| |
               

মূল পাতা ইসলাম কাদিয়ানীদের উৎপত্তি, ভ্রান্ত আক্বিদাহ, অমুসলিম ঘোষণা


কাদিয়ানীদের উৎপত্তি, ভ্রান্ত আক্বিদাহ, অমুসলিম ঘোষণা


মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান     04 March, 2023     07:09 PM    


ইসলাম আল্লাহতায়ালার নাযিলকৃত মনোনীত সর্বশেষ ধর্ম এবং ইসলামী বিধিবিধান সর্বশেষ বিধিবিধান। সকল মুসলমানদের বিশ্বাস ও ঈমান হলো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশ্বজাহানের পালনকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অর্পিত ইসলামী বিধিবিধানই সমগ্র পৃথিবী তথা কিয়ামত পর্যন্ত আগত প্রতিটি মানবজাতির জন্য একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান।  ইসলামী জীবনবিধানের ভিত্তি কোরআন ও হাদিসের সমন্বয়ে ইসলামী জ্ঞান মানবজাতির প্রতিটি মুহূর্তে অত্যাবশ্যক।  প্রত্যেক জমানায় এমন কিছু মাসয়ালা থাকে যা মুসলমানদেরকে উলামায়ে কেরাম, হাদিস বিশারদ ও ইসলামী আইনবিদ থেকে তার সমাধান পাওয়া যায়। তন্মধ্যে আকায়েদে খতমে নবুওয়ত মাসয়ালাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসয়ালা।আকায়েদে খতমে নবুওয়ত তথা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী এই মাসয়ালা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। 

মুসলিম জাতির বিশ্বাস হযরত আদম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম নবী এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী।  মুসলমানদের এই বিশ্বাস ও ঈমাণকে ভঙ্গ করার জন্য সময়ে সময়ে কিছু সংখ্যক মিথ্যুক নবী দাবি করে ইসলামী আকিদাহকে ধ্বংস করার জন্য এবং মুসলমানদের ঈমাণ হারা করে ইসলাম উৎখাতের সুগভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।  ইসলামের মূল ভিত্তি ই হলো খতমে নবুওয়ত, যারাহযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশেষ নবী মানবে না তারা কোনো ভাবেই মুসলমান হতে পারে না।  যদি কেউ খতমে নবুওয়ত আকিদাহর বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে তার ঈমাণের মধ্যে ও ত্রুটি বিচ্যুতি আসে এবং সে কাফের এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।  আল্লাহর একাত্ববাদের প্রতি যেমন ঈমাণ রাখতে হবে তেমনিভাবে মুসলমানদের এ বিশ্বাস ও থাকতে হবে যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তার পরে আর কোনো নবী আসবে না।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন শরিফে এরশাদ করে বলেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন,বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও নবীগণদের সমাপ্তকারী। (সুরা আহযাব,আয়াত -৪০)। মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। (সুরা নূর,আয়াত-৬২)। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমিই সর্বশেষ নবী,আমার পর আর কোনো নবী আসবে না। (আল হাদীস)। 

নবুওয়ত ও রিসালাত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর ই সমাপ্তি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাযিলকৃত আল কোরআন ই সর্বশেষ কিতাব। তার উম্মতই সর্বশেষ উম্মত। তার উপর অর্পিত বিধান ই সর্বশেষ বিধান।  যে ব্যক্তিহযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে নবীর দাবি করবে সে মিথ্যুক, ভন্ড ও প্রতারক। কিন্তু তার পরে ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পরে যুগে যুগে অনেক ভন্ড নবীর আবির্ভাব হয়েছে। তার মধ্যে সর্বশেষ মিথ্যা নবীর দাবি করেন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। ইংরেজদের প্ররোচনায় প্রথমে নিজেকে মাহদী,তারপর যিল্লি নবী ও সর্বশেষ নবুওয়তের দাবি করেন।তার অনুসারীদেরকেই কাদিয়ানী বলা হয়। 

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের আবির্ভাব

মুসলিম জাতি প্রায় ৮শত বৎসর অত্যন্ত সগৌরবে ভারতবর্ষ শাসন করে।পরবর্তীতে শাসক শ্রেণির ধর্মীয় উদাসীনতা, নৈতিক অধঃপতন ভোগ বিলাসের জীবন যাত্রার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ উপমহাদেশে নেমে আসে বিপর্যয়ের ঘনঘটা। মুসলিম জাতি নিজ স্বার্থ ও গৌরব উজ্জ্বল ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে শাসক শ্রেণি নিজেদের পারস্পরিক স্বার্থ হাসিলের প্রতিযোগিতায় যখন বিভোর তখন এই মোক্ষম সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ও আদর্শ বিবর্জিত কিছু সংখ্যক উচ্চ বিলাসী মুসলিম নামধারী চক্রের কাধে সওয়ার হয়ে ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠী মুসলিম জাতির হাত থেকে ভারত বর্ষের শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়।  তবে ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠী শান্তিতে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারেনি। সিপাহী বিদ্রোহ সহ আযাদী আন্দোলন পর্যন্ত উলামায়েকেরামদের আধ্যাত্মিক ও সমর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে মুসলিম জনতার অব্যাহত সংগ্রামের ফলে ইংরেজ শাসক শ্রেনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুসলমানদের জেহাদি প্রেরণার উৎস নির্ণয় করতে এবং তা ধ্বংস করার উপায় খুঁজে বের করার জন্য ইংরেজ সরকার ১৮৬৯ সালে উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে একটি কমিশন ভারতে প্রেরণ করে।  সেই কমিশনের রিপোর্ট এবং ভারতে  কর্মরত পাদ্রীদের রিপোর্টের ভিত্তিতে লন্ডনে এক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেই কনফারেন্সে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ করা হারাম, ইংরেজ সরকার রহমত স্বরূপ হিসেবে প্রমাণ করতে এক শ্রেণির আলেমদের উপঢৌকন ও উপাধি বিতরণের মাধ্যমে বৃটিশদের অনুগত করে তুলা,পরবর্তী মুসলমানদের মধ্যে একজনকে নবী রুপে দাড় করানোর নীলনকশা চুড়ান্ত করা হয়। 

কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত আকিদাহ 

১. মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি স্বয়ং খোদা, এবং আমি তা বিশ্বাস করে ফেলি যে, আমি ও তাই।  [মির্জা কাদিয়ানী প্রণীত আয়না- ই কামালাত ইসলাম, পৃষ্টা- ৫৬৪ ও কিতাবুল রাবিয়াহ পৃঃ৭৮]

২. মির্জা বলেন যে, আল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, তুমি মির্জা আমার (খোদা) র কাছে আমার সন্তান তুল্য।  [আল বুশারা প্রথম খন্ড পৃঃ৫৬] 

৩. কাদিয়ানে খোদা অবতীর্ণ হবেন (আল বুশারা প্রথম খন্ড পৃঃ৫৬)। 

৪. আমার কাছে আমার প্রভু বায়াত করেছেন (দাফিউল বালা পৃঃ ৬) ।   

৫. তিনি সত্যিকারের খোদা যিনি কাদিয়ানে আপন রাসুল প্রেরণ করেছেন (দাফিউল বালা পৃঃ১১)। 

৬. আমার বিরুদ্ধচারণ কারীরা শুকুর হয়ে গেছে, আর তাদের স্ত্রীদের স্বভাব  চরিত্রের দিক দিয়ে কুকুরীদের চেয়েও অগ্রে চলে গেছে  (মির্জা কাদিয়ানী প্রণীত নাজমুল হুদা পৃঃ ৫০)। 

কখন কোথায় কাদিয়ানীরা কাফের ঘোষিত হন -

১. ১৩০১ হিজরিতে বিশ্ববরেণ্য আলেম মাওলানা ইয়াকুব নানুতবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে কাফের ফতোয়া দেন। 

২. ১৩৩১ হিজরিতে সফর মাসে দারুল উলুম দেওবন্দের সকল মুরুব্বিগণ একমত হয়ে কাদিয়ানীদের কাফের ফতোয়া দেন। 

৩. ১৯৭৩ সালের ২৮শে এপ্রিল আযাদ কাশ্মীরের এসেম্বলিতে কাদিয়ানীদের কাফের হওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। 

৪. ১৯৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের পার্লামেন্টে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ঘোষণা করা হয়। 

৫. ১৯৫৭ সালে সিরিয়ার সরকার কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেন।

৬. ১৯৫৮সালে মিসর সরকার কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেন এবং তাদের সংগঠনকে বে আইনী ঘোষণা করেন। 

৭. ১৯২১ সালে মার্চ মাসে কাদিয়ানীদের পূণ্যভূমি কাদিয়ান নগরে হজরত মাওলানা হাবিবুর রহমান উসমানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা দেয়া হয়। 

৮. ১৯৭৪ সালে এপ্রিল মাসে রাবেতা আল ইসলামীর উদ্দ্যেগে বিশ্বের ১৪৪টি ইসলামী সংগঠনের বিশিষ্ট ইসলামী ফকীহগণের মক্কাতে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা দেয়া হয়।

৯. ১৯৩৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ভাওয়ালপুর কোর্টে আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বিস্তারিত দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে মোহাম্মদ আকবর নামক এক জজ কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করেন। 

বস্তুত কুরআন হাদীস, ইজমা -কিয়াস দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী, তারপর আর কোনো নবী আসবেন না।  সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আয়েম্মায়ে মুজতাহিদীন সহ সমকালীন মুসলিম মনিষীগণ বলেছেন, যদি কেউ খতমে নবুওয়তে বিশ্বাস না করে সে মুসলমান হিসেবে গণ্য হবেনা। সে কাফের।  এজন্যই সাহাবায়ে কেরামদের যুগ থেকে বিভিন্ন সময়ে যাহারাই নবুওয়তের দাবি করেছে তাদেরকে কাফের ঘোষণা করা হয়েছে।  সারা বিশ্বের মুসলিম মনিষীদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হলো মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এবং তার অনুসারী তথাকথিত আহমদিয়া মুসলিম জামাত নামধারী সকলেই অমুসলমান। অতএব, সকল মুসলমানদের মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার অনুসারী তথাকথিত আহমদিয়া মুসলিম জামাত এর ধোকা থেকে সচেষ্ট ও সজাগ থাকতে হবে। হেফাজত করতে হবে  নিজের ঈমাণকে। কাদিয়ানীদের বিষয়ে নিজে সজাগ থাকুন অন্যদের সজাগ করুন।

লেখক : নাজিমে দারুল ইকামাহ, জামিয়া কোরআনিয়া সৈয়দা সৈয়দুন্নেছা ও কারিগরি শিক্ষালয় কাজীপাড়া, ব্রাক্ষণবাড়িয়া