স্বাস্থ্য ডেস্ক 02 August, 2023 02:05 PM
এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সর্বোচ্চ সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে এক জরুরি বৈঠকে এ সহযোগিতা চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে বৈঠকে ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানাসহ চার সদস্যের প্রতিনিধি, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবীর, রোগ নিয়ন্ত্রণের শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি পর্যায়ে যাওয়ার আগেই এটি নিয়ন্ত্রণে ডব্লিউএইচওর কাছে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ডেঙ্গুর টিকার বিষয়ে। জবাবে ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। টেকনিক্যাল ও লজিস্টিকস সাপোর্ট, র্যাপিড টেস্টের কিট সরবরাহসহ বেশ কিছু বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।বর্তমানে শতাধিক দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে উল্লেখ করে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ডব্লিউএইচও বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করছে। তার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। বৈঠকে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতা ভাগ করা হয়। এর আগে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এবং এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ডব্লিউএইচও কাজ করার আগ্রহের কথা জানায়। বিশেষ করে, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।
জানা গেছে, ডব্লিউএইচওর অর্থ সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র কী, তা জানতে মাঠপর্যায়ে গবেষণা চলমান রেখেছে। এর মধ্যে গাজীপুরে গবেষণার কাজ শেষ হয়েছে। এরপর কিশোরগঞ্জসহ ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোতে গবেষণা হবে। এ মাসের মাঝামাঝি ঢাকাতেও হবে গবেষণা।
অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান গবেষণায় শুধু সংক্রমণ নয়, এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের অন্যান্য কী কী জটিলতা ছিল, বিশেষ করে কোমর্বিডিটি ছিল কিনা, এমন তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে ঢাকায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ নিয়ন্ত্রণে সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে সে দেশের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। মঙ্গলবার তারা স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি গাইডলাইন রয়েছে। এখন সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতার আলোকে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের গাইডলাইনে কিছু সংশোধন আনতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বুধবার এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে ২৭ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত থাকবেন।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব, তাতে সামনে বৃষ্টি বাড়বে না কমবে, তা কেউ জানে না। পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, যেখানে সেখানে ভবন নির্মাণের কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ব্যক্তি তার বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখলে এডিস মশা জন্মায় না। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, ইমাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এখন ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম ও বরিশালে। বরিশাল মহানগরীসহ জেলার আরও কয়েকটি জেলায় আমরা সরেজমিন গিয়ে এডিসের ঘনত্ব দেখেছি। প্রতিটি জেলা ঝুঁকিপূর্ণের কাতারে আছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক, সামনে আরও খারাপ হবে বলেই মনে হচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।