রহমত নিউজ 18 March, 2023 12:03 PM
জ্বালানি তেলের দাম এবং ডলার সঙ্কটে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশে এমএস (মাইল্ড স্টিল) রডের দাম টন প্রতি ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্মাণের এখন ভর মৌসুম চলছে। এই সময়ে ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের খরচও বাড়ছে। বাড়তি দাম তুলতে না পেরে সরকারি নির্মীয়মাণ প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখছেন ঠিকাদাররা। দাম বাড়ার পেছনে তিনটি বড় কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঋণপত্র সঙ্কটের কারণে স্ক্র্যাপ বা পুরনো জাহাজ আমদানি একেবারেই কমে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, ডলারের বিনিময়মূল্য বেশি থাকা এবং তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া। এ সমস্যার আপাতত কোনো সমাধান মিলছে না বলেই দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন রড উৎপাদন ও বিপণনে জড়িত ব্যবসায়ীরা।
যদিও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যে, ৬০ গ্রেডের এমএস রডের দাম গত সোমবার ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা থাকলেও গত মঙ্গলবার প্রতি টন ৯২ হাজার ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। কেএসআরএমের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, তারা মিল গেটে প্রতি টন রড বিক্রি করছেন ৯৭ হাজার টাকায়। মিল গেটের মূল্যের সাথে পরিবহন, লোডিং এবং আনলোডিংয়ের মতো অন্যান্য খরচ যোগ করা হলে, ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য প্রতি টন ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বিএসআরএম মিল গেটে প্রতি টন রড বিক্রি করছে ৯৮ হাজার ৫০০ টাকায়।
উৎপাদকদের মতে, ৬০ গ্রেডের রডের উৎপাদন খরচ বেড়ে টনপ্রতি ১ লাখ ৩৫৬০ টাকায় পৌঁছেছে। তাই তারা দাম সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, দাম বাড়ার পরও ভোক্তারা পরিস্থিতি বুঝে রড কিনছেন বলে বিক্রিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না।
ইস্পাত উৎপাদনে শীর্ষে থাকা বিএসআরএমের ডিএমডি তপন সেনগুপ্ত বলেন, ঋণপত্র সঙ্কটের কারণে পুরনো জাহাজ আসা কমেছে, একই সঙ্গে ধস নেমেছে স্ক্র্যাপ বা টুকরা লোহা আমদানিতে। এই কাঁচামাল না থাকায় অনেক ছোট কারখানা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল কিনতে হচ্ছে টনপ্রতি ৭১ হাজার ৫০০ টাকায়; সেই কাঁচামাল দিয়ে রড উৎপাদন করতে গেলে প্রতি টন বিক্রি করতে হবে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার ওপরে। কারণ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। এর প্রভাবে রডের দামও বেড়েছে।
সূত্র মতে, রড উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে পুরনো টুকরা লোহা, যার বেশির ভাগই আমদানি করে মেটানো হয়। এর বাইরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চাহিদা মেটানো হয় দেশের জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ড থেকে। ঋণপত্র সংকটের কারণে এখন স্ক্র্যাপ তো আসছেই না, সেই সঙ্গে ইয়ার্ডে পুরনো জাহাজ আসায়ও ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকারস অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ২৭ লাখ টন স্ক্র্যাপ এসেছে জাহাজ ভেঙে। ২০২২ সালে এসেছে মাত্র ১১ লাখ টন। আর এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালে সাত-আট লাখ টনের বেশি হবে না। ইয়ার্ডে জাহাজ না আসায় স্থানীয়ভাবেও কাঁচামাল জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, আমার ইয়ার্ডের সক্ষমতা ৮০ হাজার টনের, কিন্তু ইয়ার্ডে আছে মাত্র সাড়ে চার হাজার টন। আমি কাঁচামালই যদি না পাই, তাহলে ইয়ার্ড সচল রাখব কেমনে? আমাদের ১৩০টি ইয়ার্ডের মধ্যে চালু আছে মাত্র ৩৫টি। তিনিও মনে করেন পরিস্থিতি উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ঋণপত্র খোলায় সহযোগিতা করা।
-ইনকিলাব অনলাইন