| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত কি নতুন করে আলোচনা চায়?


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত কি নতুন করে আলোচনা চায়?


রহমত নিউজ     10 August, 2023     09:31 AM    


বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে একটি খসড়া চুক্তির রূপরেখা তৈরি হয়ে আছে প্রায় এক যুগ হতে চলল। যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বিশেষ করে পশ্চিববেঙ্গর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি আজও সই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভারত এখন সেই চুক্তির বয়ানে পরিবর্তন এনে বা বিকল্প কোনও প্রস্তাব পেশ করে তিস্তা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু করতে চাইছে কি না - সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দিল্লিতে একটি সংসদীয় কমিটির রিপোর্টের পর সে প্রশ্ন তৈরি হয়।

গত ২৫ জুলাই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে তাদের রিপোর্ট পেশ করে বলেছে, তারা সরকারকে আহবান জানাচ্ছে যাতে তিস্তা চুক্তি নিষ্পত্তি করতে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘অর্থবহ সংলাপের সূচনা’ করা হয়। যে কমিটি এই সর্বসম্মত রিপোর্টটি পেশ করেছে তাতে ভারতের প্রায় সব বড় দলের প্রতিনিধিত্ব আছে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন যে তৃণমূল কংগ্রেসের বাধায় তিস্তা চুক্তির জট খুলছে না বলে মনে করা হয়, সেই দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অভিষেক ব্যানার্জিও এই কমিটির অন্যতম সদস্য। বস্তুত তৃণমূলের একাধিক এমপি এই কমিটিতে আছেন, এবং তারা কেউই এই রিপোর্টে কোনও আপত্তি প্রকাশ করেননি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেননি – যা থেকে ধরে নেওয়া যায় এই সুপারিশে তাদেরও সায় আছে। তিস্তার অমীমাংসিত ইস্যুটি যে ওই কমিটি দ্রুত নিষ্পত্তির ডাক দিয়েছে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারও। কিন্তু কমিটি যে একই সঙ্গে তিস্তা নিয়ে ‘নতুন আলোচনার সূচনা’ করতে বলেছে, সেই বিষয়টি তাদের কিছুটা উদ্বেগেও ফেলেছে।

বাংলাদেশের একটি শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, পুরনো চুক্তির খসড়াটি অবিকৃত রেখেই নতুন করে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে, নাকি ভারতের পার্লামেন্টারি কমিটি সম্পূর্ণ নতুন আকারে চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা শুরু করার কথা বলতে চাইছে - তারা সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এই পটভূমিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে, তাদের দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে নন – কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করে’ কোনও চুক্তি করার চেষ্টা হলে তৃণমূল সেটা কিছুতেই মেনে নেবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসেই জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত হিসেবে দিল্লি সফরে আসছেন – ফলে তার ঠিক আগে তিস্তা নিয়ে ভারতে নতুন করে একটা ‘জলঘোলা’ যে চলছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

রিপোর্টে কী আছে?
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির বর্তমান চেয়ারপার্সন হলেন বিজেপি-র এমপি পি পি চৌধুরী। শাসক ও বিরোধী দল মিলিয়ে মোট ৩০জন এমপি এই কমিটিতে আছেন। দিন পনেরো আগে তারা লোকসভা ও রাজ্যসভায় ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ (প্রতিবেশীরা সবার আগে) পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেন – যাতে একটা বড় অংশ ব্যয় করা হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে।

ওই রিপোর্টে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে : তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগির ইস্যুটি যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত, কমিটি সে বিষয়ে অবগত। আমাদের অভিপ্রায়, বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নততর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে এই ইস্যুটি যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা হোক। বাংলাদেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে অর্থবহ সংলাপের সূচনা করতে এবং নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছতেও কমিটি মন্ত্রণালয়কে আহবান জানাচ্ছে। সেই আলোচনায় কী অগ্রগতি হল বা কী ফল পাওয়া গেল, সেটাও কমিটিকে জানানো উচিত হবে। বস্তুত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই ধরনের সব অমীমাংসিত বিষয় নিয়েই নতুন উদ্যোগ নিতে ও অর্থবহ সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করতে কমিটি প্রস্তাব করছে। রিপোর্টে অবশ্য পাশাপাশি এটাও বলা হয়েছে, তিস্তা চুক্তি সই করার ব্যাপারে ভারতের অঙ্গীকার সম্পূর্ণ অক্ষুণ্ণ আছে – এ ব্যাপারে শুধু ‘কনসেন্সাস’ বা ঐকমত্য তৈরির অপেক্ষা। এই বক্তব্যের প্রথম অংশটি নিয়ে বাংলাদেশ যথারীতি খুবই খুশি।

বস্তুত গত ৩রা অগাস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন ভারতের পার্লামেন্টারি কমিটির ওই রিপোর্টকে খুবই ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে অন্য জায়গায়। বাংলাদেশেরই একটি শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, “তিস্তা নিয়ে দু'দেশের সমঝোতা কিন্তু অনেক আগে থেকেই হয়ে আছে। শুধুমাত্র ভারতের ভেতরে তাদের নিজস্ব সমস্যার জন্য এটা এখনও সই করা যায়নি। এখন নতুন আলোচনা শুরু করা বা নতুন করে কনসেন্সাস তৈরির কথা বলে তারা আসলে কী বোঝাতে চাইছেন সেটা আমরাও কিন্তু ভাল করে বুঝতে চাইছি।

বিজেপির অবস্থান
বাংলাদেশের ওই সিনিয়র কর্মকর্তার তোলা এই প্রশ্নটি বিবিসির তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারপার্সন ও রাজস্থানের পালি থেকে নির্বাচিত বিজেপি এমপি পি পি চৌধুরীর কাছে। তিনি প্রথমেই জানান, যা বলার আমরা তো রিপোর্টেই বলে দিয়েছি। সত্যি কথা বলতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমার আর বাড়তি কিছু যোগ করার নেই।

যখন নির্দিষ্ট করে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় - কমিটি কি পুরনো খসড়া চুক্তি নিয়েই আলোচনা চাইছে নাকি সম্পূর্ণ নতুন করে নতুন চুক্তি আলোচনা করতে বলছে? তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একটু ইতস্তত করেই চৌধুরী জবাব দেন, আসলে খুব লম্বা রিপোর্ট ছিল তো, আমার ঠিক অতটা মনে নেই। ভালো করে জিনিসটা আবার না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

তবে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের শাসক দল বিজেপির অবস্থান হল, নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দল তৃণমূলের বাধাতেই তা সম্ভব হচ্ছে না। তিস্তা যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েই বাংলাদেশে ঢুকেছে, তাই ভারতের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ওই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া তিস্তা নিয়ে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি করা সম্ভব নয়। চুক্তি সম্পাদন না করতে পারার যুক্তি হিসেবে ভারত বরাবরই বাংলাদেশকে এ কথা বলে এসেছে।

মাত্র মাস দুয়েক আগেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জির অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করেই মন্তব্য করেছিলেন, “কেন তিস্তা চুক্তি করা যাচ্ছে না সেটা আপনারা খুব ভালভাবেই জানেন।

২০১৯ সালের অগাস্টে বাংলাদেশ সফরে গিয়েও মি জয়শঙ্কর বলেছিলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের ‘কমিটমেন্ট’ অপরিবর্তিত আছে। অবস্থান এতটুকুও পাল্টায়নি বলেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য।

তবে এই পটভূমিতে পার্লামেন্টারি কমিটির রিপোর্টে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি-দের সম্মতি বিষয়টিকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে নি:সন্দেহে। কেন্দ্রীয় সরকারের এতদিনের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৃণমূলও এখন পুরনো খসড়া চুক্তিতেই সায় দিচ্ছে – না কি তারা নতুন আকারে কোনও চুক্তির কথা ভাবছে সেই প্রশ্নটাই তাই এখন সামনে চলে আসছে যথারীতি।

তৃণমূলের বক্তব্য
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অঘোষিত ‘নাম্বার টু’ অভিষেক ব্যানার্জি, যাকে সকলেই মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে চেনেন। সেই অভিষেক ব্যানার্জি বিশেষ কিছু না ভেবেচিন্তেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে রিপোর্টের বক্তব্যে সায় দিয়ে দিয়েছেন, পর্যবেক্ষকরা কেউই সে কথা বিশ্বাস করছেন না। বরং ওই চুক্তি নিয়ে ভারতের দিক থেকে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে, সেই আভাস পেয়েই হয়তো তৃণমুলের তরফে তিনি রিপোর্টে সম্মতি দিয়েছেন, এমনটাই তারা ধারণা করছেন। এই মুহুর্তে অভিষেক ব্যানার্জি নিজে বিদেশ সফরে রয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্যও জানা যায়নি।

তবে কমিটিতে তৃণমূলের দ্বিতীয় যে সদস্য আছেন, সেই শ্রীরামপুরের এমপি কল্যাণ ব্যানার্জি বলেছেন, কমিটিতে যেদিন তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তিনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। আমাদের রাজ্যে তখন পঞ্চায়েত নির্বাচন চলছিল, আমি তো প্রায় দু'মাস দিল্লি যেতেই পারিনি। ফলে কমিটির সব মিটিংয়ে হাজির ছিলাম না, তিস্তা নিয়ে কী কথাবার্তা হয়েছে বলতে পারব না।

কিন্তু ২০১১তে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের যে অবস্থান ছিল, সেখান থেকে কি আজ দলের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়েছে? রাজ্যে দলের প্রধান মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এর জবাবে বলেন, প্রথম কথা হল মমতা ব্যানার্জি তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে, এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়। তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করে কোনও চুক্তি করার বিরোধী। মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশকে ও সে দেশের মানুষকে খুবই ভালবাসেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গেও তাঁর দারুণ সম্পর্ক ... কাজেই তিস্তা চুক্তি সই হলে তিনি তো খুশিই হবেন! কিন্তু শুষ্ক মরশুমে আমাদের রাজ্যে তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলো যাতে পর্যাপ্ত জল পায়, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। ওই মানুষগুলোকে পথে বসিয়ে তৃণমূল কোনও চুক্তিতে সায় দিতে পারবে না।

অন্যভাবে বললে, যদি এমন কোনও তিস্তা চুক্তির অবতারণা করা যায় যাতে ‘পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে’ – সেটায় তৃণমূলের অনুমোদন থাকবে দলের পক্ষ থেকে এই বার্তাই দেওয়া হচ্ছে। আর ঠিক এ কারণেই ‘নতুন আকারে’ কোনও তিস্তা চুক্তির অবতারণা ভারতের দিক থেকে করা হলেও হতে পারে, এই জল্পনাও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

কী বিকল্প হতে পারে?
২০১১ সালে যে তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছিল, তাতে নদীর প্রবাহ বজায় রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট অংশ ছেড়ে দিয়ে বাকি জল দুই দেশের মধ্যে সমান ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছিল। যদিও ভারত বা বাংলাদেশ কেউই সেই চুক্তির খসড়াটি প্রকাশ করেনি, তার পরেও দুই দেশের বিশেষজ্ঞরাই পরে বলেছেন এই আধাআধি ভাগের ফর্মুলা নিয়েই তখন ঐকমত্য হয়েছিল। কিন্তু এখন মমতা ব্যানার্জির দাবি মানতে গেলে সেই পুরনো ফর্মুলা অনুযায়ী চুক্তি করা সম্ভব নয়। বরং এক্ষেত্রে দুটো বিকল্প রাস্তা তৃণমূল সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

এক, শুষ্ক মরশুমে ভারতের হিস্যা কিছুটা বাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের তিস্তা অববাহিকার জেলাগুলোকে বাড়তি সেচের জল পাইয়ে দেওয়া। সেক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রী বলতে পারবেন দেশের স্বার্থে চুক্তিতে রাজি হলেও পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের সঙ্গে তিনি কোনও আপষ করেননি। কিন্তু এই প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। ভারত যদি অর্ধেকের চেয়ে বেশি জল পায় এবং বাংলাদেশের হিস্যা ৫০ শতাংশর নিচে নেমে যায়, সেটা রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার জন্যও রাজনৈতিক পরাজয়ের সামিল হবে।

দিল্লিতে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রায়শই বলতেন, তিস্তায় পানি কমেছে বুঝলাম, কিন্তু যেটুকু আছে তা আধাআধি ভাগে সমস্যা কোথায়? তাঁর যুক্তি ছিল, পানি যদি ষোলো আনার বদলে আট আনা থাকে তাহলে চার আনা চার আনা ভাগ হবে, আর ছয় আনা থাকলে দুই দেশই তিন আনা করে পাবে। বাংলাদেশ সেই অবস্থানে অনড় থাকলে প্রথম বিকল্পটি কোনও কাজে আসবে না বলাই বাহুল্য।

দ্বিতীয় বিকল্পটি বাতলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি নিজেই – যখন সোয়া ছ’বছর আগে ২০১৭র এপ্রিলে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দিল্লিতে তাঁদের দুজনের দেখা হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জি তখন বলেছিলেন, তিস্তার জল না-দিতে পারলেও উত্তরবঙ্গে তোর্সা-দুধকুমার-সঙ্কোশ-ধরলার মতো আরও যে সব নদীতে উদ্বৃত্ত জল আছে তা খাল কেটে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকায় পাঠানো যেতে পারে।

এই প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল – তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিন্তু তাদের এই বিকল্প প্রস্তাব থেকে এখনও সরে আসেনি। বাংলাদেশ অবশ্য এই প্রস্তাব নিয়ে কখনোই বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি, আবার সরাসরি নাকচও করে দেয়নি। পুরনো তিস্তা চুক্তির খসড়া নিয়েই নতুন করে চুক্তি সম্পাদনের আলোচনা আবার শুরু হলে কোনও সমস্যা নেই – কিন্তু সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারত যদি সম্পূর্ণ নতুন করে তিস্তা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে চায় তাহলে অবধারিতভাবে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে জটিল একটি কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হবে।