মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন শেখাটা জরুরি, নম্বর তার চেয়ে কম জরুরি : শিক্ষামন্ত্রী
রহমত নিউজ 25 July, 2023 12:57 PM
নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ও ফল অর্জন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, অভিভাবকদের বলছি, সন্তানদের আর জিজ্ঞেস করবেন না কত নেম্বর পেলো। দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন—তুমি আজ নতুন কী শিখেছো। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা করে করে শিখবে। অভিভাবকরা আবার ভাববেন না পরীক্ষা নেই তো শিক্ষর্থীরা কী শিখবে? মূল্যায়ন আছে, পরীক্ষাও আছে। তবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বেশি। সে জন্য অভিভাবকদের বলছি— সন্তানদের আর জিজ্ঞেস করবেন না কত নেম্বর পেলে। দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন— তুমি আজ নতুন কী শিখেছো? শেখাটা জরুরি, নম্বর তার চেয়ে কম জরুরি। আর শিক্ষার্থীকে নম্বরের জন্য চাপ দিতে দিতে তাদের মনে হীনম্মন্যতার জন্ম দেবেন না দয়া করে।
সোমবার (২৪ জুলাই) আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞজুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী, আহসানিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
কর্মজগতের চাহিদা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার পুনর্বিন্যাস করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশাল জনসংখ্যা। তাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে বিশ্বে কর্মজগতের যে চাহিদা তা বিবেচনায় নিতে হবে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেরও। কারণ আমরা কখনই দেশের পুরো জনসংখ্যার জন্য দেশের ভেতরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো না। তাহলে আমাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকেও বিবেচনায় নিতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের কাজের জগতটাই পাল্টে দেবে। আজ প্রাথমিকে যে পড়ছে তার কর্মজগতে প্রবেশের সময় বর্তমান কাজের বেশিরভাগই থাকবে না। শিক্ষার্থীদের সেইভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তারা অভিযোজনে দক্ষ হয়। যে কোনও পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তনের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। এখনই প্রায় সে অবস্থা এসে গেছে। আমাদের সেই দক্ষতা শিখতে হবে। বিশ্ব কর্মজগতের চাহিদাকে মাথায় রেখে প্রত্যেকটি জায়গায় কী ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে সেই ম্যাপিং করে তার ভিত্তিতে এগোনোর পরামর্শ দেন। এখন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন তাদের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছি—পরিবর্তন যখন করতে হবে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, কাজেই অনেক রকম ও ভিন্নভিন্ন মেয়াদে শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স চালু করতে হবে। যার সম্ভব সে বিশ্ববিদ্যালয়ে করবে, যার সম্ভব কাজের জায়গা থেকে করবে। সঙ্গে সঙ্গে এখন যে শিক্ষাব্যবস্থা তার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। মডিউলার এডুকেশনে যেতে হবে। তার পাশাপাশি শর্ট কোর্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির প্রবণতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ বলতে পারেন আপনি একদিকে বলছেন সবাই অনার্স-মাস্টার্স করবে কিনা, আরেকদিকে বলছেন- জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি সাংঘর্ষিক নয়। আমাদের এখন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলোর শিক্ষার্থীদের দিকে তাকালে বোঝা যাবে, আমাদের যে ধারণক্ষমতা তারচেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে অনেক সমস্যা এবং সেই সমস্যাগুলো যাতে না থাকে সেজন্যই জেলায় জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ। যার যার জেলায় গবেষণা করতে পারেন। উচ্চশিক্ষা যারা নেবেন তারা গবেষণা করতে পারবেন। এমন নয় যে তার নিজের জেলাতেই পড়তে হবে, যেখানে তার পছন্দ সেখানে পড়বেন। কিন্তু কোথাও যেন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা না হয়। এই একটি প্রবণতা আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সবাইকে ভেবে দেখে তা রোধ করতে হবে। ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারছে, তাদের বছরের মাঝপথে আরও বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। যারা ব্যয় করতে পারেন না তাদের সমস্যা, যারা ব্যয় করতে পারে তাদের জন্য সমস্যা নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার গবেষণাকে উৎসাহিত করবার জন্য বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন।’ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।