| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়’


‘বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়’


রহমত নিউজ ডেস্ক     11 June, 2023     11:31 AM    


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এ ছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। বাজেটে আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ বাড়াতে হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যা অবাস্তব।

শনিবার (১০ জুন) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে ‘এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে কিনা’ বিষয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতিত্ব করবেন।  ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এসএম মোর্শেদ, সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন, দৌলত আক্তার মালা ও বাবু কামরুজ্জামান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র দেয়া হয়।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জনগণের জন্যই বাজেট দেওয়া হলেও প্রতিটি নাগরিককে বাজেট প্রণয়নের মঙ্গে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে জাতীয় সংসদে জনগণের নির্বাচনী প্রতিনিধির মাধ্যমে বাজেট প্রণয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা। সংসদে আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করার সুযোগ থাকে। সরকারি দলে থেকেও অনেক যৌক্তিক বিষয়ে সমালোচনা করা যায়। বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ হবে প্রাক্কলন করে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরে বেসকারি বিনিয়োগ হার (সাময়িক ) ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এখান থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৬ শতাংশ বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাই জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও খুবই কঠিন হবে।

তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত বড় ধরনের সংকটে থাকলেও তা কাটিয়ে উঠতে বাজেটে তেমন কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেই। বর্তমানে এ খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া। তাছাড়া সার্বিকভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অভাবে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন গ্রাহকরা। ফলে আমানতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতে বেসরকারি বিনিয়োগ আরও কমে যেতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর মাধ্যমে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেতে পারে। আবার বেসরকারি খাতের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হলে বিনিয়োগ কমে যাবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল শেষে দেশে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু সরকারের এ তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উঠে এসেছে, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ। বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে রাখার কথা বলা হলেও তা অর্জনের সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আশার কথা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে  কিছু জিনিসপত্রের দাম  কমে আসছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ থাকা উচিত ছিল। ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য সামাজিক অসন্তোষ তৈরি করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে হিসাব প্রকাশ করে তা অতিরঞ্জিত এবং আন্তর্জাতিক মানের নয়।