রহমত নিউজ 21 May, 2023 08:46 PM
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় এ পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা তা পূরণ হচ্ছে না। মানুষের আকাঙ্ক্ষা– এ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হোক। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এই পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পাঁচ সিটির আগের ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক অভিযোগ ও প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। পাঁচটি সিটি নির্বাচনে ‘নিয়ন্ত্রণ’ করার এক ধরনের প্রচেষ্টা লক্ষ করা গিয়েছিল।
আজ (২১ মে) রবিবার সুজনের উদ্যোগে ‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন: প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি এসব কথা বলেন। এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন সুজন সহ-সভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল অধ্যাপক, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, এখন দেখার বিষয় এ নির্বাচনে কি বিগত নির্বাচনের নেতিবাচক অনুষঙ্গগুলো থাকবে, না কি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হবে। নাগরিক সংগঠন হিসেবে আসন্ন পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষণ ও সংশয় রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির জন্য কাজ করবে বলা হলেও এখনো পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সব দলকে আস্থায় আনা সম্ভব কি না, সে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার কমিশনের আস্থার সংকট কাটানোর ব্যাপারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আমাদের আশঙ্কা। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে বার বার তাদের মতামত দিয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসার জন্য কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তবুও সবার মতামতকে উপেক্ষা করে ইভিএম ব্যবহার করে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে প্রশ্নবোধক থেকে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যেই গাজীপুরসহ কোনো কোনো সিটি কর্পোরেশনে আচরণবিধি ভঙ্গ করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন- গাজীপুর নির্বাচনে অনেক প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও আচরণবিধি ভঙ্গের খবর পাওয়া গেছে। তবে রিটার্নিং অফিসাররা আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য বিভিন্ন প্রার্থীকে শোকজ ও জরিমানা করছেন, যা ইতিবাচক হলেও কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিরোধী দলের সমাবেশে পুলিশের বাধা থেকে সৃষ্ট সহিংসতা, এসব থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সমতল ক্ষেত্র তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে জনগণের মনে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। আগে প্রার্থী কর্তৃক রিটার্নিং অফিসারের কাছে হলফনামা জমা দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই কমিশনের ওয়েবসাইটে তা দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এবারের গাজীপুর নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ হয়ে যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তার ওয়েবসাইটে হলফনামা আপলোড করেছে। ফলে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়, পেশা, সম্পদ, ঋণ ও আয়করের তথ্য বিশ্লেষণ করে জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাচ্ছে না। ভোটাররা যাতে প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-বুঝে ভোট দিতে পারে সেজন্য প্রার্থীদের তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। কমিশন এ কাজটিকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে কি না, সেটি নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তদুপরি সুজন-এর পক্ষ থেকে প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য যাচাই করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বার বার আহ্বান জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।