| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি দেশের অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই : ফখরুল


দেশের অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই : ফখরুল


রহমত নিউজ ডেস্ক     28 February, 2023     04:36 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহাবিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই বরং সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকটি স‚চকই আরো দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। অসহনীয় মূল্যস্ফীতি, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভ‚তপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অদক্ষ ও দলকানা নীতি বৈষম্য, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, সুশাসনের অভাব, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতা বর্তমান অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের মূল কারণ। সরকার তাদের চিরাচরিত Denial Syndrome  থেকে বেরিয়ে এসে IMF এর কাছে প্রেরিত পত্রে অবশেষে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুর্যোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফ এর নিকট থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে সরকার এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফ এর ঋণের উপর ভর করেই চলছে। বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটিই যেনো এক ‘নাই’-এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই হাহাকার অবশ্য সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী নব্য ধনীদের জন্য নয়। সরকার নির্লজ্জভাবে এ দেশে যে crony-capitalism এবং oligarchy প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই কুখ্যাত গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে দিব্যি ভালো আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তারা দেদারসে অর্থ লোপাট করছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। অর্থ পাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর অন্যদিকে গরিব আরও গরীব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বর্তমানে ৪২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চম‚ল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থনীতি আজ মহাসংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি এবং চরম অব্যবস্থাপনার মাশুল দিতে গিয়ে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ও নিদারুণ আর্থিক সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এক মাসে ২ বার বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি-
সরকার গত একমাসে দুইবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় ম‚ল্য ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। নতুন ম‚ল্যহার কার্যকরের ফলে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ ১৩ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০০ দশমিক ৮০ শতাংশ। বলা হয়েছিল জরুরি পরিস্থিতিতে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সরকার বাড়াবে। কিন্তু কোনো জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই বিইআরসি'কে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়া এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ বেআইনি। এদিকে সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৪০০%। বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করেছে। অর্থাৎ, দাম বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এতে রপ্তানিমুখী শিল্প চ্যালেঞ্জে পড়েছে, অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে ছোট ও মাঝারি শিল্প। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উস্কে দেবে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়বে। কিন্তু জবাবদিহিহীন এ সরকারের তাতে কিছু আসে যায় না। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারের রাজস্ব যে বেড়ে যাবে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকা। সরকার এখন যেকোনো মূল্যে রাজস্ব বৃদ্ধিতে বদ্ধপরিকর। অথচ অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করে এ অর্থের যোগান দেয়া যেত। সরকার বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ এর কাছ থেকে যে ঋণ নিচ্ছে তার শর্ত পূরণ করতে গিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বন্ধের অংশ হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। সমন্বয়ের নামে রাতারাতি ভর্তুকি কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এত বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বোঝাটা জনগণের উপর চাপানো হলো। প্রশ্ন হলো সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার দায় জনগণকে কেন বহন করতে হবে।  

মূল্যস্ফীতি—
বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহন-খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগণের ত্রাহী অবস্থা। গত আগস্টে সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯.৫২ শতাংশ। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্য বহির্ভ‚ত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এ হার ছিল ৯.৮ শতাংশ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। চাল-ডাল-ডিম এর দাম আকাশছোঁয়া, এমনকি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ২০০ টাকা অথচ বিবিএস সাধারণ মূল্যস্ফীতি দেখাচ্ছে ৮.৫৭ শতাংশ, আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৭৬ শতাংশ, যার সঠিকতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিকে গ্রামে খাদ্যম‚ল্য শহরের চেয়ে বেশি। স্টার্ট ফান্ড নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের চরএলাকাসহ দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষগুলোর মোট আয়ের ৪৮% ব্যয় হয় খাবার কেনার জন্য। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আজ দুবেলা খেতে পারছে না। অথচ আওয়ামী লীগ একদিকে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে অন্যদিকে টাকা ছাপিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। গত দুই মাসে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছে। তারা ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে চালাচ্ছে। এটা অব্যাহতভাবে চলতে পারে না। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে এই দেশের কোষাগার শ‚ন্যের কোটায় নিয়ে গেছে। একদিকে মেগা প্রজেক্টের নামে লুটপাট করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে। ডলারের অভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। লুটপাটের কারণে প্রতিনিয়ত দ্রব্যম‚ল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রিজার্ভ তলানিতে, ডলারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে—
অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর সরকারি হিসাব মতে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৩২.৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার। কিন্তু আইএমএফ এর হিসাবে এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয় বিধায় রিজার্ভ দাড়ায় ২৪.৫৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলারে। বর্তমানে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, "রিজার্ভের পরিমাণ সেটি বড় কথা নয়, রিজার্ভ একবার কমতে শুরু করলে সামাল দেয়া কঠিন, এর প্রবণতাটা গুরুত্বপ‚র্ণ। একবার কমে যাওয়া শুরু করলে নিয়ম-নীতির মধ্য থেকে তা আর সামাল দেওয়া আমাদের মত আমদানি নির্ভর দেশের জন্য কঠিন হবে।" বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়ায় অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। রিজার্ভ একটু বাড়লে সরকার আত্মতুষ্টিতে নিয়ম-নীতি ভেঙে রিজার্ভের অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ করা শুরু করে। অথচ ভুলে যাওয়া হয়েছে যে রিজার্ভের অর্থ বাজেটের কাজে লাগানো উচিত নয়। রিজার্ভ থেকে অনিয়মিতভাবে নানা নামে ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ফেলেছে সরকার, এর মধ্যে ৭০০ কোটি ডলার বা ৭ বিলিয়ন দিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ইডিএফ গঠন করে ওই টাকা ঋণের নামে সহজ সুদে দলীয় আশীর্বাদপুষ্টদের দেয়া হয়েছে যা আর কখনো আদায় করা যাবে না, বা আদায় হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এক সূত্র মতে, প্রতি মাসে এক বিলিয়ন ডলারের মত রিজার্ভের পতন হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯২০ কোটি বা ৯.২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুরো অর্থ বছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমান ডলার বিক্রি হয়নি। ঐ সময় ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট একাউন্টসে ৩৩ শতাংশ ডেফিসিট দেখা দেয়। ২০১৯ সালের আমদানি ব্যয়ের ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে আমদানি ব্যয় ৮৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। সরকার নিশ্চিন্ত মনে দলীয় ব্যবসায়ীদের ওভার ইনভয়েসিং করে আমদানির মাধ্যমে দেদারসে বিদেশে অর্থপাচারের সুযোগ করে দেয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে অর্থপাচার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রবাসী আয়ও কমে যেতে থাকে।

প্রশ্ন হল রিজার্ভ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিক্রি হচ্ছে অথচ খাদ্য, ভোজ্য তেল, চিনি এমনকি ষরভব ংধারহম ঔষধ শিল্পের কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খুলতে ডলার দিতে পারছে না সরকার। ব্যাংকগুলো ডলারের অভাবে এলসি ম‚ল্য পরিশোধ না করায় খাদ্য ও পণ্যবাহী জাহাজ প্রায় এক মাস ধরে সাগরে ভাসছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এদিকে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে এলসি খোলার বিপরীতে যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে সে অনুযায়ী ডলার বিক্রি করলে রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। কিন্তু বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এতদসত্ত্বেও সরকারের আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। আগের অপরিশোধিত ঋণপত্র এখন নিষ্পত্তি হচ্ছে। তৈরি হয় ডলার ক্রাইসিস। অনেকের মতে ম‚লতঃ বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের শুরু এখন থেকেই। রপ্তানিতেও একই ধারা চলতে থাকে। সরকারের সুবিধাভোগী দল আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে রপ্তানির অর্থ দেশে না এনে বিদেশে স্থিত করে। শুধু গত বছরেই রফতানি ও অর্থ প্রাপ্তির ব্যবধান ১ হাজার ২৯১ কোটি বা ১২ মিলিয়ন ডলার (আমাদের সময়.কমঃ ২৫/১/২৩)। এদিকে এখনও ভুয়া ইএক্সপি এবং এলসি বা সেলস কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে গার্মেন্টস রফতানির আড়ালে বিদেশে মুদ্রা পাচার হচ্ছে বলে জানা গেছে। একজন স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ দেশে ডলার সংকটের চারটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেনঃ (১) আমদানির ওভার ইনভয়েসিং। (২) রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং। (৩) রপ্তানি আয় দেশে ফিরিয়ে না আনা। (৪) ব্যাংক থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়া।  

ডলারের সাথে বিনিময়ে টাকার নজিরবিহীন অবমূল্যায়ন—
ডলারের সাথে টাকার মূল্যমান রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। কৃত্রিমভাবে টাকার শক্তিসালী অবস্থান দেখিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে চলছিল সরকার। কিন্তু সেই ভ্রান্ত মদ্রানীতির অসারতা উদগ্রভাবে উন্মোচিত হয়ে আজ দেশ চরম ডলার সংকটে নিপতিত হয়েছে। কয়দিন আগে কার্ব মার্কেটে টাকার মূল্য ৮৬ থেকে বেড়ে একবার ১১৯ টাকা দাড়ায়। এর আগে কখনোই টাকার ম‚ল্যবান এত হ্রাস পায়নি। কৃত্রিম উপায়ে ডলার রেট নিয়ন্ত্রণ না করে বাজার দরের ওপর ছেড়ে দিয়ে ক্রমাগতভাবে তা আস্তে আস্তে সার্বিক স্থানে স্থিত হলে আজকের এ সমস্যা হতো না। কার্ব মার্কেটের সাথে সরকার নির্ধারিত মূল্যের গ্যাপ এত ব্যাপক যে এতে আমদানি রপ্তানিসহ বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ডলার সংকটে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ জ্বালানি আমদানি প্রায় বন্ধ। অন্যান্য অবৈধ পন্থায় ডলার পাচার এলার্মিং পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।একদিকে দেশে তীব্র ডলার সংকট, অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপাচ্ছে। সরকার ডলার সংকটের কথা স্বীকারই করতে চায় না বরং ডলার সংকটকে আড়াল করতে ইতিমধ্যে নোট ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে নতুন ৫০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঐতিহ্যগত রেগুলেটরি ভ‚মিকা থেকে পদস্থলন হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাওয়ায় যে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে সেটা মোকাবেলায় এই ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাপা হয়েছে বলে জানা যায়। এই টাকা থেকে ধার নিয়ে ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও টাকা হাত বদলের এই প্রক্রিয়ায় ম‚ল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়বে সে তোয়াক্কাই করছেনা সরকার। এটা চলতে দেয়া যায় না।

ডলার সংকটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি বন্ধ। এলসি খুলতে পারছেনা ব্যবসায়ীরা—
দেশে চরম ডলার ক্রাইসিস চলছে। এর ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন অচলাবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গত ১৭ নভেম্বর ২০২২ বলেছিলেন জানুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে ডলার সংকট আর থাকবে না (যুগান্তরঃ ১৭ নভেম্বর, ২০২২)। কিন্তু ডলার ক্রাইসিস এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে কৃচ্ছ্রতা সাধনের জন্য বিলাসীপণ্য আমদানি দূরে থাক- খাদ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের মত অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসিও খুলতে পারছে না ব্যাংগুলো। এমনকি ডলারের অভাবে আমদানি ম‚ল্য পরিশোধ করতে না পারায় চিনি ও ভোজ্যতেল বোঝাই জাহাজ ১ মাসেরও অধিকাল সাগরে ভাসছে এবং পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না, যা রমজান উপলক্ষে আমদানি করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের মুসলিম স¤প্রদায়ের রোজা পালনের সময়ে ব্যাপক সরবারহ ঘাটতি সৃষ্টি করবে বলে বাজার ব্যবস্থাপকরা আশাংকা করছেন। এবারের হজ পালনকারীদের উপরও এর প্রভাব পড়ছে। হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন ব্যয় এক বছরে বেড়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৬১৮ টাকা। এদিকে ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার মাত্র ২৭ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ডলার সংকটে এলসি খুলতে পারছে না পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। ডলার সংকট মোকাবেলার নামে সরকার ভ্রান্ত অর্থনৈতিক সংকোচন নীতি অবলম্বন করে সাধারণ মানুষের ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন আমদানির এলসি বন্ধ করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে ডলারের সংকটের কারণে ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামাল, ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও কনজ্যুমার গুডস তথা ভোগ্যপণ্য আমদানির ব্যাপক পতন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ক্যাপিটাল মেশিনারির আমদানি দাঁড়ায় ১.২৭ বিলিয়ন ডলারে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩.৬৭ বিলিয়ন ডলারের। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হয়েছে যথাক্রমে ৪.১২ ও ১.২০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে যথাক্রমে ছিল ৪.৬৯ ও ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার। ডলার সংকটে গত ১১ মাস ধরে বিদেশী এয়ারলাইন্স ও জাহাজ মিলিয়ে আটকে আছে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর ফলে টিকেটের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সরকারের প্রোপাগান্ডা সেল থেকে ডলার সংকট দ‚রীভুত হবার যতই মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হোক না কেন, ডলার সংকট অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ সুনামি বয়ে এনেছে।

ব্যাংকিং সেক্টরে নৈরাজ্য-
দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে। বর্তমানে একরকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এডিআর বা ঋণ আমানত অনুপাত সীমালংঘন করে অতিমাত্রায় ঋণ পাইয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ গোষ্ঠীদের। ফলে তারল্য সংকটে পড়ে আমানত ফেরত দিতে না পারায় স¤প্রতি আমানতকারিদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আমানত উইথড্র করার হিড়িক পড়ে যায়। গত ৬ মাসে ব্যাংকের অতিরিক্ত ক্যাশ লিকিউডিটি কমেছে ৫৭,৭০৭ কোটি টাকা (NewAge: ২৪-১-২৩)। ব্যাংকিং সেক্টরে নৈরাজ্য ও মালিক পক্ষের দৌরাত্বের সাথে না পেরে উঠে সম্প্রতি বড় বড় ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। যা আমানতকারিদের মনে আরও আতংকের সৃষ্টি করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ব্যাংক মালিক গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। এটা নতুন কিছু নয় এর আগেও ব্যাংক ঋণের নামে অর্থ লুটপাট হয়েছে। এই টাকা আর ফেরত আসবে না। "বাংলাদেশের যোগাযোগ ও ক্ষমতা থাকলে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা লুটপাট এখন সবচেয়ে সহজ" বলে মন্তব্য করেন একজন অর্থনীতিবিদ।

অর্থ পাচার—
ব্যাংকিং চ্যানেলে অব্যাহতভাবে অর্থ পাচার বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) জানিয়েছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ থেকে ২০০ ভাগ অতিরিক্ত আমদানি ম‚ল্য দেখিয়ে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটে ৮,৫৭১ টি যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬২.৩৩ শতাংশ বেশি। জিএফআই বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪,৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়, যা ওই সময়ের মুদ্রামানে বাংলাদেশি মুদ্রায় সোয়া চার লক্ষ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের সিআইডি বরাতে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর হয়, শুধু হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে গড়ে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। হুন্ডির সঙ্গে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো ম‚ল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যায়, প্রতিবছর বর্তমানে কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে, বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হচ্ছে, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে।

খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে—
খেলাপি ঋণ গত ১০ বছরে তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, তা ২০২২-২৩ সালের প্রথম তিন মাসে এসে দাঁড়িয়েছে ১৩৪৩.৯৬ বিলিয়ন বা ১,৩৪,৩৯৬ কোটি টাকা। তবে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৪ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। গত বছরের প্রথম নয় মাসেই খেলাপি বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক বলছে প্রতিযোগি এবং তুলনীয় দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের ঋণ খেলাপিদের হারই সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রধান কারণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। সরকার ঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃ তফসীল ও অবলোপন করে খেলাপি ঋণ গোপন করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মাত্র ২% অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা বদলানো হয়েছে বারবার। এমনকি আইন সংশোধন করে একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে খেলাপিদের নানা ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর এসব সুযোগ-সুবিধা নিয়েই বড় বড় ঋণখেলাপি খেলাপির তালিকা থেকে বাইরে থেকে গেছেন।   বর্তমানে দেশে কিছু অসাধু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী আর শাসক শ্রেণী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। যাদের ক্ষমতা বেশি তারা নীতি প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করছে। এমনকি তারাই এখন খেলাপি ঋণের ছাড় কীভাবে দেওয়া হবে, সেই নীতিমালাও তৈরি করে দিচ্ছেন। Conflict of Interest পরিহার করার বাধ্যবাধকতা এখন কথার কথায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সংসদে যে শীর্ষ ২০ জন ঋণ খেলাপির তালিকা দিলেন এ তালিকায় কুখ্যাত রাঘববোয়াল ঋণ খেলাপি হিসাবে পরিচিত একজনের নামও নেই। এরা এতই প্রভাবশালী যে তারা ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা সরকার বা দেশের বিচারব্যবস্থা তাদের শাস্তি দিতে পারেনা। এ সকল ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিরা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।  অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে মোট ৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৬৫ জন ঋণখেলাপি রয়েছে, তার মধ্যে ১ নম্বরে থাকা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ১৬৪০ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা, আর ২০ নম্বরে থাকা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫৪১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। তাহলে প্রকৃত ঋণ খেলাপিরা কোথায়? অর্থমন্ত্রীর এহেন ঋণ খেলাপি-প্রীতি এ দেশের জনগণ ও সৎ গ্রাহকদের সাথে নিষ্ঠুর তামাসা ছাড়া আর কি হতে পারে।

বিদেশী ঋণের চাপ—
এমনিতেই গত ৬ বছরে বিদেশী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এক্ষণে চীন ও রাশিয়া থেকে নেয়া কঠিন শর্তের ঋণের গ্রেইস পিরিয়ড ২/৩ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ২০২৪ সন থেকেই ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সে সময় পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বিদ্যুৎ ও ক্যাপাসিটি চার্জঃ আদানি গ্রুপের সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি—
সরকার গত ১২ বছরে রাষ্ট্রের স্বার্থ বিকিয়ে গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থের হীন উদ্দেশ্যে নানা ধরনের আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার কুপ্রভাব এখন স্রেফ জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। গোড্ডায় আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে মনে হয় "বাংলাদেশ গাড্ডায় পড়েছে"। কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও আদানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বছরে প্রায় সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে বাংলাদেশকে। আগামি ২৫ বছরে দিতে হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। দেশের পাইকারি বিদ্যুতের বাজার ম‚ল্যের ৫ গুণেরও বেশি দামে আদানির বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। শেয়ার কারসাজির সাথে সাথে আদানি গ্রæপ কয়লার দামেও কারসাজি শুরু করেছে বলে জানা যায়। জাহাজ ভাড়াসহ গোড্ডায় ব্যবহৃত কয়লার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ২০০ ডলার হলেও, তারা টন প্রতি ২০০ ডলার বাড়িয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রতি টন ৪০০ ডলারে বিক্রির জন্য চিঠি দিয়েছে। আদানির সাথে করা এই চুক্তিকে 'অদ্ভুত' আখ্যায়িত করে নতুন করে আবার আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে বিদ্যুৎখাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত ১০ বছরে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা দলীয় ব্যবসায়ীদের পাইয়ে দিয়েছে সরকার। 'শেয়ার বিজে' প্রকাশিত তথ্যমতে, এই মুহুর্তে থেকে যদি আর কোনো নতুন চুক্তি নাও করা হয় তবুও কুইক রেন্টাল চলবে ২০২৬ পর্যন্ত এবং ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ২০৫১ পর্যন্ত। অন্যান্য মেগা প্রজেক্ট-এর কথা নাই বা উল্লেখ করা হলো।  

সংকট যতনা বৈশ্বিক তার চেয়ে বেশি আভ্যন্তরীণ-
সরকার বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক রাজনীতিকে দায়ী করে থাকে যা সত্য নয়। যদিও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সাম্প্রতি বলেছেন, "অর্থনৈতিক সংকট যতটা না বৈশ্বিক সৃষ্টি, তার চেয়ে বেশি আভ্যন্তরীণ।" কিন্তু সাম্প্রতি আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব মন্তব্য করেছেন, "দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির দায় বিএনপি সরকারের ওপর চাপাতে চায়।” তার মন্তব্য সারাদেশে হাস্য কৌতুকের উদ্রেক করেছে। গত দেড় দশক ধরে অবৈধভাবে সরকারের গদি আঁকড়ে আছে আওয়ামী লীগ, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ম‚ল্যবৃদ্ধির দায়তো আওয়ামী লীগ সরকারকেই বহন করতে হবে। কে না জানে যে করোনার প্রাদুর্ভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগ থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুলে গিয়েছিল। দুর্নীতি, বাজার সিন্ডিকেট ও অব্যবস্থাপনার ফলে দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে মানুষ ছিল পিষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২১ পর্যন্ত বাজার থেকে ডলার কেনার ধারায় ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।কিন্তু, এর পর থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করা শুরু হয়।  জুলাই ২০২১ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৩১ কোটি ডলার বিক্রি করা হলেও পরে তা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১ বিলিয়ন ডলার বাজারে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর থেকে প্রতি মাসে বিক্রি করতে হচ্ছে দেড় বিলিয়ন ডলার। এখন অর্থনীতির সব দুর্বল দিক একসঙ্গে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তথাকথিত উন্নয়নের ফাঁকা বেলুন এখন ফুটে গেছে। তারা নজিরবিহীন দুর্নীতি, গুম-খুন-হত্যা আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ম‚ল্যবৃদ্ধির দায় এড়াবার যতই কুটকৌশল করুক না কেন, একদিন জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতেই হবে। ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা।

আইএমএফ এর ঋণঃ সংকট কতটা কাটবে—
আইএমএফ এর কাছ থেকে বাংলাদেশ পাচ্ছে সাড়ে তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার। মোট সাত কিস্তিতে প্রতিশ্রুত এ অর্থের প্রথম কিস্তি ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ডলার ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। আইএমএফ প্রদত্ত ৩৮ শর্তের মধ্যে সরকারকে প্রধানত ব্যাংক, রাজস্ব ও জ্বালানি খাত সংস্কার করতে হবে। এ সকল সংস্কার করতে না পারলে আইএমএফ এর ঋণের কিস্তি আটকে যেতে পারে। মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হল এই সকল সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকার কতটা আন্তরিক এবং আইএমএফ এর ঋণে বর্তমান আর্থিক সংকট কতটা কাটবে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক নীতি ও পদক্ষেপ প্রণয়ন করতে ব্যর্থতার কারণেই আজকের এ সংকট তৈরি হয়েছে। সরকার জেনে বুঝেই দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। সাময়িক স্বস্তি দিলেও বর্তমান সংকটের গভীরতা এত বেশি যে আইএমএফ এর ঋণে তা কতটুকু সামলানো যাবে সেটা নিয়ে শঙ্কা আছে। কারণ বর্তমান জাল-জালিয়াতি, অব্যবস্থাপনা ও চৌর্যবৃত্তির প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি যে সূত্র থেকেই ঋণ পাওয়া যাক না কেন তা হবে তলা বিহীন ঝুড়ি কিংবা Black hole  এ অর্থ ঢালার সমান। এখন নগদ অর্থ যত দরকার তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে সুসংহত করা। আইএমএফ ডলার রেট বাজারদরের ওপর ছেড়ে দিতে বলেছে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেটের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হলে এই রেট এক লাফে অনেক বেড়ে যেতে পারে। অথচ, ডলার রেটের এই সমস্যা বর্তমান দুর্নীতিবাজ সরকারেরই সৃষ্টি। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ডলারের রেইট বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৩ সালে বাজার দরের উপর ছেড়ে দিয়েছিলো, যাতে করে দীর্ঘদিন ডলার রেইট সহনীয় মাত্রায় থেকে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছিল। ১৯৭৪ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ দশবার ঋণ নিয়েছে। ১৯৯০ সালে আইএমএফ ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল ম‚ল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট চালু করা এবং বাণিজ্য উদারীকরণসহ ব্যাংক খাতের সংস্কার। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সফলভাবেই ভ্যাট চালু করেছিলেন। ঐ সময় বাণিজ্য উদারীকরণসহ ব্যাংক খাতেও অনেক সংস্কার করা হয়। যার ফলে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আসতে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। বাড়তে থাকে বিদেশে জনশক্তি প্রেরণ। আজকের অর্থনীতি সেই ভ্যাট এবং ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের ভিত্তিতেই বেড়ে উঠেছে। ২০০৩ সালে আইএমএফ লোন নেওয়ার শর্ত ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমিয়ে আনা। সে সময়ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের উদ্যোগে আদমজিসহ লোকসানি পাটকলগুলো বন্ধ করা হয়। আদমজীতে গড়ে তোলা হয় রপ্তানীমুখী ইপিজেড। কিন্তু দুঃখজনক হলো ২০১২ সালে বর্তমান সরকার নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়নের অন্যতম শর্তে আইএমএফ থেকে ঋণ নিলেও আইনটি প্রণয়নে গড়িমসি করায় শেষের দুই কিস্তি আটকে দেয় আইএমএফ। এই দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপিসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহল বারংবার ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতে অনিবার্য সংস্কার এর তাগিদ দেওয়া সত্তে¡ও সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সংস্কার না করে আজকের এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

আইএমএফ এর শর্তপূরণে জনগণকে যেন খেসারত দিতে না হয়—
আইএমএফ প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো দেশের প্রয়োজনে অনেক আগেই স্বউদ্যোগে বাস্তবায়ন করা উচিত ছিল। দেরিতে হলেও ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতসহ অন্যান্য সংস্কারগুলো আন্তরিকতার সাথে অবিলম্বে সম্পাদন ও বাস্তবায়ন আবশ্যক। কিন্তু অর্থনীতির বর্তমান দুঃসময়ে আইএমএফ এর শর্তগুলো পূরণে যেন নিম্ন আয়ের মানুষদের কষ্ট না হয়। আইএমএফ এর শর্ত পূরণে সারের পর তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরি মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামও বৃদ্ধি করায় মানুষের ভোগান্তি কতোটা বেড়েছে তা বলাই বাহুল্য। লক্ষ্য রাখতে হবে আইএমএফ এর সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে যেন মানুষের বঞ্চনা ও কষ্ট না বাড়ে। বিশেষকরে সার, খাদ্য ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিপরীতে ওভার নাইট ভর্তুকি কমিয়ে দিলে জন ভোগান্তি বাড়বে। কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর যেন করের বোঝা না বাড়ে। যারা কর দেয় তাদের উপর বোঝা না বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানো উচিত। মনে রাখতে হবে আজকের ডলার ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরীর প্রধান কারণ ঋণ করে কম প্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ। যার কিস্তি শোধ করতে গিয়ে এখন রিজার্ভে টান পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ এর নামে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার মত দুর্নীতি করে মেরে দেয়া হয়েছে। দেশের গ্যাস উত্তোলন না করে এলএনজি ও কয়লা বেশি দামে বিদেশ থেকে কেনা হচ্ছে। ঋণ খেলাপিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে চার লক্ষাধিক কোটি টাকা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে। আইএমএফ যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তা প্রবাসীদের পাঠানো দুই মাসের আয়ের সমান। প্রতি বছর দেশ থেকে যে পরিমান ডলার পাচার হচ্ছে তা রোধ করা গেলে এই ঋণ নেয়ার কোন দরকারই হতো না।

আইএমএফ এর শর্ত পূরণে সরকার আন্তরিক নয়—
আইএমএফ চাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ১০ শতাংশ এর নিচে ও বেসরকারি ব্যাংক গুলোতে ৫ শতাংশ এর নিচে থাকুক খেলাপি ঋণের পরিমাণ, এবং আগামী জুন থেকেই তা দৃশ্যমান করতে হবে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে ২০২৬ এর মধ্যে। কিন্তু সরকার খেলাপি ঋণ আদায়ে বাস্তব, কার্যকর ও ফলপ্রস‚ পদক্ষেপ না নিয়ে যতসব "অদ্ভুত উপায়ে" খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটা এক ধরণের 'আই ওয়াশ'। কৌশলে এক ব্যাংকের আদায়যোগ্য খেলাপি ঋণ আরেক ব্যাংকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আবার বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রæপের খেলাপি ঋণ  পুনঃঅর্থায়ন ও পুনঃতফসীলিকরণের মাধ্যমে নবায়ন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ অবলোপনের নীতিমালা আরো শিথিল করেছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা ছাড়া খেলাপি ঋণ কমানো সম্ভব নয়। Morning shows the day আইএমএফএর ঋণ প্রাপ্তির শুরুতেই এটা ¯পষ্ট হয়েছে যে, ঋণ খেলাপি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার আন্তরিক নয়। অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ খেলাপি ঋণ নিয়ে বলেছেন, "কাগজে সই করলেই তো খেলাপি ঋণ কমে যাবে না। এর জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছার।" বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা আজ এমন শোচনীয় অবস্থায় যেত না। অনেকে মনে করেন আইএমএফ এর ঋণে সংকট কাটবে না। এ ঋণ বরং আলিগার্কদের পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের। ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং নীতি সংস্কার করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, শক্তভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থ হলে যে স‚ত্র হতেই ঋণের টাকা আসুক নানা কৌশলে শেষ পর্যন্ত অলিগার্করাই বরং তা লুণ্ঠন করে নিবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার সাধন অত্যাবশ্যক। টেকসই অর্থনীতির প্রয়োজনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার। কর-শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টর, বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্য নীতির সংস্কার আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিকখাতে কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে। বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। এই দুর্বিষহ জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে এই অবৈধ সরকারকে হটানোর জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবী আদায়ে দুর্বার গণ-আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, পতন ঘটাতে হবে বর্তমান গণবিরোধী নিশিরাতের ভোটডাকাত সরকারের। প্রতিষ্ঠা করতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, যার অধীনে এদেশের তরুণ প্রজন্মসহ সমগ্র জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত “রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত” এর ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাংখিত জাতীয় সরকার গঠন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামি দিনে দেশের চলমান আর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দুরীভুত করা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।