রহমত নিউজ ডেস্ক 16 May, 2023 12:14 PM
বিশ্বকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অংশীদারিত্বকে সুসংহত এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে একটি নিরাপদ এবং উত্তম জায়গায় পরিণত করতে আসুন, আমরা হাতে হাত মেলাই।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের ৭৯তম বার্ষিক অধিবেশনে ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পদক্ষেপ ত্বরান্বিতকরণ’ বিষয়ে একটি রেকর্ডকৃত ভাষণ প্রচারিত হয়। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনই সাম্প্রতিক সময়ের আসল চ্যালেঞ্জ, আমি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলে প্রস্তাব করতে চাই, যা এস্ক্যাপ বিবেচনায় নিতে পারে। জলবায়ু-সংরক্ষিত উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষ করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের এনএপি বাস্তবায়নের পাশাপাশি এনডিসি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। উন্নয়নশীল স্তরে উন্নীত দেশগুলোর জলবায়ুু সহিষ্ণু প্রবৃদ্ধিতে উত্তরণের জন্য জ্ঞান-বিনিময়, প্রযুক্তি স্থানান্তর, উদ্ভাবন-চালিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহনে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা, ডিজিটাল বাণিজ্য ও আইটি-সক্ষম পরিষেবা সুলভ হওয়া উচিত। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে টেকসই উন্নয়নের জন্য জলবায়ু পদক্ষেপের প্রণোদনায় উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার, বিশেষ করে বর্তমান অংশীদারিত্ব ত্বরান্বিত করতে এবং নতুন অংশীদারিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যার আবাসভূমি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ুু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করার কারণে এই অঞ্চলটি বর্ধিত হারে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যদিও বৈশ্বিক নির্গমনে এর অবদান খুবই নগণ্য। তাই আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন প্রচেষ্টা চালানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য তারা ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ জলবায়ুু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত এ তহবিলের অধীনে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮৫১টি প্রকল্প কার্যকর করা হয়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশ ইউএনএফসিসিসি’র কাছে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা-ন্যাপ জমা দিয়েছে। এটি ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের সঙ্গে ৮টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র জুড়ে ১১৩টি পদক্ষেপ চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে ইউএনএফসিসিসি’-তে একটি উচ্চাভিলাষী ও হালনাগাদকৃত জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জমা দিয়েছে। আমরা একটি নিরাপদ, জলবায়ুু-সহনশীল সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ অর্জনের জন্য ১০০ বছরের কৌশলগত পরিকল্পনা ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ গ্রহণ করেছি।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথ ঝুঁকিপূর্ণতা থেকে স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে যেতে দেশটি ২০২২ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ‘মুজিব জলবায়ুু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, ঘন ঘন জলবায়ুু-জনিত বিপর্যয় আমাদের সাবলীল উত্তরণ ব্যাহত করতে পারে। জলবায়ুু অভিযোজন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তাই আমার সরকারের নীতিগত অগ্রাধিকার।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি কেবল গুরুতর নিরাপত্তা হুমকিরই সৃষ্টি করছে না, বরং একটি মারাত্মক পরিবেশগত অবক্ষয়ও ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারে তাদের নিজভূমিতে ফেরত পাঠানোর জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।’