| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ ‘পাকিস্তানকে ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে আইএমএফ সম্মত হয়েছে’


‘পাকিস্তানকে ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে আইএমএফ সম্মত হয়েছে’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     30 June, 2023     05:26 PM    


বর্তমানে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে থাকা পাকিস্তানকে অবশেষে ঋণ দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রাথমিকভাবে রাজি হয়েছে। বৈশ্বিক সংস্থাটি পাকিস্তানকে প্রায় তিন বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রায় ৩২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরে)। খবর সিএনএন ও বিবিসির

ঋণের জন্য পাকিস্তানের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন। অবশেষে প্রায় আট মাস পর উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা ঋণের চুক্তি ও শর্তের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে চূড়ান্তভাবে ঋণ পেতে হলে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন লাগবে। সাধারণত ঋণচুক্তির জন্য কর্মকর্তা পর্যায়ে সম্মতি পাওয়া গেলে তা আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদেও অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী সপ্তাহে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদ চুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংস্থাটির পর্ষদে অনুমোদিত হলে ৯ মাসের মধ্যে পাকিস্তান ঋণের পুরো অর্থ পাবে।

AlhamdoLilah!https://t.co/Mv8N4bqZit

— Ishaq Dar (@MIshaqDar50) June 30, 2023

শুক্রবার (৩০ জুন) সকালে প্রাথমিক চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা আসার পরে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এক টুইটে বলেন, সব প্রশংসা আল্লাহর। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসহাক দার জানিয়েছিলেন, যেকোনো সময় আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তির ঘোষণা আসতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি ধাক্কা খেয়েছে পাকিস্তান। বিশেষ করে ২০২২ সালের বিপর্যয়কর বন্যা এবং এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণভাবে অনেক চাপে পড়ে পাকিস্তান। এ রকম অবস্থার মধ্যে সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ দেশটির আর্থিক বাজারকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।

এদিকে পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি এখন ঊর্ধ্বমুখী। গত মে মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে প্রায় ৩৮ শতাংশে পৌঁছেছে। এ ছাড়া পাকিস্তানে বর্তমানে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের কম সময়ের পণ্য আমদানি করা যাবে। অর্থনীতিবিদেরা সাধারণত একটি দেশে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক রিজার্ভ থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন। এ ছাড়া গত এক বছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রা রুপির মূল্য প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে।

পাকিস্তান প্রসঙ্গে আইএমএফের মিশন প্রধান নাথান পোর্টার বলেন, এসব সংকটের সঙ্গে বেশ কিছু নীতিগত ভুল পদক্ষেপের কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এখন সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কয়েক মাস ধরেই দেশটি প্রায় দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফের ঋণ পাকিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দেবে।  আশা করা হচ্ছে, এই ঋণ পেলে পাকিস্তান তার দুর্বল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করে তুলতে পারবে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়া কিন্তু সহজ নয়। এ জন্য মানতে হয় নানা শর্ত। করতে হয় বিভিন্ন সংস্কার। পাকিস্তানে চলমান ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। কিন্তু দেশটি বেশ কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণসংক্রান্ত আলোচনা বারবার স্থগিত হয়েছে।  সম্প্রতি এই ঋণচুক্তি বাস্তবে রূপ দিতে বিভিন্ন শর্ত পালন করতে শুরু করে পাকিস্তান। গত সোমবার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল সুদের হার বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করেছে।

আইএমএফের ঋণ পেলেই যে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাবে—অনেক অর্থনীতিবিদ আবার এমনটা মনে করেন না। যেমন মুডি’স অ্যানালিটিক্সের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ক্যাটরিনা এল বলেন, চুক্তিটি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্দশার অবসানের ইঙ্গিত দেয় না। সীমিত বৈদেশিক রিজার্ভ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব—এসব কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আর এর জন্য বিশেষভাবে আর্থিক খাতে টেকসই শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন।