রহমত নিউজ 17 August, 2023 08:26 AM
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জাতীয় সরকারের ঘোষণা দিতে হবে। জনমতের প্রতি তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় জোরে থাকার চেষ্টা করলে সরকারের জন্য সুখকর হবে না। দেশে কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জনজীবন অতিষ্ঠ প্রায়, এদিকে সরকারের কোন নজর নেই। সরকার আছে শুধু কিভাবে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করবে তা নিয়ে। এতে মানুষের জীবন গেলেও সরকারের কোন কিছু যায় আসে না। শেখ হাসিনার সরকার স্বাধীনতার ৫২ বছরের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে দিনের ভোট রাতে গ্রহণ করে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার আটিবাজার সূচনা কনভেনশন সেন্টারে অথর্ব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (চজ) পদ্ধতির প্রবর্তন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবীতে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণ সভাপতি আলহাজ্ব হাফেজ মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারি মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
চরমোনাই পীর বলেন, সরকার জনগণের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হত্যা করেছে। কথিত শান্তি সমাবেশে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে’ চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরো উস্কে দিয়েছে। দেশের নিবন্ধিত অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। নির্বাচনের নামে জাতির সাথে প্রহসন না করে দলীয়ভাবে বিজয়ী ঘোষণা দিলেই হয়, রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করার কী দরকার? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাপ্রেমী। তাই যে কোনভাবে তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। জাতীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজপথ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সঙ্কট আরো ঘুণিভূত হচ্ছে। সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ন্যায় কলঙ্কিত নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। সংবিধান রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে। তারাই বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল ও অবরোধ করেছে, ৫ শতাধিক মানুষ হত্যা করেছে। কাজেই সংবিধানের দোহাই সরকারের মুখে মানায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার দেশকে অকার্যকর করে বিচার ও আইন বিভাগকে ধ্বংস করেছে। নির্বাহী বিভাগ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকেও ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ বার বার সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। অথচ তারাই নিজেদের স্বার্থে বার বার সংবিধান পরিবর্তন করেছে। লুটেরা সরকারের একজনকেও ছাড় দেয়া হবে না। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের অবৈধ নির্বাচনে প্রজাতন্ত্রের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ভোট ডাকাতিতে সহযোগিতা করেছে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না। স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধী দল বলেছিল নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধীদল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার দ্বিতীয় বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল, ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই।