মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ পিকে হালদার মামলা; দুদকের নথি কলকাতার আদালতে
রহমত নিউজ ডেস্ক 04 February, 2023 05:26 PM
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ভারতে বন্দী পিকে হালদারের ভাই প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিন শুনানিতে বাংলাদেশের আদালতে পেশ করা দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের সব তথ্য ভারতের আদালতে পেশ করা হয়েছে। ২২ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ শেষে শনিবার বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশ ভিত্তিক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারসহ মোট ছয় অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে এ তথ্য পেশ করা হয়। এসময় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানায়, পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় এখনো তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়নি, দ্রুতই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে।
ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, আজ ৬ নম্বর অভিযুক্ত প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নতুন করে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া এখনো চলছে, সে ক্ষেত্রে ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে নতুন তথ্য উঠে আসছে। ফলে আমাদের তরফে নতুন করে অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হতে পারে।
এদিন মূলত পিকে হালদারের ভাই এবং এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিনের আবেদনের শুনানি হয়। মামলার শুরুতেই বাংলাদেশের আদালতে পেশ করা দুদকের সব তথ্য নিয়ে প্রাণেশের হয়ে আদালতে জামিনের শুনানি করেন আইনজীবী মিলন মুখার্জি। তিনি জানান, প্রশান্ত কুমার হালদার ও পলাতক পৃথ্বীশ কুমার হালদার বাংলাদেশী নাগরিক এবং অর্থ তছরুপ মামলায় অভিযুক্ত হলেও প্রাণেশ বেকসুর তার নামে দুদকের কোনও অভিযোগ নেই। প্রাণেশ কুমার হালদার অর্থ তছরুপের সঙ্গে যুক্ত নন এবং বাংলাদেশের নাগরিক নন।
মিলন মুখার্জি জানান, মামলার প্রধান অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার এবং তার ভাই পৃথ্বীশ কুমার হালদারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের 'অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০১২' অভিযুক্ত হলেও বাংলাদেশে প্রাণেশ অভিযুক্ত নন। তাকে ভারতের 'অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২' মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত অপরাধ যখন সংগঠিত হয়েছে প্রাণেশ তখন ভারতে ছিলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ইডি'র আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী আদালতে জানান, প্রাণেশ প্রত্যক্ষভাবে এই মামলায় জড়িত, সে জেনে শুনে তার ভাই পিকে হালদারের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তার সম্পত্তি এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। প্রশান্ত কুমার হালদারের কোম্পানি অ্যাকচুরাস অর্গানিক প্রাইভেট লিমিটেড ডিরেক্টর তিনি। ৮৩টি অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছেন তিনি। তাই এই মামলায় তার জামিনের প্রশ্নই উঠে না। এদিকে আদালত থেকে বেরিয়ে মিলন মুখার্জি বলেন, আমরা প্রাণেশের জামিনের জন্য আবেদন করেছি, তার স্বপক্ষে সমস্ত কাগজপত্র আদালতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি জামিনের যোগ্য। মামলার গতি প্রকৃতি এখনই বলা সম্ভব নয়, আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যেসব নথি জমা দিয়েছি, সেটাকে খণ্ডন করার জন্য ইডির তরফেও নতুন করে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা করতে পারে।
এদিকে এদিন শুনানি চলাকালীন আদালতে পিকে হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের বাংলাদেশের দেওয়া বাংলা ভাষায় চার্জশিটের নথি দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিচারক। এদিন শুনানি শুরুর প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ইংরেজি ভাষায় চলে জামিনের আবেদনের শুনানি। একপর্যায়ে শুনানি চলাকালীন সময়ে বিচারকের হাতে বাংলা ভাষায় লেখা বাংলাদেশের দুদকের অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইনের যাবতীয় নথি বিচারপতি হাতে তুলে দেন প্রাণেশের আইনজীবী মিলন মুখার্জি। বিচারক শুভেন্দু সাহাও বলে উঠেন 'বাহ্! সবই তো দেখছি বাংলা ভাষায়। এ সময় ভাষার ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। পরে বিচারকের হাতে বাংলা ভাষায় আইনি নথি তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে মিলন মুখার্জি জানান, 'বাংলা ভাষাটাকে একমাত্র বাংলাদেশই ধরে রেখেছে। আমি সত্যিই গর্বিত। আমি বাংলাদেশে গেছি সেখানে মামলা করেছি। এটা সত্যিই ভাবা যায় না।'
এদিন স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে অভিযুক্তদের আদালতে আনা হয়। পৌনে ১২টার দিকে তাদের স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে তোলা হয়। দীর্ঘ ২ ঘণ্টার উভয় পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে চলতি মাসের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফের অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হবে বলে নির্দেশ দেন সিবিআই স্পেশাল কোর্ট-৩ এর বিচারক শুভেন্দু সাহা। গত ১১ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কলকাতার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ইডি। 'অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২' এবং দুর্নীতি দমন আইন-১৯৮৮ মামলায় ওই ছয় অভিযুক্তের নামে চার্জ গঠন করা হয়। বর্তমানে অভিযুক্ত পিকে হালদারসহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছে প্রেসিডেন্সি কারাগারে, অন্যদিকে একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। -সমকাল