| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি বিকালে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি


বিকালে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি


রহমত নিউজ ডেস্ক     19 December, 2022     12:57 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এবার দেশবাসীর সামনে আগামী সোমবার রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করবে। যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আট দিনের মাথায় এ রূপরেখা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। রূপরেখা ঘোষণা অনুষ্ঠানে সমমনা রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, দল সমর্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।  ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সমাবেশের ভেন্যুর অনুমতি পাওয়া নিয়ে জটিলতা, সংঘাত ও সহিংসতা এবং দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় তা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত আগামী ১৯ ডিসেম্বর রূপরেখা দেওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। নতুন কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি না হলে ওই দিনই ঘোষণা হবে।

আজ (১৯ ডিসেম্বর) সোমবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেবেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, রূপরেখা ঘোষণা অনুষ্ঠানে সমমনা রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা, দলসমর্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখায় যা থাকছে- সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন, জুডিশিয়াল কমিশন গঠন, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, মিডিয়া কমিশন, ন্যায়পাল নিয়োগ; গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিচার, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার মূলনীতির ভিত্তিতে ধর্ম পালনে পূর্ণ অধিকার ও পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান, আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল ও অপ্রয়োজনীয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিন্দু ক্রয় বন্ধ, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া, দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত, যুগোপযোগী ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করা, ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারগুলোকে অধিকার স্বাধীন ও শক্তিশালী করা, নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা প্রণয়ন ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান, আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করে নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা-ক্যারিকুলামকে প্রাধান্যসহ জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, 'সবার জন্য স্বাস্থ্য' এই নীতির ভিত্তিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন ও জিডিরি ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিকদের প্রাইস-ইনডেক্স বেজড ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা ও শিশুশ্রম বন্ধ করা এবং কৃষিপণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, রূপরেখার সূচনায় বলা হয়েছে, দেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সে রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এ রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয় লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি 'জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার' প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ 'জাতীয় সরকার' সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনকে সামনে রেখে 'বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য' গড়ার উদ্যোগের পর যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করেছে। সংলাপগুলোতে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয় নিয়ে একমত পোষণ করেছে দলগুলো। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি দলের বিভিন্নস্তরে নেতা এবং দল সমর্থিত আইনজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। মতবিনিময়কালে বিশিষ্টজনের কাছ থেকে দেশের সার্বিক বিষয়ে পরামর্শ নেন তাঁরা।সবার মতামতের ভিত্তিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন। বৈঠকে খসড়া দাবিনামা ও সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন চূড়ান্ত করা হয়। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়া প্রস্তাবনা দেখিয়ে তা চূড়ান্ত করা হয়।-সমকাল