| |
               

মূল পাতা জাতীয় বিইআরসিকে মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার ফিরিয়ে দেওয়াসহ ১৩ দফা দাবি ক্যাবের


বিইআরসিকে মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার ফিরিয়ে দেওয়াসহ ১৩ দফা দাবি ক্যাবের


রহমত নিউজ ডেস্ক     29 April, 2023     05:32 PM    


বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যাতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।

আজ (২৯ এপ্রিল) শনিবার সিরডাপ মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, রাশেদ খান মেনন এমপি। বক্তব্য রাখেন ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান এবং গবেষণা কমিশনের সদস্য এম এম আকাশ, বদরুল ইমাম, সুশান্ত কুমার দাশ, ইকবাল হাবিব, আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বাসদের সহ সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিডির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, শামসুল হুদা, দিলীপ বড়ুয়া, মনোয়ার মোস্তফা প্রমুখ।

প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে ক্যাবের ১৩ দফা দাবিগুলো হলো-

১. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যে কোনও ধরনের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হতে হবে।

২. সরকার ব্যাক্তিখাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং সরকারি মালিকানাধীন কোনও কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না, আইন দ্বারা তা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতভুক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সব কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয় বিভাগের সব আমলাদের প্রত্যাহার করতে হবে।

৪. নিজস্ব কারিগরি জনবল দ্বারা স্বাধীনভাবে উভয় খাতের কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। সে জন্য আপস্ট্রিম রেগুলেটর হিসেবে মন্ত্রণালয়কে শুধুমাত্র বিধি ও নীতি প্রণয়ন এবং আইন, বিধি অনুসরণ ও রেগুলেটরি আদেশগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসনিক নজরদারি ও লাইসেন্সধারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।

৫. মুনাফা ছাড়া কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারি মালিকানায় আসতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা দেবে।

৬. গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হিতে হবে।

৭. প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে।

৮. জলবায়ু তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৯. বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

১০. জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীলতা তহবিল গঠিতে হতে হবে।

১১. ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থি হওয়ায় দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ আইন) ২০১০ রদ করতে হবে এবং বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ সংশোধনক্রমে সংযোজিত ধারা ৩৪ক রহিত করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

১২. বিদ্য্যৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সম্পাদিত সব চুক্তি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদনের লক্ষ্যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মডেল চুক্তি মতে হতে হবে।

১৩. ইতোমধ্যে বাপেক্স ও সান্তোষের মধ্যে মগনামা-২ অনুসন্ধান কূপ খননে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি, বিইআরবি ও সামিট পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি এবং বিপিডিবি ও সামিট পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে সম্পাদিত মেঘনাঘাট পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি বেআইনি ও জনস্বার্থ বিরোধী এবং জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থি প্রতীয়মান হওয়ায় এ সব চুক্রি বাতিল করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, ইনডেমনিটি একটি অসভ্য আইন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ইনডেমনিটি থাকতে পারে না। অপরাধ করলে বিচার করা যাবে না, এটা কোনও সভ্য সমাজে চলতে পারে না। এখন বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু ব্যবহার করতে পারছি না। বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, এলএনজি লবি অনেক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। লুণ্ঠনবৃত্তি বিগত সরকারের মতো অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সংসদ যে ভূমিকা পালন করার কথা, দুঃখজনক হলেও সত্য সংসদ সঠিকভাবে ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. শামসুল আলম বলেন, উইন্ড ম্যাপিং অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ৩০ হাজার মেগাওয়াট। ভারতে এখন বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের মূল্যহার কমবেশি ৩ রুপি। ভারত তার পরিকল্পনায় বলছে ২০৩০ সাল নাগাদ সৌর বিদ্যুতের মূল্যহার ১.৯ থেকে ২.৬ রুপিতে নেমে আসবে। আর বায়ু বিদ্যুৎ ২.৩ থেকে ২.৬ রুপিতে পাওয়া যাবে। সেখানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌর বিদ্যুৎ ৯.৯৯ টাকা আর বায়ু বিদ্যুতের চুক্তি করেছে ১৩.২০ টাকায়। কারিগরি সক্ষমতার উন্নয়ন ও বিনিয়োগ ব্যায়ের ন্যায্যতা নিশ্চিত হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাম ভারতের মতো হতো। বিদ্যুতের কমবেশি ৭ শতাংশ হারে সরবরাহ বৃদ্ধি হলেও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ১২ শতাংশ। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে করে ভোক্তারা অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়ছে। গ্যাস বন্টনে সরকারি খাত বৈষম্যের শিকার। দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কেনা হচ্ছে ১.০৩ টাকায়, আর সমপরিমাণ এলএনজি আমদানিতে ব্যায় করা হচ্ছে ৮৩ টাকা। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধি নেই বললেই চলে। অথচ তহবিলের ৬৫ শতাংশ অর্থ অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, সম্প্রতি যে সব গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে সবগুলো করেছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স। সেই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নতোলা অবান্তর। ইউএসজিএস তাদের এক সার্ভে রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশে আরও ৩২ টিসিএফ গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। বর্তমানে বছরে ১ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে সে হিসেবে আরও ৩২ বছরের মজুদ রয়েছে। দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম সঠিক গতিতে না হওয়ায় আজকের এই সংকট। অচলাবস্থার কারণেই আজকে চড়াদামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। দেশীয় গ্যাস তুললে যে লাভ তার চেয়ে না তুললে বেশি লাভ। আমদানি করলে কমিশনের বিষয় থাকতে পারে। এটা শুধু আজকে থেকে নয়, ঐতিহাসিকভাবেই অনুসন্ধানে স্থবিরতা বিদ্যমান। সরকার পরিবর্তন হলে একটা আশা করা হয়, কিন্তু সেভাবে পরিবর্তন হয়নি। বরং পূর্বের ধারার সঙ্গে নতুন ধারা আমদানি যুক্ত করা হয়েছে। এই অবস্থা থাকলে ৩০ সালে গ্যাস খাত পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।