রহমত নিউজ 06 September, 2023 05:17 PM
নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের তৃতীয় স্ত্রী দাবি করে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে বিয়ের অভিযোগ করেছেন ডাক্তার সুমনা ইসলাম নামে এক নারী। আহসান হাবিব আগে দুই বিয়ের তথ্য গোপন করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এছাড়া স্ত্রীর স্বীকৃতি, সন্তানের পিতৃপরিচয় অস্বীকার করে অপপ্রচার, সামাজিকভাবে সম্মানহানির অভিযোগ করেন ডাক্তার সুমনা ইসলাম। এ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
ডা. সুমনা ইসলাম বলেন, আমি রাশিয়া থেকে এমবিবিএস পাসের পর ২০১৯ সালে পাবনা মেডিকেলে ইন্টার্নশিপ করি। ২০১৯ সালে পাবনায় থাকাকালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের (৩৮) সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০১৯ সালের ২ মার্চ আহসান হাবীব বিয়ের প্রস্তাব দেন। এক পর্যায়ে পরিবারের সম্মতিতে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি বিয়ে করি। আহসান হাবীব আগের বিয়ের তথ্য গোপন করেন। আমাদের বিবাহিত জীবনে কিছুদিন পর আহসান হাবীবের আচার-আচরণ সন্দেহ হয়। তার বাড়িতে যেতে সে চাইলে বিভিন্ন তালবাহানা করেন। তার নেত্রকোনার বাসভবনে আমি স্থায়ীভাবে তার সঙ্গে বসবাস করতে চাইলে তা সম্ভব না বলে জানায়। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি, আহসান হাবীব এর আগে আরো দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। পরে এসব বিষয় নিয়ে আহসাব হাবীবের কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। আমি, আমার মা ও ভাই তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর গেলে সেখানে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমি, আমার মা ও ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেন। এ ঘটনায় মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। মামলার পর তিনি আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর একটি অভিযোগ দেই। পরে আমার সঙ্গে আপস করেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংসার করার উদ্দেশ্যে মামলাটি প্রত্যাহার করি।
সুমনা ইসলাম বলেন, কিছুদিন পর সন্তান-সম্ভবা হওয়ার খবরে আহসান হাবীব আমার সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন, না করলে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার হুমকি দেন। পরে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে তার তখনকার কর্মস্থল নেত্রকোনায় গেলে আমাকে ও আমার মাকে তালাবদ্ধ করে রাখলে পুলিশের সহায়তায় নিজেদের উদ্ধার করি। এ ঘটনার পর ২০২২ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সি. আর মামলা করি। শুধু আমি নই, আহসান হাবীবের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী আরিফা পারভীন বিভিন্ন সময়ে মামলা দায়ের করেছিলেন। বর্তমানে আমার ১৪ মাসের কন্যা সন্তান আছে এবং আহসান হাবীব সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও ভরণপোষণ থেকে বিরত রয়েছেন। আহসান হাবীব সামাজিকভাবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানদের কথা স্বীকার করেন। আহসান হাবীব বিভিন্ন সময় আমার বাসায় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আমাকে ও আমার সন্তানকে প্রাণনাশের চেষ্টাও করেছেন। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আমাকে ও আমার সন্তানকে তুলে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরো বলেন, আমি সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তিনি আমাকে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। আমার ডাক্তারি লাইসেন্স বাতিল করার চেষ্টায় তার বান্ধবী মালিহা মাহজাবিন নামে অজ্ঞাতনামা নারীকে দিয়ে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট তথ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে আবেদন করায়। বাসুকা করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায় ৯৩টি টিউবওয়েল বসানোর কাজ প্রদান করেন তিনি। এর সব কাগজপত্র করেন আমার নামে। যার টেন্ডার আইডি- ৫১০২৬২। দরপত্রের বিপরীতে বাসুকা করপোরেশন পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাবদ ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৬ টাকা ব্যাংক জামানত রাখে। জামানতকৃত টাকা এখনও অসংগৃহীত রয়েছে। ঠিকাদারি কাজটি সম্পন্ন করার জন্য মালামাল কেনার উদ্দেশ্যে আহসান হাবীব আমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে পর্যায়ক্রমে নিয়েছে। অথচ বিল প্রদান না করে কাজটি বাতিল করে ২০২১ সালের ৯ জুন আবার দরপত্র আহ্বান করে। এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি নানাভাবে হুমকি দেন। একইভাবে দ্বিতীয় স্ত্রী, শালী, ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নামে ট্রেড লাইসেন্স করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে কাজ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। আমি সংসার করতে চাই, নিজের স্ত্রীর স্বীকৃতি ও সন্তানের স্বীকৃতি চাই। তার নানামুখি অসম্মানজনক তৎপরতা বন্ধ চাই। তার মিথ্যাচার, সামাজিক সম্মানহানি থেকে রেহাই পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অভিযুক্ত নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, আমি প্রতারণা করিনি। ফাঁদে পড়ে বিয়ে করেছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে। তাহলে তার ভরণপোষণ কেনো দেবো। এছাড়া তিনি বিয়ে বিচ্ছেদের বিষয়টি নিজেই গোপন করছেন। আমার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করছিল। তার সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র : ঢাকা পোষ্ট