রহমত নিউজ ডেস্ক 14 June, 2023 03:59 PM
পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান, অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন বলেছেন, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ বিষয়ে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিট ও কমিউনিটি পুলিশিং। বাংলাদেশ একটা সময় জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক ইনডেক্সে হাইরিস্কের দেশ ছিল। সেখান থেকে লো রিস্কের দেশে পরিণত হয়েছে।
বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর গুলশান-২ এ দ্য ওয়েস্টিন হোটেলে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) ও জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইউএনওডিসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় কনসালটেশন কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন । অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রতিনিধি মিস্টার ব্রাডলি কোর্টস, এটিইউয়ের ডিআইজি (অ্যাডমিন) মফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ, ঢাকার ইউএনওডিসির অফিসার ইনচার্জ শাহ মোহাম্মদ নাহিয়ান এটিইউর ডিআইজি (অপারেশনস) মনিরুজ্জামান, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এটিইউ প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান একটি পর্যালোচনামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামক ওই প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের দিক থেকে পাঁচটি ক্যাটাগরি করেছে। তা হলো, ভেরি হাই রিস্ক ক্যাটাগরি, হাই রিস্ক ক্যাটাগরি, মিডিয়াম রিস্ক ক্যাটাগরি, রিস্ক ক্যাটাগরি ও লো রিস্ক ক্যাটাগরি। ২০১৬-১৭ সালে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন আমরা হাই রিস্ক ক্যাটাগরিতে ছিলাম। ২০১৬ সালে ছিলাম ২২তম। ২০১৭ সালে ছিলাম ২১তম। অর্থাৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একটি ছিলাম। এরপর থেকে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে আমাদের গ্লোবাল ইনডেক্সে উন্নতি ঘটে। ধীরে ধীরে আমরা হাই রিস্ক থেকে মিডিয়াম রিস্কে এবং সর্বশেষ এ বছর আমরা লো রিস্ক ক্যাটাগরিতে ধাবিত হয়েছি। আমাদের অবস্থান এখন ৪৩তম। রেটিং পয়েন্ট ৩ দশমিক ৮২। উপমহাদেশে এর নিচে রয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান। এমনকি ভারতও রয়েছে আমাদের নিচে ১৩তম অবস্থানে। উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জামানি ও যুক্তরাজ্যও আছে আমাদের চেয়ে বেশি রিস্কে। চারটি দেশই রয়েছে মিডিয়াম রিস্কে। আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি। যা বিশ্বের অনেক দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। শুধু তাই নয়, যে দেশটি থেকে আমরা আলাদা হয়েছি স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের চেয়ে শুধু ইনডেক্সে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থানেও পাকিস্তান থেকে আমরা অনেক বেশি নিরাপদ।
তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী লেখকদের ওপর হামলা শুরু করে। সঙ্গে যোগ দেয় নিউ জেএমবি। ২০১৬ সালে হলি আর্টিসান হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। ২০১৯ সালে এটিইউ কার্যক্রম শুরু করে একটি বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে। প্রথমে মাত্র ৬০০ জনবলে শুরু। এরপর কোভিড মহামারি এরপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু। সারাদেশেই অর্থনৈতিক কৃচ্ছ সাধন নীতি গ্রহণ করা হয়। যে কারণে এটিইউ আর সম্প্রসারণে যেতে পারেনি। সীমিত অবস্থানে থেকেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেড় শতাধিক অভিযানে ৩০০ জঙ্গি গ্রেফতার করেছে এটিইউ। অনেক সাজাপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধীসহ সেনসেশনাল মামলার আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। সফট ও হার্ট অ্যাপ্রোচের আলোকে কাজ করছে এটিইউ। পাশাপাশি সচেতনতায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অনেক বেশি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। কিভাবে জঙ্গি শনাক্ত করা যায়, শিক্ষকদের দায়িত্ব কি? ছেলে-মেয়েদের চলাফেরায় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তা সচেতন করা সম্ভব। বিট ও কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে জঙ্গিবাদ দমন করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।