রহমত নিউজ ডেস্ক 12 September, 2023 01:13 PM
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, যেকোনো সৎ ব্যবসায়ীর জন্য এফবিসিসিআই পাশে থাকবে আর অসৎ ব্যবসায়ীর জন্য বিপক্ষে দাঁড়াবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে যারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে, তারা ব্যবসায়ী নয়। এফবিসিসিআই অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কোনো এ্যাডভোকেসি করবে না। কৃত্রিম সংকট যারা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পণ্যের সংকট সৃষ্টি ও বাজার অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবো। ডলার সংকটের কারণে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারছে না। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট করা সহজ নয়। চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে মিল রেখে সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে দ্রব্য মূল্যের দাম সহনীয় রাখতে হলে আমদানি পণ্যে ওপর কর ছাড় দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে দেশীয় উৎপাদন খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান। ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় কে পরাজিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক আরিফুর রহমান, সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা ও সাংবাদিক মো. শারফুল আলম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, নানা পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে দায়ী করা হলেও এর পিছনে সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সরকারি সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতা অনেকাংশে দায়ী। বাজার নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় বাধা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে না পারা। এক বছরের ব্যবধানে খাদ্যদ্রব্যসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যে দ্রব্যের যে উত্তাপ তা সাধারণ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে স্বল্প কিছু পণ্য ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারলেও মধ্যবিত্তদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। করোনা পরবর্তীতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। আবার অন্য দিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতিসহ নিয়ন্ত্রিত আমদানি খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করছে। তবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম, পরিবহণ ভাড়া, রাস্তায় পদে পদে চাঁদাবাজি, সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা ও বিপনণ ব্যবস্থার ত্রুটিও এর জন্য দায়ী।
তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় দেখি ব্যবসায়ীরা সরকারের নানা সাফল্য নিয়ে প্রশংসা করেন। এফবিসিসিআইসহ বড় বড় ট্রেডবডিগুলো সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে অহংকার করেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই সরকারকে সহযোগিতা করে না। বরং সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। যা সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ব্যবসায়ীদের উচিত শুধু সরকারের প্রশংসা নয়, জনগণকে স্বস্তি দিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহযোগিতা করা। চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ খাদ্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত মূল হোতারা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয়। তবে ওই সকল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যারা সরকারকে বিব্রত করার জন্য বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস তুলে দিচ্ছে। ডিমের উৎপাদন নিয়ে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে তথ্যের গরমিল দেখা যায়। সরকার বলছে ডিমের উৎপাদন বেড়েছে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা বলছে ডিমের উৎপাদন কমেছে। সরকারি হিসাবে জুলাই মাসে ডিমের উৎপাদন হয়েছে ২১০ কোটি। আর বেসরকারি উদ্যোক্তারা জুলাইয়ে ডিমের উৎপাদন ১১৬ কোটি। আবার আলুর উৎপাদন নিয়েও সরকারি ও বেসরকারি হিসেবে তথ্য ভিন্ন। তাহলে কোনটি সত্য?