মূল পাতা আন্তর্জাতিক এশিয়া অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিযান সিঙ্গাপুরের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 19 August, 2023 08:58 AM
অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের অভিযান চালিয়েছে সিঙ্গাপুরের সরকার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাচার করে যারা সিঙ্গাপুরে এনেছে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালানো হয়। ব্যাপক এই অভিযানে এক বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ ও নগদ মুদ্রা জব্দ করেছে। বিভিন্ন বিলাসবহুল বাংলো এবং অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের সময় গ্রেফতার এড়াতে একটি বাংলোর দোতলা থেকে একজন লাফিয়ে পড়ে। পরে একটি ড্রেনে লুলিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। এমন তথ্য দিয়েছে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স -এর ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, এই অভিযানে নারীসহ ১০ জন বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।এদের মধ্যে সাইপ্রাস, তুরস্ক, চীন, কম্বোডিয়া, ভানুয়াতুর নাগরিক রয়েছেন। তাদের সবার বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের এর মধ্যে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের কেউ সিঙ্গাপুরের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা নন। এছাড়াও আরও ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং ৮ জন পলাতক রয়েছেন। এসব ব্যক্তি পরষ্পরের সাথে সম্পর্কিত বলে পুলিশ বলছে। সিঙ্গাপুর হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। দেশটিতে অপরাধের হারও অনেক কম। তবে অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করে সিঙ্গাপুরে অর্থ আনার বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও দামি গাড়ি জব্দ
জালিয়াতি, অর্থ পাচার, এবং বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এসব ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ বিভাগ। সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার হয়ে আসা এসব অর্থের উৎস দেখানোর জন্য জাল কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এমন সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশ ফোর্স-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। প্রায় ৪০০ জনের বিশাল দল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। এতে বাণিজ্য বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, স্পেশাল অপারেশন্স কমান্ড এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিল। এ সময় ট্যাংলিন, বুকিত টিমাহ, অর্চার্ড রোড, সেন্টোসা এবং রিভার ভ্যালিসহ দেশটির অভিজাত পাড়ায় একযোগে অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে এক বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ও সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে - অভিজাত বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, দামি ঘড়ি, স্বর্ণের বার, দামি ব্যাগ ও মদ। জব্দের তালিকায় নগদ ২৩ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের সমপরিমাণ অর্থ রয়েছে। এই অভিযানে ৯৪টি বিলাসবহুল বাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যেগুলো দেমটির অভিজাত এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এবং অপরাধে জড়িত সন্দেহে ১১০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে জমা থাকা ৩৫টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে৷
জিরো টলারেন্স নীতি
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আরো সম্পদ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হতে পারে। অভিযুক্তরা অর্থ পাচারের দায়ে দোষী প্রমাণিত হলে সিঙ্গাপুরের আইনানুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা এবং পাঁচ লাখ ডলার জরিমানা হতে পারে। এছাড়া তারা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স-এর ওয়েবসাইটে দেশটির কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ডেভিড চিউ-এর একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যারা বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে এনেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে ডেভিড চিউ বলেন, সিঙ্গাপুরের আর্থিক সিস্টেম ব্যবহার করে যারা অর্থ পাচারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে। এসব অপরাধীরা যাতে সিঙ্গাপুরে আস্তানা গাঁড়তে না পারে সেজন্য তাদের চিহ্নিত এবং প্রতিহত করার জন্য দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এবং কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট একযোগে কাজ করছে। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে এসব অপরাধী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যাতে সিঙ্গাপুরকে নিরাপদ স্বর্গ বানাতে না পারে সেজন্য আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। আমাদের বার্তা পরিষ্কার- আমরা যদি তোমাদের ধরতে পারি, তাহলে গ্রেফতার করা হবে। যদি তোমার কাছে অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায়, আমরা সেগুলো বাজেয়াপ্ত করবো। আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তোমাদের মোকাবেলা করা হবে।
যেভাবে সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার হয়
বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ উপারে অর্থ পাচার করে যারা সিঙ্গাপুরে এনেছেন তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সিঙ্গাপুরের কর্মাশিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন সম্পদ জব্দকারী শাখার সিনিয়র তদন্ত কর্মকর্তা আরশাথ আরিফের একটি বক্তব্য দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। আরশাথ আরিফ সেখানে বলেন, নানা উপায়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে আনা হয়। বিভিন্ন দামী জিনিসপত্রের আদান-প্রদানের মাধ্যমেও অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে দামী চিত্রকর্ম ও নানা ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্র। অনেক সময় অপরাধীরা বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে আসে এবং আসল পরিচয় গোপন করে লেনদেন করে। সেক্ষেত্রে যথাযথ নিরীক্ষা অপরাধীদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়।