রহমত নিউজ 16 July, 2023 06:15 PM
ইসলামী ঐক্যজোটের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কনভেনশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী। বক্তব্য রাখেন শীর্ষ উলামা-মাশায়েখ, রাজনীতিবিদ এবং জোটের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ। রিপোর্ট, প্রস্তাব ও ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং আগামী ৩ বছরের জন্য মজলিসে শুরা এবং ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণা করেন মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল নয়। একদিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সংঘাত। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উচ্চমূল্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে জনজীবনে নেমে এসেছে ভোগান্তি। এই অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। হিংসা, হানাহানি কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনাদের মুখোমুখি অবস্থানে জাতি শঙ্কিত। ইসলামী ঐক্যজোট মনে করে, যেকোন সংকটের সমাধান হতে পারে অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমে। আমরা সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে অর্থবহ সংলাপের আহবান জানাচ্ছি। আমরা কোনো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চাই না। আমরা একটি নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। এই জন্য সরকারকে সহনশীল এবং নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে।
ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, কাঁদাছুড়াছুড়ি কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। দেশে চলমান পরিস্থিতিতে সকল ইসলামী দল, সংগঠন, উলামায়ে-কেরাম ও ইসলাম মনস্ক লোকদের সমন্বয়ে একটি সংগঠিত, সমন্বিত ও ইসলামী শক্তি গড়ে তোলা সময়ের অপরিহার্য দাবী। দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি উত্তরণে ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যে হকপন্থী ইসলামী দল, সংগঠন ও ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের ইসলামী শক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দীদের জামিনের আহবান জানান তিনি।
সুইডেনে কুরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মাওলানা হাসানাত আমিনী বলেন, আমরা মনে করি, সুইডেনে কোরআন পোড়ানো হয়নি, বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয় পোড়ানো হয়েছে। এই ঘটনায় গোটা বিশ্বের মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সুইডেনের সাথে সকল কুটতৈনিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যে সকল রাজনৈতিক দল কুরআন অবমাননার প্রতিবাদ করবে না, জনগণ তাদের পক্ষে থাকবে না।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ বলেন, আজকের এই জাতীয় কনভেনশন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন পৃথিবীর প্রায় দুইশত কোটি মুসলমানের ঈমান-আকীদা ও আস্থা-বিশ্বাসকে হেয়প্রতিপন্ন করা, পবিত্র কুরআনের সাথে জঘন্য আচরণ, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননার মত হীন অপতৎপরতার মাধ্যমে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এহেন ভয়াবহ ও বিভিষিকাময় পরিস্থিতিতে আমাদের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। দেশ ও ইসলামবিরোধী তাবৎ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্নভিন্ন করে দিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি বলেন, ইসলামী শক্তি নিয়ামত শক্তি। তারা এক আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করে না। এই শক্তিকে পাশ কাটিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতেও পারবে না, আসতেও পারবেনা। আমরা সংঘাত ও সহিংসতা চাই না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই। দেশীয় রাজনীতিতে বিদেশীদের অবৈধ হস্তক্ষেপ দেশের সার্বভৌম ও স্বাধীন অস্তিত্বের জন্য চরম হুমকী। তাই দেশীয় রাজনীতিতে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ আমরা চাই না।
কনভেনশন ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্যান্য ইসলামী দল, সংগঠন ও আলেম উলামার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানীমূলক সব মামলা নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। কনভেনশন চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ওনারী নির্যাতনসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সেইসাথে এই অবনতিকরঅবস্থা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে। কনভেনশন মনে করে দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের মতে, ভ্রান্ত মতবাদ মওদুদীবাদ ফেতনা ছড়াচ্ছে। এই ফেতনা থেকে মুসলমানদের সচেতন থাকতে হবে। কনভেশনে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়। এতে বলা হয়, বিগত তিন বছরে আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, আল্লামা আশরাফ আলী রহ.সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন ইসলামী দল ও ইসলামী ঐক্যজোটের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে। তাদের শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা ও সমবেদনা প্রকাশ করছে। আজকের কনভেনশন ইসলামী ঐক্যজোটের উন্নতি ও অগ্রগতিতে মরহুম উলামায়ে কেরাম ও নেতাকর্মীদের অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।
কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহির খলীফা মাওলানা রুহুল আমীন উজানভী, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগের মুহতামিম মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, ফরিদপুর খাবাশপুর মাদরাসার মুহতামিম মুফতী কামরুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ, এনপিপি মহাসিবচ ইদ্রিস তাওহিদী, জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া বি-বাড়ীয়ার নায়েমে মুহতামিম মাওলানা আলী আজম, ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রশিদ মজুমদার, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবু তাহের জেহাদী, মাওলানা আনাস মাদানী, অধ্যাপক মাওলানা এহতেশাম সারোয়ার, মাওলানা আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুফতী তৈয়্যেব হোসাইন, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মুফতী আব্দুল কাইয়্যুম, মাওলানা মইন উদ্দীন রুহী, মাওলানা সলিমুল্লাহ খান, মুফতী সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল হাই ফারুকী, মাওলানা ফারুক আহমদ, মুফতী হেদায়েতুল্লাহ গাজী, মাওলানা আবুল হাসান তালুকদার, মুফতী আবুল খায়ের বিক্রমপুরী, মুফতী তাসলীম আহমদ, মুফতী নাসির উদ্দিন কাসেমী, মাওলানা কাজী আজিজুল হক, মাওলানা রিয়াজত উল্লাহ, মাওলানা আনম আহমদ উল্লাহ, মুফতী যুবায়ের আহমদ কাসেমী, মাওলানা ইউসুফ মাহমুদী, মাওলানা খুরশেদ আলম, মাওলানা নুরুজ্জামান।
জেলা প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাওলানা লেহাজ উদ্দিন (গাজীপুর), মাওলানা ইয়াসিন হাবীব (কক্সবাজার), মাওলানা আব্দুল্লাহ (খাগড়াছড়ি), মাওলানা উসমান কাসেমী, মাওলানা দিলদার হোসাইন (চট্টগ্রাম) মাওলানা জমিরুদ্দীন (বান্দরবান), মুফতী সাইফুল ইসলাম, কাজী মিজানুর রহমান (নোয়াখালী), মাওলানা জহিরুল ইসলাম, হাফেজ ইদ্রিস, মাওলানা বোরহান উদ্দীন কাসেমী, মুফতী এনামুল হাসান, মাওলানা মেহেদী হাসান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা এহসানুল হক (মোমেনশাহী), মাওলানা শেরজাহান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা ইসমাইল হুসাইন (লক্ষীপুর), মাওলানা নুরুল হুদা (ফেনী), মুফতী লিয়াকত হুসাইন (ফরিদপুর), মুফতী দ্বীন মোহাম্মদ আশরাফ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা বদিউজ্জামান (কুমিল্লা), মাওলানা আসলাম রাহমানী, মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী (সিলেট), মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম মিরপুরী (হবিগঞ্জ), মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, মাওলানা সায়েম খান (নেত্রকোনা), মুফতী শামসুদ্দীন (জামালপুর), মুফতী মনির হোসাইন (শেরপুর), মাওলানা তালহা (নরসিংদী), মুফতী রহমতুল্লাহ বুখারী, মুফতী আলী হোসাইন (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা মুনির হোসাইন (মুন্সিগঞ্জ), মুফতী শহিদুল্লাহ (শরীয়তপুর), মাওলানা আকরাম হোসাইন (মাদারীপুর), মাওলানা তাজুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), মাওলানা আব্দুল হালিম (বরিশাল), মাওলানা মিজানুর রহমান (ভোলা), মাওলানা আব্দুল হক কাউসারী (পটুয়াখালী), মাওলানা রফিকুল ইসলা (বরগুণা), মুফতী ইব্রাহীম খলিল, (কুড়িগ্রাম), মাওলানা নুরুজ্জামান (ঠাকুরগাঁও), মাওলানা আবু বকর (লালমনিরহাট), মাওলানা ইজাজ (পঞ্চগড়), মাওলানা নাসির উদ্দিন (রংপুর), মাওলানা আবদুল বাসেত ( গাইবান্ধা), মাওলানা নজরুল ইসলাম (বগুড়া), মাওলানা নুরুল ইসলাম (টাঙ্গাঈল), মাওলানা আবদুল্লাহ ইদ্রিস (নাটোর), মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী), মাওলানা ফজলুল হক (নওগাঁ), মুফতী আবদুস সালাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), মাওলানা মতিউর রহমান (পাবনা), মাওলানা আবুল হাশেম (সিরাজগঞ্জ), মাওলানা আবদুল হামিদ (কুষ্টিয়া), মাওলানা আজিজুল হক (রাজবাড়ী), মাওলানা ফজলুল হক (মাগুরা), মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ঝিনাইদহ), মাওলানা ইউনুস আলী (যশোর), মুফতী আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া, মুফতী রিয়াজ খান (খুলনা), মাওলানা আবুল হোসাইন (বাগেরহাট), মাওলানা মাহমুবুর রহমান, মুফতী মেরাজুল হক (নড়াইল) প্রমুখ।