| |
               

মূল পাতা ইসলাম কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


ড. মুহাম্মদ হারুন আযিযী নদভী     25 June, 2023     10:16 AM    


কিছু দিন পরেই আমরা আল্লাহর নামেই পশু উৎসর্গের মাধ্যমে কুরবানীর ইবাদত আদায় করতে যাচ্ছি। সারা পৃথিবীর মুসলিমরা ১০ ই জিলহজ্জ নিজ নিজ দেশে ও অবস্থানে এই ইবাদত আদায় করবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে এই ইবাদতের ইতিহাস কি তা একটু আমরা জেনে নিলে ভাল হয়। মূলতঃ কুরবানীর ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। যুগ যুগ ধরে মানব ইতিহাসে এর ধারাবাহিকতা বিদ্যমান ছিল। আমরা এখানে সংক্ষিপ্তাকারে এর ইতিহাস পাঠকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।    

সকল শরীয়তেই কুরবানীর বিধান বিদ্যমান ছিল
মানব ইতিহাস যতোটা প্রাচীন ততোটাই প্রাচীন কুরবানীর ইতিহাস। সকল ধর্মে কুরবানীর একটি প্রথা চালু ছিল। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে ইবাদতের একটা অপরিহার্য অংশ ছিল কুরবানী।  আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেনঃ  وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন”। {সূরা হজ্জ-৩৪}

মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম কুরবানী
কুরআন হাদীস দেখলে বুঝা যায়, মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম যে কুরবানী সংগঠিত হয়েছিল, তা হযরত আদম (আঃ) এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এর বর্ণনা দিয়েছেন। সূরা মায়েদার ২৭ থেকে ৩১ আয়াত পর্যন্ত এই কুরবানীর বিবরণ রয়েছে।  আল্লাহ তাআলা বলেনঃ  وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا فَتُقُبِّلَ مِن أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الآخَرِ قَالَ لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ. لَئِن بَسَطتَ إِلَيَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِي مَا أَنَاْ بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لَأَقْتُلَكَ إِنِّي أَخَافُ اللّهَ رَبَّ الْعَالَمِينَ. إِنِّي أُرِيدُ أَن تَبُوءَ بِإِثْمِي وَإِثْمِكَ فَتَكُونَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ وَذَلِكَ جَزَاء الظَّالِمِينَ. فَطَوَّعَتْ لَهُ نَفْسُهُ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُ فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِينَ. فَبَعَثَ اللّهُ غُرَابًا يَبْحَثُ فِي الأَرْضِ لِيُرِيَهُ كَيْفَ يُوَارِي سَوْءةَ أَخِيهِ قَالَ يَا وَيْلَتَا أَعَجَزْتُ أَنْ أَكُونَ مِثْلَ هَـذَا الْغُرَابِ فَأُوَارِيَ سَوْءةَ أَخِي فَأَصْبَحَ مِنَ النَّادِمِينَ . “আপনি তাদেরকে আদমের দু’ পুত্রের ঘটনাটি ঠিকভাবে শুনিয়ে দিন। (তা হচ্ছে এই যে,) যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করলো, তখন তাদের একজনের কুরবানী গৃহীত হল আর অপর জনের কুরবানী গৃহীত হলো না। তখন সে ভাইকে বলল- অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। সে উত্তরে বলল আল্লাহ তো মুত্তাকীদের কুরবানীই কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। নিশ্চয়ই আমি বিশ্ব জগতের পালন কর্তা আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অত:পর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সে কিভাবে সমাহিত করবে। সে বললো, আফসোস! আমি কি এ কাকের সমতুল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সমাহিত করি! অত:পর সে অনুতাপ করতে লাগল”। { সূরা আল মায়িদাহ, ২৭-৩১ আয়াত। }

ইবনে কাসীর রহ. বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদে এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন এবং একে আগের পরের সকল ওলামার সর্বসম্মত উক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন। ঘটনাটি এই : ‘‘যখন আদম ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তাান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ যমজ সন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন এক শ্রেণীর ভাই বোন ছাড়া হযরত আদমের আর কোন সন্তান ছিলনা। অথচ ভাই বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ আদম (আঃ) এর শরীয়তে বিশেষ ভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্ম গ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে কন্যা সহোদরা বোন গণ্য হবে না। তাই তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোনটি ছিল খুবই সুশ্রী-সুন্দরী তার নাম ছিল ‘আকলিমা’ আর হাবিলের সহজাত বোনটি ছিল তুলনামূলক কম সুন্দরী তার নাম ছিল ‘গাজা’। বিবাহের সময় হলে নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত অসুন্দরী কন্যা কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে, আমার সহজাত বোনকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে। হযরত আদম (আঃ) তাঁর শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন।

অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী গৃহীত হবে, সে-ই উক্ত কন্যার পানি গ্রহণ করবে। হযরত আদম (আঃ) এর নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, যে সত্য পথে আছে, তার কুরবানীই গৃহীত হবে। তৎকালে কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নি শিখা এসে কুরবানীকে ভস্মীভূত করে আবার অন্তর্নিহিত হয়ে যেত। যেমন মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:   بِـقُـرْبَـانٍ تَـأكُـلُـهُ الـنَّـارُ  ঐ কুরবানী যাকে আগুন গ্রাস করে নিবে”। {সূরা আলে ইমরান-১৮৩।} আর যে কুরবানীকে অগ্নি ভস্মীভূত করত না, সেটাকে প্রত্যাখ্যাত গণ্য করা হত।  হাবিল ভেড়া, দুম্মা ইত্যাদি পশু পালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষি কাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্যে পেশ করল। অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নি শিখা অবতরণ করে হাবিলের কুরবানীটি ভস্মীভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল তেমনি পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না। তাই সে হাবিলকে হত্যা করার সংকল্প করল এবং এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করে ফেলল’’। {ইবনে কাসীর, মাআ’রেফুল কুরআন} হযরত আদম (আঃ) এর পর সকল উম্মতের মধ্যেই অবিচ্ছিন্ন ভাবে কুরবানীর এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকে এবং খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ পর্যন্ত সকল পূর্বেকার নবীর যুগে বলবৎ ছিল।

হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী 
আদম (আঃ) এর দুই ছেলের কুরবানীর পর কুরআন সব চেয়ে বেশী গুরুত্ব সহকারে যেই কুরবানীর কথা বলেছে তা হল হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী। আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে বিভিন্ন ধরনের কঠিন পরীক্ষা করেছেন। প্রত্যেকটি পরীক্ষায় তিনি পূর্ণ সফলকাম প্রমাণিত হয়েছেন।  ইবরাহীম (আঃ) নুবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে দাওয়াত শুরু করলেন। প্রথমে নিজের পিতাকে তারপর সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিলেন। কিন্তু চাচাত ভাই লূত (আঃ) এবং স্ত্রী সারা (আঃ) ব্যতীত কেউ তাঁর দাওয়াতে লাব্বাইক বলেনি। বরং নমরুদ তাঁকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত করে। এদিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর খলীলের জন্য আগুনকে ফুলবাগীচায় পরিণত করে দেন এবং বলেন-  قُلْنَا يا نَارُ كُوْ نِىْ بَرْدًا وَ سَلَامًا عَلى اِبْرَاهِيْمَ  “আমি বললাম, হে আগুন, তুমি ইবরাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও”। {সূরা আম্বিয়া-৬৯।} তারপর তিনি আল্লাহর আদেশে নিজ জন্মভূমি ইরাক থেকে হিজরত করে ফিলিস্তিনের কেনানে অবস্থান নিলেন। তখন তিনি আল্লাহর কাছে দুআ করলেন।  رَبِّ هَـبْ لِىْ مِـنَ الـصَّالِـحِيْـنَ “হে আল্লাহ আমাকে সৎ পুত্র দান করুন”। {সূরা সাফ্ফাত-১০০।} আল্লাহ তাআলা বললেন- فَـبَـشَّـرْنهُ بِـغُـلـمٍ حَـلِـيْـمٍ  ইবরাহীমকে এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। সেই পুত্র ছিল হযরত ইসমাঈল (আঃ)। যিনি ভুমিষ্ট হলেন তাঁর স্ত্রী হযরত হাজেরা (আঃ) এর থেকে।  অতঃপর আল্লাহর আদেশে প্রিয় পুত্র ইসমাঈল ও তাঁর মাতা হযরত হাজেরা (আঃ) কে মক্কার বিরাণ মরুভূমিতে ছেড়ে আসলেন। মাঝে মধ্যে গিয়ে তিনি তাদের দেখে আসতেন। যখন ইসমাঈল (আঃ) পিতার সাথে চলাফেরা করা এবং তাঁকে সাহায্য করার মত বয়সের হলেন তখন আল্লাহর আদেশ আসল যে, এই পুত্রকে আল্লাহর নামে যবেহ কর। তারপর পিতা-পুত্রের কি কাহিনী হল তা আল্লাহ তাআলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ  فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ ১০২ فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ ১০৩ وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ ১০৪ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ ১০৫ إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ ১০৬ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ১০৭ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ ১০৮.   ‘অতঃপর তিনি (ইসমাঈল আঃ) যখন তাঁর সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছলেন তখন তিনি (ইবরাহীম আঃ) বললেনঃ হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি। সুতরাং তুমি চিন্তা ভাবনা করে দেখ এবং এ স্বপ্নের ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? তা বল। তিনি (ইসমাঈল আঃ) বললেনঃ হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। অবশেষে যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের কে সোপর্দ করলেন এরং ইবরাহীম (আঃ) পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন (যবেহ করার জন্যে), তখন আমরা তাকে সম্বোধন করে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি সপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। আমরা সৎকর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত এ এক সুস্পষ্ট কঠিন পরীক্ষা। আর আমরা বিরাট কুরবানী ফিদিয়া স্বরূপ দিয়ে তাকে (ইসমাঈলকে) উদ্ধার করেছি’। {সূরা সাফ্ফাত ১০২-১০৭।} অতঃপর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিলেন এখন পুত্রকে ছেড়ে দিন এবং আপনার নিকট যে দুম্বাটি দাঁড়ানো রয়েছে, পুত্রের পরিবর্তে সেটাকে যবেহ করুন। তখন ইবরাহীম (আঃ) পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখেন, একটি হৃষ্ট পুষ্ট দুম্বা দাঁড়ানো আছে। আল্লাহর শোকর আদায় করে তিনি সেই দুম্বাটিকে যবেহ করলেন। এটাই সেই কুরবানী যা আল্লাহর দরবারে এতই প্রিয় ও মাকবুল হয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা পরবর্তী সকল উম্মতের মধ্যে তা অবিস্মরণীয় রূপে বিরাজমান রাখার ব্যবস্থা করে দিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْاخِرِيْنَ  “আর আমরা ভবিষ্যতের উম্মতের মধ্যে ইবরাহীমের এ সুন্নাত স্মরণীয় করে রাখলাম”। {সূরা সাফ্ফাতঃ ১০৮।}

বিশ্বনবীর প্রতি কুরবানীর নির্দেশ
কুরআন মজীদে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নামায আদায় করার মতো কুরবানী করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে: فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ “তোমার রবের জন্য নামায পড় এবং কুরবানী করো”। {সূরা কাউসার -০২} কুরবানী ও জীবন দানের প্রেরণা ও চেতনা সমগ্র জীবনে জাগ্রত রাখার জন্যে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আরো নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-  قُلْ اِنَّ صَلوتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ لِلّهِ رَبِّ الْعلَمِيْنَ .لَا شَرِيْكَ لَه وَبِذ لِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ-  “বলুন! হে মুহাম্মদ! আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যে। তাঁর কোন শরীক নেই। আমাকে তারই নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং আমি সকলের আগে তাঁর অনুগত ও ফরমাবরদার”। {সূরা আনআম-১৬২} হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেনঃ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় দশ বৎসর অবস্থান করেন। এ সময় তিনি প্রতি বছর কুরবানী করতেন। { সুনানে আত তিরমিযী}

আমাদের কুরবানী সুন্নাতে ইবরাহীমী
কুরবানী ইবাদত হিসেবে যদিও আদম আ. এর যুগ হতে হয়ে আসছে কিন্তু পরবর্তীতে হযরত ইবরাহীম আ. এর এক ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে শুরু হয়েছে। আমরা হযরত ইবরাহীম আ. এর মিল্লাতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। এ মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মুসলিম জাতির পিতা হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম আ.। তিনি যেমন আল্লাহর নির্দেশে জীবনের সবচাইতে প্রিয় বস্তু- পুত্র ইসমাঈলকে তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে প্রস্তুত ছিলেন, ঈদুল আয্হার দিন মুসলমানরাও তেমনি পশু কুরবানীর মাধ্যমে নিজেদের প্রিয়তম জান-মাল আল্লাহর পথে কুরবানী করার সাক্ষ্য প্রদান করেন। মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সেই মহত্ব ও মাকবুল কুরবানীকে শাশ্বত বিধানে রূপদানের জন্যেই আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দিনে মুসলমানদেরকে ঈদুল আয্হা উপহার দিয়েছেন এবং এ কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই হল কুরবানীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক নিয়তে কুরবানী করার তৌফীক দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর, চট্টগ্রাম