রহমত নিউজ ডেস্ক 30 May, 2023 03:42 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামের সোনালি যুগে বিশ্বসভ্যতা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোল শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানদের এক গৌরবময় অবদান ছিল। মুসলমানরা শৌর্য-বীর্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল তা আমাদের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। নিজেদের মধ্যে কলহ, একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধার অভাব এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে পড়াসহ নানা কারণে আজ মুসলমানরা পিছিয়ে আছে। এই সম্মান ফিরে পেতে মুসলমানদের আবার শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে হবে। আজ মুসলিমদের দখলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদকে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
আজ (৩০ মে) মঙ্গলবার গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি-আইইউটি ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবর্তনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সফররত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন-ওআইসির মহাসচিব ও আইইউটির চ্যান্সেলর হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক যুগে দুঃখজনকভাবে মুসলিম বিশ্ব মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও উন্নয়নে তাদের অপর্যাপ্ত অবদানকে প্রতিফলিত করে। এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে মুসলমানদের আরও প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে তারা বেশি করে অবদান রাখতে পারেন। বিশেষ করে যখন বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং অন্যান্য প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ আইইউটির মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সাফল্যের অংশীদার এবং এ প্রতিষ্ঠানের স্বাগতিক দেশ হতে পেরে গর্বিত। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা হলো শ্রেষ্ঠত্ব লাভের জন্য একটি আজীবন সাধনা। আমি জেনে আনন্দিত যে, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা সামনে রেখে আইইউটি ইসলামী বিশ্বের গুণগত পরিবর্তনে সর্বদা অবদান রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইইউটির গ্র্যাজুয়েটরা প্রকৌশল ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ এবং ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রেই নয়, বরং সারা বিশ্বে তাদের অবদান রেখে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমি আশা করি, আজকের স্নাতকরা আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য ছাত্রীনিবাস নির্মাণে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। আমি আজ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী স্নাতকের উপস্থিতি দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, নারী স্নাতকরা তাদের লব্ধ জ্ঞানের দ্বারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আমি আরও নিশ্চিত করছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ভবিষ্যতেও আইইউটির বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আমি মনে করি, একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইইউটির স্বীকৃতিকে নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর সক্ষমতা প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গর্বিত স্বাগতিক দেশ এবং এর পরিচালনায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে আসছে। ভবিষ্যতেও আমরা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।