোনো তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়া বিশ্বাস করি না। আমরা এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবী করছি। নেদারল্যান্ডস-এর হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের অধীনে শাপলা চত্বরের গণহত্যার তদন্ত হলে নিহতের সঠিক সংখ্যা বের করাসহ উপযুক্ত বিচার সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনের ২ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো জাতি, নৃগোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা হয়, তাদেরকে শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়, কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন ব্যবস্থা করা যে, শারীরিকভাবে তারা আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হবে, তাহলে সেসব গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হবে। ৫ মে ২০১৩ সালের রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের জমায়েতের ওপর যে গণহত্যাই সংঘটিত হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, শুধু শাপলা চত্বরের গণহত্যাই নয়, ২০২১ সালে হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিকল্পিত নাটক সাজিয়ে হেফাজতের ২৩ জন প্রতিবাদী কর্মীকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে হত্যা (শহীদ) করেছিল। সেই শহিদদের আমরা দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করি এবং তাদের প্রতিটি হত্যার তদন্ত ও বিচারও আমরা দাবী করি। এসব হত্যা-গণহত্যা বিশ্ব দরবারে সরকারকে কর্তৃত্বপরায়ণ স্বৈরাচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন মানবাধিকারকর্মীদের ওপর চড়াও হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের বাকি সম্মানটুকুও ধূলিসাৎ করা হচ্ছে।
আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আরো বলেন, আজ আমরা এমন নির্মম, নির্দয় সময়ে এসে পড়েছি, যেখানে খোদ মানবাধিকারকর্মীদেরও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে; কোনো নিন্দা বা প্রতিবাদের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। ‘অধিকার’ একটি নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। আইন-আদালতের কাজ নাগরিক ও মানবিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা দেয়া; কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলতে হচ্ছে, আজকে আইন-আদালতকে ব্যবহার করে নাগরিকের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে; মিথ্যা বা গায়েবি মামলায় ভিন্নমতাবলম্বীদের বিচারিক হয়রানি ও জেল-জুলুমে অপদস্থ করা হচ্ছে। আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ক্ষমতার দাপটে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, আলেম ওলামা, মানবাধিকারকর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করে গদি রক্ষা করা যাবে না। সরকারকে বলব, যদি নিজেদের ভালো চান, অবিলম্বে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে বন্দি মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমীসহ সকল আলেম এবং এডভোকেট আদিলুর রহমান শুভ্র ও পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলানকে মুক্তি দিন। হয়রানি বন্ধ করুন