মফস্বল ডেস্ক 24 May, 2023 07:02 AM
দেশের বিভিন্ন জেলায় এক দিনে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২১ জন। মঙ্গলবার (২৩ মে) সকাল থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে নরসিংদীতে পাঁচজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজন, পাবনায় দুইজন, কুড়িগ্রামে দুইজন মারা গেছেন। এছাড়া নওগাঁ, নেত্রকোনা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও কিশোরগঞ্জে একজন করে মারা গেছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, মারা যাওয়া বেশির ভাগই কৃষক। মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়।
নরসিংদীতে ৫ জনের মৃত্যু: জেলায় বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা সদর, রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই ঘটনা ঘটে। রায়পুরা উপজেলার নিহতরা হলেন-শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫) ও নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২)। মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া (২৫), শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০), নরসিংদী শহরের পশ্চিমকান্দাপাড়া মহল্লার সুকুমার রায়ের ছেলে শুপ্তকর (১৪)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজনের মৃত্যু: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় দুই কৃষকসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। নাসিরনগরে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামে একজন ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে। গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অপরদিকে একই উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে মেদির হাওরে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অলি মিয়া নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তিনি আশুরাইল গ্রামের নাজিমুদ্দিনের ছেলে।
এদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে মিত্র চাকমা বলেন, বজ্রপাতে মনু মিয়া নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে উপজেলার মানিকপুরে তিনি জমিতে কাজ করছিলেন। তখন বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় দুই কৃষকসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নে দুপুর ২টার দিকে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামে এক ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতের বাড়ি গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে। অপরদিকে একই উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে মেদির হাওরে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে মোজাম্মেল হক নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। নিহত মোজাম্মেল হক আশুরাইল গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে।
পাবনায় দুই শ্রমিকের মৃত্যু: মাঠে কাজ করা অবস্থায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে ধান কাটার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকরা হলেন- জেলার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা শাকিল হোসেন (১৯) ও রমিজ উদ্দিন (৩০)। এ সময় বজ্রপাতে আরও অন্তত ১৩ জন আহত হয়। আহতদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা আহত শ্রমিকরা জানান, দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের বাওনজান এলাকায় বোরো ধান কাটছিলেন ১৫ জন শ্রমিক। ওই এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা পাশের একটি উন্মুক্ত খোলা ঘরে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পরে বজ্রপাতে ওই ঘরে অবস্থান করা ৫ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। এ সময় অন্যান্য শ্রমিকরা তাদেরকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক দুই শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন।
কুড়িগ্রামে দুই কৃষকের মৃত্যু: কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা কৃষকরা হলেন, উলিপুর থেতরাইয়ের মো. শাহাজালাল (৪৫) ও চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের অবরু শেখ (৫০)। এসময় চিলমারীতে আরও ৩ কৃষক আহত হন। আহতরা উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া জানান, চর উদনায় ধান কাটতে গিয়ে চার কৃষক বজ্রপাতে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে অবরু শেখ মারা যান। বাকিদের উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- ফুলবাবু, আম্মর আলী ও আশরাফুল ইসলাম।
নয় জেলায় আরও ৯ জনের মৃত্যু: এছাড়া নওগাঁ, নেত্রকোনা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও কিশোরগঞ্জে একজন করে বজ্রপাতে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নওগাঁর রানীনগরে বজ্রপাতে জামিল প্রামাণিক (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জামিল উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার মৃত আজাদ প্রামাণিকের ছেলে।
নেত্রকোনার মদনে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে জয়নাল আবেদিন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ মে) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের সামনের বিলে মাছ ধরতে গেলে সেখানে বজ্রপাতে মারা যান তিনি। জয়নাল আবেদিন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
চাঁদপুর সদর উপজেলায় বজ্রপাতে মো. হাছান মিজি (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ছোটসুন্দর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাছান মিজি ওই গ্রামের গফুর মিজি বাড়ির মৃত মো. কলোমদ্দিন মিজির ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন।
পটুয়াখালীর দশমিনায় মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ মে) বিকেলে বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত আব্দুর রউফ হাওলাদার উপজেলার সদর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের কাঠাখালি গ্রামের চাঁনমিয়া হাওলাদার বাড়ির মৃত আলী হাওলাদারের ছেলে।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় বজ্রপাতের শব্দে নৌকা থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতের আহত হয়েছেন এক কৃষক। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাদেহরিপুর গ্রামের পাশে বরইয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে বলে জয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী জানান। নিহত ১৫ বছর বয়সি ওমর ফারুক ওই গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে। সে জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আহত কৃষক আবুল কাশেম একই গ্রামের বাসিন্দা।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় বজ্রপাতে মো. মাঈনুদ্দিন মান্দ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের রশিদ সরদার পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাঈনুদ্দিন মান্দ ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ঢালী কান্দি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার মান্দের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী।
এছাড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, দিনাজপুরের সদর উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বজ্রপাতে একজন করে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। -নিউজ২৪।