| |
               

মূল পাতা জাতীয় ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে পারবে বাংলাদেশ?


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে পারবে বাংলাদেশ?


রহমত নিউজ     12 August, 2023     07:18 AM    


বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসা এবং ডলার সংকটের কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস ইনভেস্টর এবং এসএন্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়ায় নতুন করে ঋণ কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সাধারণত এ ধরণের সংস্থার ঋণমান কমিয়ে দেয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি হারে সুদ দিতে হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ গত অর্থ বছরে প্রায় পনের বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ পেলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত এ ধরণের ঋণ তো আসেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সংকটে বৈদেশিক ঋণের সুদ বাড়ছে এবং পাশাপাশি কমছে ঋণ পরিশোধের সময়। ফলে গত অর্থ বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে ঋণ পরিশোধের চাপও।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ ঋণ পরিশোধের 'সক্ষমতা' বাংলাদেশের নেই এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর সরকারি পদক্ষেপের প্রচেষ্টাও তার দৃষ্টিতে আসেনি। সমস্যার মাত্রাটা অনুধাবন করতে পারছে না সরকার। করলে তারা কিভাবে বলতে পারে যে দু মাসে এ সমস্যার সমাধান হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ১২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি সরকারকে শোধ করতে হবে। বাকি প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ বেসরকারি খাতের।

সরকার কী বলছে?
এমন প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলছেন, ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ডলার নিয়ে কিছু টানাটানি আছে এটি সত্যি, কিন্তু সরকার পরিস্থিতি নিয়ে অবগত। এনিয়ে সরকার কাজ করছে। আগামী চার মাসে বাংলাদেশ ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে পারবে? এমন প্রশ্নে সরাসরি কোন উত্তর দেননি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে সরকার চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন নয় বলে উল্লেখ করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিদেশ থেকে অর্থ এনে সেটা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করেনি। সে কারণে ঋণ পরিশোধ নিয়ে চাপ বা উদ্বেগের কিছু নেই। পদ্মা সেতুর মতো কিছু কিছু প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যেই অর্থ আসতে শুরু করেছে। আর ঋণের চুক্তিতেও অনেক করণীয় পদক্ষেপের সুযোগ থাকে। এখন দরকার হলে কোথায় ঋণ পুনর্বিন্যাস করতে হবে বা কিভাবে করতে হবে সেটি নিয়ে সরকার সচেতন ও অবগত।

ডলার আসবে কোথা থেকে?
সাধারণত, সরকারি খাতের ঋণ নেয়া হয় অন্য আরেকটি দেশের কাছ থেকে। এর বাইরে বেসরকারি খাত বাণিজ্যিক ঋণ নেয় বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার কাছ থেকে। এসব ঋণগুলো চুক্তি অনুযায়ী কিস্তি-ভিত্তিক শোধ করতে হয়। কিন্তু রিজার্ভ সংকটের কারণে চাপে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সবশেষ যে হিসেব কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখিয়েছে তাতে রিজার্ভ নেমে এসেছে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না বলেই বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি – উভয় খাত বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ মূহুর্তে সরকারের হাতে খুব ভালো বিকল্প নেই। যে কোনভাবেই হোক নীট রিজার্ভ বাড়াতে না পারলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের খুব বেশি পথ নেই। আবার পদক্ষেপ নিলেও রিজার্ভের ইতিবাচক প্রবণতা তৈরি হতে সময় লাগবে। এসব কোম্পানির লাভ, রয়্যালটি কিংবা পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে , এগুলো দিলে রিজার্ভ আরও চাপে পড়ে যেতো, যা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ তো বটেই নতুন ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সংকট আর জটিল করে তুলতো।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ঢাকায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিক থেকে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেষ্টা করছে কিছু কিছু ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিমানা দিয়ে হলেও সময় বাড়ানো যায় কী-না তা নিয়েই কাজ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যেই এলএনজি আমদানির বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের ঋণে জরিমানা দিয়ে রিশিডিউল অর্থাৎ পরিশোধের সময় বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে সংকট শুধু বিদেশি ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেই নয়, বরং যেসব বিদেশি কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করেছে তাদের লাভ নেয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে ডলার সংকটের কারণে।

নতুন ঋণ এনে পুরনো ঋণ শোধ
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়ায় নতুন ঋণ এনে পুরনো ঋণ শোধ করা খুব একটা সহজ হবে না। একদিকে যেমন ঋণ পাওয়াটা সহজ হবে না,অন্যদিকে ঋণ পাওয়াটাও ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদেশি ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি আছে। এ ধরণের নতুন ঋণ ব্যয়বহুল হয় ও স্বল্পমেয়াদী হয়ে থাকে। আর ঋণ এনে ঋণ শোধের চিন্তা দেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদে আরও বড় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে।

অন্যদিকে আহসান এইচ মনসুর বলছেন, বর্তমান ঋণ রিশিডিউল করার জন্য অনানুষ্ঠানিক ভাবে ঋণদাতাদের সাথে যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে রাজি করাতে না পারলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় অনুমান করাটাই কঠিন হবে। বেসরকারি খাতকেও উৎসাহিত করতে হবে। পুণ:অর্থায়নের ব্যবস্থা করতেই হবে। তবে সমস্যাটি খুব জটিল। কারণ শুধু পাওয়ার সেক্টরেই আছে ১৪/১৫টি ক্লায়েন্ট যাদের অর্থ শোধ করতে হবে। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা উচিত।রি-পেমেন্টের যে অবলিগেশন সেটা তো ম্যানেজ করতে হবে। আমাদের রিজার্ভ আছে ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো। সেখান থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে দেয়া যাবে ? এর বাইরেও জ্বালানি, এভিয়েশন ও কৃষিখাতের ঋণ আছে।