| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকলে শ্রমিকেরা তার প্রধান শিকার হন’


পুরুষের শ্রমশক্তির পেছনেও নারীর ভূমিকাই মুখ্য : আনু মুহাম্মদ

‘গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকলে শ্রমিকেরা তার প্রধান শিকার হন’


রহমত নিউজ ডেস্ক     27 July, 2023     06:00 AM    


গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকলে তার প্রধান শিকার হন শ্রমিকেরা। কোনো দেশে সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে শ্রমিকেরা তাদের নায্য দাবির কথা তুলতে পারেন না, নানা ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। ভয়ভীতির মধ্যে তাঁদের থাকতে হয়। এমনকি প্রাপ্য মজুরির কথা বলতে গেলেও হামলা–মামলার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের সংকট হয় বহুমুখী। নিরাপত্তাহীনতা, পুষ্টিহীনতাসহ শারীরিক–মানসিক নানা রকম সমস্যায় পড়েন নারী শ্রমিকেরা।

বুধবার (২৬ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আয়োজিত ‘নারী, মজুরি প্রশ্ন ও শ্রমিক আন্দোলন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন, নৃবিজ্ঞানী, লেখক ও  গবেষক রেহনুমা আহমেদ, মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, নারীপক্ষের সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ ফেলো মাহিন সুলতানা প্রমুখ। সভা থেকে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করা, ৬০ ভাগ মহার্ঘভাতা দেওয়া, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ সাত দফা দাবি তোলা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন,  নারী শ্রমিক হোক বা না হোক। শ্রমশক্তি তৈরিতে নারীই প্রধান ভূমিকা পালন করে। পুরুষের শ্রমশক্তির পেছনেও নারীর ভূমিকাই মুখ্য। তবে নারীর সেই শ্রম অনেকটাই অদৃশ্য। গত কয়েক দশকে নারী শ্রমিক আলাদা একটি সত্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আশির দশকের আগে শ্রমিক বলতে শুধু পুরুষদেরই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে নারী শ্রমিক একটা সামাজিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।  একটি দেশে যদি গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকে, তাহলে এর প্রধান শিকার হন শ্রমিকেরা। কারণ, তাঁরা সংগঠিত হতে পারেন না, দাবির কথা তুলতে পারেন না, মজুরির কথা বলতে পারেন না। নারী শ্রমিকেরা এর শিকার বেশি হন। শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে গণতন্ত্রের কথা থাকতে হবে, তেমনি নির্বাচনের বা গণতন্ত্রের অধিকারের কথার মধ্যে শ্রমিকের অধিকারের বিষয় জোরালোভাবে থাকতে হবে। এই পারস্পরিক বিষয়টি নিশ্চিত না করতে পারলে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।  স্বৈরতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শ্রমিকদের মুক্তির একটি বড় পথ। শ্রমিকদেরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকেও শ্রমিকস্বার্থের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী শ্রমিকেরা অন্তঃসত্ত্বা হলে তাঁদের চাকরি চলে যায়। আবার যাদের শিশুসন্তান আছে, তাঁরাও চাকরি করতে গিয়ে নানা জটিলতার মুখে পড়েন।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয়কাঠামোয় গত কয়েক দশকে পরিবর্তন এসেছে, ১৯৮০–৯০ সাল পর্যন্ত শ্রমিকদের প্রধান চাহিদা ছিল খাওয়া, থাকা ও চিকিৎসা। এখন তা বদলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রমিকেরা যতটুকু আয় করেন, তার বড় অংশ ব্যয় হয় সন্তানদের শিক্ষা, পুষ্টি ও যাতায়াতে। কিন্তু এগুলো তার মজুরিকাঠামোর ভেতরে নেই। সুতরাং শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণই যথেষ্ট নয়, মজুরিকাঠামোতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। ১১ শতাংশ গার্মেন্টস শ্রমিকের ঘরে ফ্যান নেই। ৮৪ শতাংশ শ্রমিক যৌথ টয়লেট ও ৮২ শতাংশ শ্রমিক যৌথ রান্নাঘর ব্যবহার করেন। দিন দিন মজুরি কাঠামো দুর্বল হচ্ছে। একসময় বেসিক ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা ৫০ শতাংশে নেমে গেছে। এতে ওভারটাইমের মজুরি কমে যাচ্ছে।

আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ইদানীং শ্রমিকদের উপর মামলা-হামলার পরিমাণ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আইন বাতিল হয়ে গেছে অথচ সেই আইনেও মামলা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না। মিথ্যা মামলার কারণে শ্রমিকদের অধিকারের দাবি তোলাও এখন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে, সবশেষ মজুরি বাড়ানোর আগে যে আন্দোলন হয়েছিল, সে সময় অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। এখনো শ্রমিকদের ভয়ভীতির মধ্যেই থাকতে হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, তৈরি পোশাক খাতে এখন ৬০ ভাগ শ্রমিক নারী, যা এক দশক আগে ছিল ৮০ ভাগ। বর্তমান সময়ে নারী শ্রমিকেরা যা আয় করেন তা দিয়ে তাদের পক্ষে পুষ্টিকর খাবার কেনা সম্ভব হয় না। এতে নারী শ্রমিকদের দক্ষতা কমছে। দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি ৮ হাজার টাকা। এটা কোনো গৌরবের বিষয় নয়। গার্মেন্টস মালিকেরা অবশ্যই অনেক এগিয়ে গেছেন। কিন্তু শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক।