| |
               

মূল পাতা জাতীয় ২০২২ সালে দুর্ঘটনার হার ২৯ শতাংশ বেড়েছে : নিসচা


২০২২ সালে দুর্ঘটনার হার ২৯ শতাংশ বেড়েছে : নিসচা


রহমত নিউজ     04 January, 2023     06:37 PM    


২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সারা দেশে দুর্ঘটনার হার ২৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা।  ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে মোট ৭০২৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগের বছর ২০২১ সালে ঘটেছে ৪৯৮৩টি। অর্থাৎ, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২০৪১টি। শতাংশ হিসেবে যা ২৯ শতাংশ।

আজ (৪ জানুয়ারি) বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপনবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় নিসচা। এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  সংবাদ সম্মেলনে ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরে নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ১১টি জাতীয় দৈনিক ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া, শাখা সংগঠনের প্রতিবেদন, অনুমেয় বা অপ্রকাশিত ঘটনার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিসচার ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হক কামাল, মহাসচিব লিটন এরশাদ, উপদেষ্টা মো. হামিদ, ড. আইয়ুবুর রহমান খান, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ, জিএইচএআই এর কান্ট্রি কোর্ডিনেটর ড. শরীফুল আলম, সিআইপিআরবি এর ডিরেক্টর ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭ হাজার ২৪টি। এর মধ্যে সড়ক পথে ঘঠেছে ৫ হাজার ৭০টি, নৌ পথে ঘটেছে ৭৭টি, রেলপথে ঘঠেছে ২৫৬টি এবং অপ্রকাশিত তথ্য ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর মৃত্যু (আনুমানিক ৩০ শতাংশ) ঘটেছে ১ হাজার ৬২১টি। এসব দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৮ হাজার ১০৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৭৮৩ জন। এর মধ্যে সড়ক পথে মারা গেছেন ৫ হাজার ৭৬০ জন, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৩১ জন। রেলপথে মারা গেছেন ২৭০ জন, আহত হয়েছেন ৫১ জন৷ নৌ-পথে মারা গেছেন ২০৪ জন, আহত হয়েছেন ১৪৪ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ১৮৬ জন। অপ্রকাশিত তথ্য ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর নিহত হয়েছে (আনুমানিক ৩০ শতাংশ) ১ হাজার ৮৭০ জন, আহত হয়েছেন ২ হাজার ২৫৭ জন। সড়ক, নৌ ও রেলপথে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৫ হাজার ২৪২ জন এবং নারী ছিলেন ৯৯২ জন। পুরুষ আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩২ জন এবং নারী আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪৯৪ জন। এছাড়া যানবাহনের ধরন অনুযায়ী চালক ও চালকের সহকারী নিহত হয়েছেন ২ হাজার ১৮৮ জন।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগই এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জানিয়েছে নিসচা। এছাড়াও সকল ধরনের যানবাহনে অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি।নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা কর্তৃক ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান হুবহু নিম্নে তুলে ধরা হলো:

দেশের সড়ক দুর্ঘটনা গতবছর ২০২২ সালে বিগত দুই বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে ২৯৩২টি, নিহতের সংখ্যা ৩১৩৫টি এবং আহতের সংখ্যা ৪৬৯৮টি।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নিন্মোক্ত কারণগুলো উঠে এসেছে : সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব। টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া। চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা। দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা করা। লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ। মোটরসাইকেল চালকদের বেপোরয়া চালানো মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা। সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কে গতিসীমা নির্ধারণ না করা। চালকদের মাদকে আসক্তি। পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। বিপদজনক ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং করা। বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালনা। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালনা বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা। সড়ক ও মহাসড়কে বৈধ ও অবৈধ গাড়ি বৃদ্ধি। বিশেষ করে দুই চাকার যানবাহন। মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি। একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল। রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট। প্রশাসনের চোখের সামনে দিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনায় প্রায়শই দুর্ঘটনার খবর আমাদের চোখে পড়েছে। অনেকে আবার ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে অসাধু পন্থায় টাকা কামাতে গিয়ে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত যান সড়ক মহাসড়কে উঠে বেপরোয়া গতিতে চলতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এছাড়াও সকল ধরণের যানবাহনে অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়।

২০২২ সালের উল্লেখযোগ্য বড় দুর্ঘটনাসমূহ (সড়ক, নৌ, রেল পথ ও বিমানপথ)

সড়ক পথ : ০১ জানুয়ারি ২০২২ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস খাদে পড়ে পুলিশ পরিদর্শক সহ ৪ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। ০৭ জানুয়ারি ২০২২ কুমিল্লার লাকসামে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জন নিহত ও ০১ জন আহত হয়। ১৫ মে ২০২২ সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিন পরিবারের ৭ জনসহ মোট ৯ জন। নিহত এরং ২৫ জন আহত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ভোরে চট্টগ্রামের চকোরিয়াতে ট্রাক চাপায় ০৫ ভাই নিহত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ভোরে কুমিল্লার বুড়িচং এ মাটিবাহী ট্রাক চাপায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার পাঁচ জন নিহত হয়। যার মধ্যে একজন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। উক্ত ঘাতক চালক এর লাইসেন্স ছিল না।

সড়ক ও রেলপথ : ২৫ জুলাই ২০২২ সকালে চট্টগ্রাম এর মিরসরাই এ ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ১৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। ২২ জুলাই ২০২২ সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর মাইজপাড়া শ্রমীকবাহী বাসে ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জনের মৃত্যু হয় ২০ জন আহত হয়। ২১ জুলাই ২০২২ গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী লেভেলক্রসিংয়ে ভটভটিকে ট্রেনের ধাক্কায় ৫ শ্রমিক প্রাণ হারায়।

নৌপথ : ২০ মার্চ ২০২২ দুপুরে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ডুবে ১১ জন নিহত এবং ৪০ জন নিখোঁজ হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ দুপুরে পঞ্চগড়ের আউলিয়া ঘাটে নৌকা ডুবে ৬৯ জন নিহত এবং ৩ জন নিখোঁজ হয়। ১১ অক্টোবর ২০২২ রাতে চট্ট্রগ্রামে শীতলক্ষা নদীতে ট্রলার ডুবে ০৫ জন নিহত ও ০১ জন নিখোঁজ হন। পাশাপাশি সড়কপথে সংঘটিত বড় দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অতিরিক্ত গতি, ওভারলোড ও বিপদজনক ওভারটেক। এছাড়া সড়কে যান নামানোর পূর্বে গাড়ির যন্ত্রাংশসমূহ ও ব্রেক চেকিং না করায় এ বছর কিছু দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।

সেইসাথে রেলপথে সংঘটিত দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অরক্ষিত রেলক্রসিং পারাপারে মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা, মহেন্দ্র, লেগুনা, সিএনজি, ও বাস-ট্রাক সতর্কতা অবলম্বন না করায় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এছাড়া ট্রেনে কাটা পড়ে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মোবাইল ফোনে কথা বলা ও এয়ারফোন ব্যবহারের কারণে। এবার নৌপথে সংঘটিত দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে আমাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বেপোরোয়াভাবে নৌ চলাচল ও ঘন কুয়াশার কারণে। বিশেষ করে বাল্কহেড, ছোট লঞ্চ ও নৌকা নৌপথে ইচ্ছেমত চালনার কারণে। এছাড়া লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনা হলো অসতর্কতা, দাহ্য পদার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও মনিটরিংয়ের অভাব এবং ক্ষেত্রবিশেষে যাত্রীদের অসতর্কতা যেমন ধুমপান করা ও কয়েল জ¦ালানো ইত্যাদি।

সড়কভিত্তিক দুর্ঘটনার কারণ : মহাসড়কে ২৩১৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ৩১৩৯ এবং আহত হয়েছে ৪৬৪১। মহানগর কেন্দ্রিক সড়কে ৬২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬৩১জন এবং আহত হয়েছেন ৫৮৬ জন আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে ২৪৬৩টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৪৬৪ এবং আহতের সংখ্যা ২২৯৯।

মহাসড়কভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য 
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১১৫ টি দুর্ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত ১০৯ জন।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ৮৯টি দুর্ঘটনায় ৯২ জন নিহত এবং ১০৩ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা- খুলনা মহাসড়কে ৭২টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত এবং ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে ৮৫টি দুর্ঘটনায় ১২২ জন নিহত এবং ১৮৭ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা- রংপুর মহাসড়কে ৩২টি দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত এবং ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৪৬জন নিহত এবং ২৫জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে ৪২টি দুর্ঘটনায় ৪৯জন নিহত এবং ৩৪৬ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা- টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত এবং ৫৬ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক পথে যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী নিহত চালকের সংখ্যা
চালক ও সহকারী মৃতের সংখ্যা
বাস চালক ও সহকারী ৪২
ট্রাক চালক ও সহকারী ৯৬
মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী ১৬১৮
পিকআপ চালক ৪২
ট্রাক্টর/ট্রলি/ ভ্যান চালক ২৯
নসিমন/করিমন চালক ৪৬
সিএনজি/অটো-রিকশা/ভটভটি ১৫৯
ভ্যান/সাইকেল চালক ১৫৬
মোট নিহত চালক ২১৮৮
মোট নিহত সংখ্যার ২৭% চালক ও পরিবহন শ্রমিক। এর মধ্যে ২০% মোটর সাইকেল চালক ও আরোহী।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর সর্বশেষ (ডিসেম্বর২০২২) তথ্য মোতাবেক দেশে মোট নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৫৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৯টি। এর মধ্যে বাস ৫২ হাজার ৪৬টি, ট্রাক ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫১৬টি, কাভার্ড ভ্যান ৪৫ হাজার ৩৯৭টি, মাইক্রোবাস ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৬৮টি, অটো রিক্সা ৩ লাখ ১৩ হাজার ১১৪টি, মোটর সাইকেল ৪০ লাখ ৭ হাজার ৮১৭টি, মিনিবাস ২৭ হাজার ৯৪৭ টি, পিকআপ ১ লাখ ৫৩হাজার ৬৫৭টি, ট্যাক্সি ক্যাব ৩৬ হাজার ১১১টি, ট্রাক্টর ৪৬ হাজার ৫১৫টি, ব্যক্তিগত কার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৫টি, স্পেশাল পারপাস গাড়ি ১২ হাজার ৯৩টি, ট্যাংকার ৬ হাজার ৫৯২টি, জীপ ৮২ হাজার ৭৭৮টি, কার্গো ভ্যান ৯ হাজার ৫৪৩টি, এ্যাম্বুলেন্স ৮ হাজার ১৬৩টি, অটো ট্যা¤পু ১৬ হাজার ৪২টি, ডেলিভারী ভ্যান ৩৩ হাজার ২২৬টি, হিউম্যান হলার ১৭ হাজার ৩৭৮টি, অন্যান্য ৬০ হাজার ৬৬১টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত নসিমন/করিমন/ভটভটি/ব্যাটারি চালিত রিক্সা/অটো সহ কয়েক লক্ষ্য যানবাহন দিব্যি চলাচল করছে। বিআরটিএ এর তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরযান রয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ। বিআরটিএ’র তথ্যমতে সব ধরনের যানবাহন মিলিয়ে চালকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখের কাছাকাছি। সর্বমোট রেজিষ্ট্রেশনকৃত যানবাহনের সংখ্যা ৫৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৯টি। এক্ষেত্রে চালকের সংখ্যা ১৫ লাখ ৯২ হাজার জন কম রয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়।। এরমধ্যে বেশিরভাগ মোটর সাইকেল চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। সূত্রমতে প্রায় সারাদেশে প্রায় ১৬ লাখ অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন চালক পরিবহন খাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারাদেশ। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখেরও বেশী অদক্ষ চালক বাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানসহ ভারী যানবাহন চালাচ্ছে বলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর সুত্রে জানা গেছে। বিআরটিএ কর্তৃক সরবরাহকৃত উপরোক্ত রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাসের সংখ্যাও ৫২০৪৬। এর মধ্যে ১০৮৯টি বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মিলে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ১৩৩৫টি। বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান মিলিয়ে ২,৪৫,৯৬৩ যানের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৪২৪টি। বাকি ৫৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬টি যানবাহনে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ৪৬০০টি। এরমধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৩৪০টি। একই হারে যদি বাস ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটতো অথবা এদের সংখ্যা যদি আরো বেশি হতো তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কত গিয়ে দাঁড়াত এবং ক্ষতির পরিমাণ যে কি হত এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।

মোটরসাইকেল আরোহী : ২০২২ সালের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সংখ্যা ১৩৪০টি। এর মূল কারণ অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের মোটরসাইকেল চালনায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও প্রশাসনের সামনে দিয়ে লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল ও অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোরেরা মোটরসাইকেল চালনা করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কর্মীবৃন্দ নিয়মকানুন না মেনে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের দেখাদেখি অন্যরাও উৎসাহিত হয়। বিআরটিএ তথ্য অনুযায়ী দেশে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪০ লক্ষ ৭হাজার ৮১৭টি। সূত্র মতে লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা আনুমানিক ৩০%। ইদানিং ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরে মোটরসাইকেল চালকদের মানসম্মত হেলমেট পরিধানের সু-অভ্যাস গড়ে ওঠা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য জেলা ও গ্রাম গঞ্জে হেলমেট না পরার প্রবণতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সুপারিশ : মোটরসাইকেল চালকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, ট্রাফিক আইন কানুন স¤পর্কে ব্যাপক ধারণা প্রদান, দেশের অল্প বয়স্ক যুবসমাজ মোটর সাইকেল চালনায় বিধিনিষেধ আরোপ ও গতির ক্ষতি স¤পর্কে ধারণা প্রদান কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ও মৃতের সংখ্যা কমানো সম্ভব। মোটরসাইকেল বিক্রয়ের পূর্বে অভিভাবকদের উচিত তাদেও সন্তানদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর মোটরসাইকেল চালনা করতে দেওয়া। সেই সাথে বিক্রেতার উচিত লাইসেন্স ও মানসম্মত হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল বিক্রয় না করা এবং বিআরটিএ এর মাধ্যমে অরিয়েন্টেশন কোর্স প্রদানপূর্বক গাড়ি চালনার নিয়ম কানুন শিখে লাইসেন্স প্রদান নিশ্চিত করে গাড়ি বিক্রয় করা।

জেলা ও বিভাগভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্লেষণ : বিভাগভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ দেখা যায় যে ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগে মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৫২৪টি নিহতের সংখ্যা ১৮২৭। বিভাগ পর্যায়ে এটা সর্বোচ্চ। জেলা পর্যায়েও ঢাকায় সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে যার সংখ্যা ৪৫৪ এবং নিহতের সংখ্যা ৮৯১। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ৯৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সংখ্যা ১১২৮। চট্টগ্রাম জেলায় ৩১০টি দুর্ঘটনায় ৩৪৭জন নিহত হয়। বিভাগভিত্তিক জেলা পর্যায়েও ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলায় সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে যার সংখ্যা ২১ এবং নিহতের সংখ্যা ৩৯।

দুর্ঘটনার সংখ্যা : ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ৭০২৪টি। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০৪১টি বেশি। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় ৪০৯২ট। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৯৭১টি বেশি। কিন্তু এবারে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী যা ২০২১ সালের দুর্ঘটনার অনুপাত থেকে ২৯% বেশী। সড়ক দুর্ঘটনায় এ প্রতিবেদনটি ১১টি জাতীয় পত্রিকা ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্ক্রোল, অনলাইন নিউজ ও শাখা সমূহের দুর্ঘটনা ও গবেষণা বিষয়ক স¤পাদকদের প্রেরিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক আঞ্চলিক তথ্য অপ্রকাশিত হয়েছে যা কোন মিডিয়ায় উঠে আসেনি। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত সংখ্যা সঠিক ও নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি করার দায়িত্ব ছিল সরকারের। ইতোপূর্বে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসন থেকে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল নিয়মিত কোন তথ্য প্রদান না করার কারণে সরকারিভাবে কোন পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয় না। প্রতিবারের মতো এবারেও আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি দুর্ঘটনা অনুসন্ধান সেল গঠনপূর্বক প্রতিবছরের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য জাতির কাছে উপস্থাপন করার অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে করে সঠিক ও নিখুঁত সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যাদি সকলে জানতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

নিহতের সংখ্যা : ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৮১০৪। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা ছিলো ৪৯৬৯। গত বছরের তুলনায় এ বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মত্যুর সংখ্যা ৩১৩৫ জন বেশী। ২০২০ সালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫২২৭। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রায় ৫% কম ছিল। গত বছর ২০২১ এর তুলনায় ২০২২ সালে শতকরা ৩৮% মৃত্যু বেশী হয়েছে।

আহতের সংখ্যা : ২০২২ সালে মোট ৭০২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৭৮৩জন লোক আহত হয়েছে। ২০২১ সালে ৪০৯২টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল ৫০৮৫ জন, এ বছর আহতের সংখ্যা ৪৬৯৮জন বেশী। গত বছরের তুলনায় আহতের সংখ্যা এবার ৪৮শতাংশ বেশী বলে রিপোর্টে পাওয়া যায়। অনেক ছোট ছোট দুর্ঘটনায় আহতদেরকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করা হয় পত্রিকায়ও প্রকাশ হয় না। এদের মধ্যে অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে। যা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

সুপারিশমালা :  সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্দেশিত ৬ দফা+১১ দফা সম্বলিত টাস্ক ফোর্স কর্তৃক দাখিলকৃত ১১১টি সুপারিশনামা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা। সেইসাথে হাইওয়েতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ তত্ত্বাবধানে উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করে তাদের মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মহাসড়কের যাবতীয় বিষয়সমূহ মনিটরিং করতে হবে। করোনা নিয়ে সরকারিভাবে যেরকম প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে একইভাবে সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনারোধের বিষয়সমূহ অন্তর্ভূক্ত করার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকা রুট ফ্রান্সাইজ এর যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন জরুরী। যেমন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরীক্ষামূলক একটি রুটে ইতিমধ্যে রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় (ঘাটারচর-গুলিস্তান-মতিঝিল হয়ে সাইনবোর্ড-কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ) চালু করা হয়েছে গণপরিবহন সার্ভিস। এই সার্ভিস ঢাকা সিটি ও ঢাকার আশপাশে যত দ্রুত সম্ভব চালু করা হবে আমরা মনে করি যানজট এবং দুর্ঘটনার সংখ্য নিয়ন্ত্রিত হবে। সেইসাথে ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, যত্র-তত্র গাড়ী পার্কিং করা, নির্দিষ্ট স্থান ব্যতিরেকে যেখানে-সেখানে যাত্রি উঠানো-নামানো, ওভার টেকিং করা, পাল্টা-পাল্টি ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল বোঝাই করা, গাড়ীর ছাদে যাত্রি বহন করা, ওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকা সত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করার প্রবণতাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়ে দীর্ঘ এবং উচ্চতাসম্পন্ন সড়ক বিভাজন তথা রোড ডিভাইডার-এর ব্যবস্থা করতে হবে। সকল মহাসড়ক এবং প্রধান সড়ককে অবশ্যই ন্যুনতম চারলেনে উন্নীত করতে হবে। মহাসড়কের পাশে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মত দু’পাশে ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা সড়ক (সার্ভিস রোড) নির্মাণ করতে হবে। পথচারীদের নিবিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপথগুলো দখলমুক্ত করে যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে ফুটপাত তৈরীর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পুনরায় যেনো ফুটপাত দখল না হয় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র মহোদয়দের নিকট বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সড়কের ত্রুটিগুলো অচিরেই দূর করতে হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ত্রুটিগুলো দূর করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে। একইভাবে অন্যন্য মহাসড়কের ত্রুটিগুলো দূর করলে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলেও আশা করা যায়।

দেশের ৬৬ টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সড়ক দুর্ঘটনারোধে করণীয় সম্পর্কিত যে প্রশিক্ষণ নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচার নিজস্ব অর্থায়নে প্রিদান করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষক তাদের স্কুলে যেয়ে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণকে সচেতন করছে, একইভাবে ইমাম প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ মাদরাসা শিক্ষক ও স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরকে সরকারি খরচে সড়ক দুর্ঘটনারোধে করণীয় সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে যাতে তারা স্ব স্ব এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সেইসাথে স্কুল কার্যক্রমের মধ্যে স্কাউট, গার্লস গাইড, কাব-এর ইউনিটগুলোর মত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে একটি রোড সেফটি ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি যারা পড়ালেখার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে।

নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা মানব কল্যাণের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে বিভিন্ন কার্যক্রম অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমাদের অকুতোভয় কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবীর ভিত্তিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যাতে করে এ দেশের মানুষ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এদেশের রাজপথ যেন সড়ক দুর্ঘটনার কারণে রক্তে রঞ্জিত না হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। উল্লেখ থাকে যে, ইতোপূর্বে সরকার অথবা অন্য কোনো পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। ২০১২ সাল থেকে আমাদের সংগঠন নিয়মিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আসছে। এবারও নিসচা এরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করছে। এই কাজটি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। ইতোপূর্বে সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান ছিল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন তৈরিতে মন্ত্রণালয়ে একটি সেল গঠন করা অথবা আমাদের উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনার গবেষণা ও পরিসংখ্যান আরও নিখুঁতভাবে তৈরি করা সম্ভব হবে। তবে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরার প্রয়াস আমরা শুরু করলেও ইদানিং অনেকেই প্রকাশ করছেন। ডঐঙ, টহরঃবফ ঘধঃরড়হসহ দেশী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করে থাকে এবং একেকটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য ভিন্নতর হওয়ায় জনগণের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সে কারণে আমরা দাবি করে আসছি সরকারি উদ্যোগে এই পরিসংখ্যান প্রকাশের ব্যবস্থা করা হলে জনগণ সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত অবস্থান জানতে পারতো। আমরা সরকারি তত্ত্বাবধানে একটি মনিটরিং সেল গঠনের দাবি বরাবরই করে আসছি। যাতে করে জনগণ সঠিক তথ্য জানতে পারে। আমি সবাইকে বলবো যদি সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করেন, সত্যিকার অর্থে দেশকে ভালোবাসেন তাহলে সকলেই দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। আপনি কে তা প্রদর্শন করবেন না,আপনার কত টাকা বা ক্ষমতা তা সড়কে প্রদর্শন করবেন না। আমরা সকলেই এই দেশের মানুষ। আমরা সকলে যেন দেশকে ভালো বাসি। দেশের আইন যেন মানি। স্বাধীনতার ৫০বছর চলে গেছে আর ৫০বছর পার করতে চাইনা এইভাবে। আমরা একটা সভ্য জাতি হিসেবে সম্মানিত হতে চাই বিশে^র দরবারে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেমন সম্মানিত হয়েছি, তেমনি আমরা সভ্য জাতি হিসেবে বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাই যে, আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করেছি। আমরা নিয়ম মানতে শিখেছি। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করতে শিখেছি। আমরা দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হয়েছি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আপনাদের এই সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি পাশাপাশি বিগত ৩০ বছর ধরে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করে যারা আমাদের সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।